ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের ‘হাত ধোয়া’র অভ্যাসই গড়বে আগামীর সুস্থ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২৩ অক্টোবর ২০২১

শিশুদের ‘হাত ধোয়া’র অভ্যাসই গড়বে আগামীর সুস্থ প্রজন্ম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে দীর্ঘ ১৮ মাস পর স্কুলে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। সংক্রমণ নিম্নগামী হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়ে গেছে এখনো। তাই শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার মতো কিছু অভ্যাস রপ্ত করার ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। হাত পরিষ্কার রাখলে শুধু যে করোনা থেকে রেহাই মিলবে তাই নয় মুক্তি মিলবে ডায়রিয়া, আমাশয়, কৃমি এবং ভাইরাসবাহিত অন্যান্য রোগ থেকেও। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো সবার মাঝে অবহেলা রয়ে গেছে। হাত ধোয়া বিষয়ে সচেতনতার অভাবে সারাবিশ্বে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ইউনিসেফ এর তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি দশজনের মধ্যে তিনজন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সবার মাঝে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ও জীবাণুমুক্ত থাকার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিবছরের ১৫ অক্টোবর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’। চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছিল ‘আমাদের আগামী আমাদের হাতেই - চল একসাথে সামনে এগিয়ে যাই’, অর্থাৎ ‘আওয়ার ফিউচার ইজ এট হ্যান্ড- লেট’স মুভ ফরোয়ার্ড টুগেদার”। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে সারাদেশে এবার ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস ২০২১’ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়েছে। বিশ্বে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া। ইউনিসেফ জানাচ্ছে, বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৮ লাখ ৮ হাজার ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যাচ্ছে। তবে পারিবারিক সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ এবং নিউমোনিয়া সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। ছোটবেলায় শিশুরা যা শেখে তার প্রভাব রয়ে যায় তাদের পরবর্তী জীবনে। শিশুদের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে বরাবরের মতো এবারও ‘হ-তে হাত ধোয়া’ বিষয়ক ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করেছে জীবাণু থেকে সুরক্ষাকারী সাবানের ব্র্যান্ড ‘লাইফবয়’। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাককে সঙ্গে নিয়ে ব্র্যান্ডটির মাসব্যাপী এই হাত ধোয়া ক্যাম্পেইন এর লক্ষ্য সারাদেশের সাত শ স্কুলের সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীকে হাত ধোয়ার গুরুত্ব ও সঠিক উপায় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া। শিশুরা যেভাবে ‘এ, বি, সি’ কিংবা ‘ক, খ, গ’ শেখে, সে ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লাইফবয় গত বছর থেকে ইংরেজি বর্ণমালা ‘এইচ’ নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মিশনে নেমেছে। ‘এইচ’ ফর ‘হ্যান্ডওয়াশিং’ ধারণাটি ছড়িয়ে দিতে ব্র্যান্ডটি কয়েক বছরব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। এই ক্যাম্পেইনের বার্তায় বলা হচ্ছে, ‘এইচ’ এর মাধ্যমে যেভাবে ‘হ্যাট’ বা বাংলায় ‘হ’ এর মাধ্যমে যেভাবে ‘হাতি’র পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি ইংরেজিতে পরিচিতি হতে পারে ‘হ্যান্ডওয়াশিং’ ও বাংলায় ‘হাত ধোয়া’ শব্দগুলোর। আর তাই প্রাথমিক শিক্ষায় ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং এবং ‘হ-তে হাত ধোয়া’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে লাইফবয়। এতে বাচ্চারা ছোটবেলাতেই হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তাদের মধ্যে হাত ধোয়ার সহজাত অভ্যাস গড়ে উঠবে। প্রতিদিন কোন কোন কাজের পর তাদের হাত ধুতে হবে, তা শিখিয়ে দিলে একটি সুস্থ আগামী প্রজন্ম সহজেই গড়ে তোলা সম্ভব। লাইফবয় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি শিশুকে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকেই লাইফবয় সারাদেশের স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও লাইফবয় তার সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হাত ধোয়া বিষয়ে সচেতনতার অভাব বেশি দেখা যায়। তাই এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক হারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকার হাত ধোয়ার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সিটি করপোরেশন হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হাত ধোয়ার গুরুত্ব বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতেও নিয়মিত স্বাস্থ্য সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে। তবে হাত ধোয়ার অভ্যাসে আমাদের স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হলে এটি সামাজিক রীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ‘হাত ধোয়া’র এই আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের অংশগ্রহণই পারে আমাদের ‘হাত ধোয়া’র অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে।
×