ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রোভোস্ট ড. সেলিমের মৃত্যুর জের

কুয়েট বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ২২:০২, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

কুয়েট বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রোভোস্ট ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) থেকে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে কুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মোঃ আনিছুর রহমান ভূঞা। ইতিপূর্বে গঠিত তদন্ত কমিটিতে দুই সদস্য থাকতে অপারগতা প্রকাশ করায় নতুন কোন কমিটি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, এ বিষয় সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়নি। দাফতরিকভাবেও তিনি এ বিষয়ে অবহিত নন। এদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুয়েট শাখার পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে বাংলাদেশের সংবিধান এবং অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং কুয়েটের সম্মানিত শিক্ষকগণের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেন। এ ছাড়া অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যাবে না, অধ্যাপক সেলিম হোসেনের পরিবারকে আগামী এক মাসের মধ্যে এক কোটি টাকা প্রদান করতে হবে, স্যারের পরিবারের চাকরিযোগ্য অন্তত একজন সদস্যকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিতে হবে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে। অপরদিকে আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, ১টার দিকে ঘোষণা দিয়ে ৪টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। কিভাবে তারা বাড়ি ফিরবেন এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তড়িঘড়ি করে তারা রাস্তায় বেড়িয়েছেন। যানবাহন পাবে কি পাবে না, তা ছাড়া নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কাও রয়েছে। তারা বলেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এখন আবার ১০ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার জন্য এই বন্ধ যেন আর দীর্ঘায়িত না হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম হোসেন গত ৩০ নবেম্বর বেলা ৩টায় ইন্তেকাল করেন। এর পর অভিযোগ ওঠে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার লোকজন নিয়ে ওইদিন ড. মোঃ সেলিমের দাফতরিক কক্ষে প্রবেশ করে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতন করেন। তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচন করার জন্য আগে থেকেই প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। আর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি মারা যান। কুয়েটের অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক নয় উল্লেখ করে ২ ডিসেম্বর কুয়েট শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদান এবং কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি ড. মোঃ ওয়ালিউল হাসানাত এবং সাধারণ সম্পাদক ড. তানিজল সওগাত এক বিবৃতিতে বলেন, কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যুতে খুবি শিক্ষক সমিতি স্তম্ভিত ও মর্মাহত। এ ঘটনার প্রতিবাদে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষকরা যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
×