ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২০ অক্টোবর ২০২১

পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে একটি খসড়া আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খসড়া আইনে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা সংক্রান্ত কিছু অপরাধের কথা বলা হয়েছে। কেউ যদি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে তাহলে সর্বোচ্চ ২ বছর, সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে খসড়া আইনে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। তিনি জানান, জরিমানাটা সুনির্দিষ্ট করে না দেয়া হলেও বেশ শক্ত একটা স্ট্যান্ড নিয়ে ‘বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ সময় তিনি জানান, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, উত্তরপত্রের জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন তাদের সর্বোচ্চ ২ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে। কোন পরীক্ষার্থী যদি অসুদপায় অবলম্বন করেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে অসুদপায়ে সহযোগিতা করে তাহলে সেও সর্বোচ্চ ২ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যদি কোন অপরাধ করে তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টের মধ্যেও এটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যারা যুক্ত থাকবেন, তাদের বিচারের আওতায় এনে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেয়া যেতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্স ছিল। হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সেটা নিয়ে আসা হয়েছে। এটা রুল বেইজড আইন। ম্যাক্সিমাম জিনিসগুলো রুল দিয়ে করে নেয়া হবে। জেনারেল একটা প্রভিশন লে-ডাউন করে দেয়া হয়েছে আইনটাতে। খসড়া আইনে ১৫টি ধারা আছে। যেহেতু রুল বেইজড আইন, সব প্রসিডিউরগুলো পরবর্তীতে রুলের মাধ্যমে করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, খসড়ায় কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। কমিশনে কমপক্ষে ছয়জন সদস্য থাকবেন, তবে সদস্য কোনভাবেই ১৫ জনের বেশি হবে না। একটা আউট লাইন করে দেয়া হয়েছে। বাকি ফরমেশনটা রুল দিয়ে করে দেয়া হবে। ‘তাদের (পিএসসি) দায়িত্ব হলো সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন রিক্রুটমেন্ট ও অন্যান্য অপিনিয়নের বিষয়ে তারা দায়িত্ব পালন করবে। কমিশনকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রদান করতে হবে, এমন একটা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আইনে। পরীক্ষা পদ্ধতি কীভাবে হবে সেটার একটা আউট লাইন খসড়া আইনে করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রুল দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হবে। কিছুদিন থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইনে আছে, সরকার প্রদত্ত অন্য কোন দায়িত্ব (পালন করবে পিএসসি)। সেটা রুল দিয়ে করে দেয়া যাবে। কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না এ বিষয়ে সচিব বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর নিয়োগের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও প্রিসাইজ কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিভিন্ন ফোরামে, সর্বোচ্চ ফোরামে, এ জাতীয় আলোচনা হয়েছে আলাদা একটা পিএসসি গঠন করে করা (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ) যায়। তবে প্রিসাইজ কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনে যাকাত তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারীভাবে সংগৃহীত হবে। প্রবাসী বাংলাদেশী, বিদেশী যেকোন ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যে কোন তফসিলি ব্যাংকের যাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে যাকাত আদায় করতে পারবেন। আর একটি বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন। যাকাত বোর্ডে সদস্য থাকবে ১০ জন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দেয়া হবে ইসলামী ফাউন্ডেশন বা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। কালেকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনটা তারা করবেন। কাকে কাকে কীভাবে দেবে, এটা তারাই ঠিক করবে। তাদের একটি এ্যাকাউন্ট থাকবে, সেখান থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া আইনটিতে ১৪টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারীভাবে যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারীভাবে যাকাতদানে উদ্বুদ্ধ করা হবে। যাকাত সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, যাকাতদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের যাকাতযোগ্য সম্পদের বিষয়টি খসড়া আইনে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুরা তাওবায় প্রিসাইসলি সাতটি ক্যাটাগরি করে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তি যে যাকাতযোগ্য, সেই সাত ক্যাটাগরির যেকোন একজনকে যাকাত দিতে পারবেন। বিভিন্ন ইসলামিক দেশগুলোতে বোর্ড আছে। অনেকেরই হয়তো ব্যক্তিগতভাবে দেয়ার সুযোগ থাকে না, সে হয়তো যাকাত ফান্ডে দিয়ে দিলেন। তখন যাকাত ফান্ড তার পক্ষে যাকাত আদায় করে দেবে। সচিব বলেন, কোরানে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে যে, তোমার কাছে যখন সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা ওই পরিমাণ টাকা এক বছর থাকে, তাহলে আড়াই শতাংশ যাকাত দিতে হবে। সেটা যদি ব্যক্তিগতভাবে দিলেন তো দিলেন, না-হলে সরকারী ফান্ডে দিলে সেটাও দিতে পারবেন। তিনি বলেন, আপনি যখন হজে যাবেন, আপনি কিন্তু কোরবানি করতে যাবেন না। আপনি টাকা জমা দিয়ে দেবেন, ব্যাংক একটা টাইম দিয়ে দেবে, ১০ তারিখ এতটার সময় আপনার কোরবানি হয়ে যাবে। সেজন্য এ সিস্টেমটা পুরো পৃথিবীতেই আছে।
×