ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আজিমপুর কবরস্থানে দাফন

শ্রদ্ধা ভালবাসায় জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চিরবিদায়

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২ ডিসেম্বর ২০২১

শ্রদ্ধা ভালবাসায় জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চিরবিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয় মানুষকে। তবে শরীরী মৃত্যু হলেও কেউ কেউ বেঁচে থাকেন কর্মের গুণে। তেমনই এক কীর্তিমান জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। দেশের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই ব্যক্তিত্ব অংশ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ভূমিকা রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধে। অন্যদিকে ইতিহাস রচনা, বাংলা ভাষা ও নজরুল গবেষণার মধ্যে পরিণত হয়েছিলেন জাতির অনন্য এক বাতিঘরে। বুধবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরবিদায় জানানো হয় এই বরেণ্যজনকে। বিদায়ী শ্রদ্ধায় তার মূল্যায়নে বক্তারা বলেন, বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন প্রজন্মের পর প্রজন্মে। বেঁচে থাকবেন কর্মগুণে। সেই কর্মগুণেই জাতির যে কোন সঙ্কটে তিনি পথ দেখাতেন। বুধবার বাংলা একাডেমি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। বুধবার বেলা দেড়টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় জাতীয় অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের মরদেহ। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির পক্ষে মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় (আসানসোল, ভারত), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব। বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষন ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আব্বা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষÑএ তিন আয়োজন দেখে যেতে চেয়েছিলেন। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে তিনি ক্যাম্পাসে এসেছেন, কিন্তু মরদেহ হয়ে। আব্বার জীবনে কোন ব্যর্থতা ছিল না। তিনি পুরোপুরি সফল মানুষ ছিলেন। দেশকে তিনি ভালোবাসতেন। বাংলা একাডেমি থেকে জাতীয় অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের কফিন সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় এ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। শহীদ মিনারে রফিকুল ইসলামের মরদেহে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। শ্রদ্ধা জানায় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। শহীদ মিনারে রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ, ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম, ডিএসএসসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, কাজী নজরুল ইসলামে নাতনি খিলখিল কাজী, শিল্পী হাশেম খান পরিবার। শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন, ঢাবি বাংলা বিভাগ, ঢাবি কলা অনুষদ, ঢাবি সঙ্গীত বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউল্যাব পরিবার, ছায়ানট, বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা, গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, আমরা ক’জন মুজিব সেনা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, ভাষা-সাহিত্য পরিষদসহ আরও নানা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। ওবায়দুল কাদের বলেন, আনিস স্যার চলে গেলেন, রফিক স্যার চলে গেলেন। আমরা সত্যিই অভিবাবক শূন্য হয়ে পড়লাম। আমাদের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে, প্রতিটি সংগ্রামে, সঙ্কটে, স্বাধীকার, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র- প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ছিলেন এমন এক বাতিঘর, যিনি জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাঙালী জাতীয়তাবাদ চেতনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। জাতির যেকোন সঙ্কটে তিনি সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দিতেন, আমাদের পথ দেখাতেন। রফিকুল ইসলাম সারাজীবন নজরুল চর্চাকে নিজের জীবনের ব্রত করেছিলেন বলে মন্তব্য করে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, নজরুল চর্চায় তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি পরিবারের অভিভাবক ছিলেন। নজরুল জীবনী তিনি লিখে গেছেন। এটা তার সবচেয়ে বড় কাজ। তিনি যা রেখে গেছেন, তা নিয়ে আমরা পথ চলব।
×