ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও তিনটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আরও তিনটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ দারিদ্র্য বিমোচনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) অনুরূপ রংপুর জামালপুর ও যশোরে তিনটি আরডিএ স্থাপিত হচ্ছে। এসব একাডেমির প্রায়োগিক গবেষণা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেয়া হবে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দেশে শহরে ও গ্রামের শতভাগ মানুষকে সরসারি ও সমবায়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আওতায় এনে মাথাপিছু আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বগুড়ার আরডিএ দেশের তিনটি জেলার পাঁচটি গ্রামকে দারিদ্র্যমুক্ত গ্রাম পরিণত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবে এবং এই মডেলটি সারাদেশে বাস্তবায়নের অনুমতি চাওয়া হবে। একই সঙ্গে কুমিল্লার বার্ড বগুড়া রংপুর জামালপুর যশোর আরডিএর সকল অভিলক্ষ্য জাতীয় ভিশনের সঙ্গে যুক্ত করে একযোগে বাস্তবায়িত করবে। বুধবার দিনভর বগুড়া আরডিএতে ৩১তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে (এপিসি) টেকসই পল্লী উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নের সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের ১৯ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদূরপ্রসারি ভাবনায় বগুড়ার শেরপুরের গ্রামে ২ দশমিক ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০ একর জমির ওপর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) প্রতিষ্ঠা করেন। যার ৮০ একর ভূমি ব্যবহার হচ্ছে প্রয়োগিক গবেষণা কাজে। বাকি ৪০ একর ভ‚মির ওপর নির্মিত হয়েছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক অবকাঠামো। পরিকল্পনা প্রণয়ন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোঃ মশিউর রহমান বলেন, কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে কৃষির পাশাপাশি অন্য সার্ভিস সেক্টরগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বলেন দেশের ৫০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক (যার বেশিরভাগ নারী) বিশে^ বাংলাদেশের পোশাক খাত রফতানিতে বড় ভ‚মিকা রেখেছে। এভাবে প্রতিটি সেক্টরে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড উন্নয়নে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়ে মাথাপিছু আয় বাড়বে। তিনি জানান বর্তমানে দেশে শহরে বাস করছেন ৩৯ শতাংশ মানুষ। গ্রামে বাস করছেন ৬১ শতাংশ। শহরের সুযোগ সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়ার চলমান ধারায় ২০৪১ সালে শতভাগ মানুষের কর্মসংস্থানে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫শ’ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের মর্যাদা দেবে। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২শ’ ২৭ মার্কিন ডলার। কোভিডকালে মাথাপিছু আয় অর্জনে বিঘœ ঘটেছে। যে বাধা দ্রæত অতিক্রম করা হচ্ছে। বগুড়া আরডিএর মহাপরিচালক খলিল আহমেদ জানান, জাতীয় পল্লী উন্নয়ন নীতি, দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র আর্থ-সামজিক উন্নয়ন কৃষি উন্নয়ন পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২টি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৫১০টি গবেষণা সফল হয়েছে। যা জাতীয় ভিশনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। তিনি জানান, দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূরীকরণে জামালপুরের চরবালিশা গ্রামের ৩টি ওয়ার্ডের ২৫ হাজার হোল্ডিং, রংপুরের বায়রা গ্রামের ১ হাজার বাড়ি, বগুড়ার কালসিহাটা গ্রামের ৩৩৪টি পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্তকরণের টার্গেট করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও দুটি গ্রাম যুক্ত করা হয়। এই ৫টি এলাকায় মাল্টি ডাইমেনশনাল ১০টি ক্রাইটেরিয়ার ইনডেক্স তৈরি করে দারিদ্র্য দূরীকরণের মডেল তৈরি করা হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রতিটি কাজের রিয়েল টাইম ডাটা তৈরি হয়ে মডেলটি বাস্তবায়িত হবে দেশের প্রতিটি গ্রামে। যাতে ২০৪১ সাল বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশে^ উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পায়। পরিকল্পনা প্রণয়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। এই আয়োজনে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন গবেষক উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য ড. কামরুজ্জামান সমবায়ের পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন বগুড়া আরডিএ প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়ের ভিত্তিতে দেশ গড়ার বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমি সিলিং করে দিয়ে ২০ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করে দেন। বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারি ভাবনায় তিন বছর আগে বগুড়ার আরডিএর সহযোগিতায় বগুড়ার গ্রামে কৃষক সমবায়ী হয়ে জমির আইল উঠিয়ে দিয়ে আবাদ করেছে। এই প্রকল্পটি পাইলট প্রকল্প হিসাবে বিভিন্ন এলাকায় বাস্তাবায়িত হওয়ার পর্যায়ে কোভিড এসে বিঘœ ঘটায়। এদিকে বগুড়া আরডিএর সাফল্যের চিত্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের সাফল্য মিল খুঁজে পাচ্ছেন গবেষকগণ। তারা পরামর্শ দিয়েছেন এ ধরনের ভারতীয় ও ভিয়েতনামের একাডেমি যেভাবে গবেষণা কর্মকে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই আদলে বগুড়া আরডিএ এগিয়ে যেতে পারে। রংপুর জামালপুর যশোর আরডিএ একই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। গবেষকগণ বগুড়া আরডিএতে একাডেমিক ক্ষেত্রের সকল সেক্টরে রিসার্চ অফিসার নিয়োগের পরামর্শ দেন। প্রায়োগিক গবেষণার ফলাফল সরকারী সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে তারাই বাস্তবায়ন করবে। বগুড়া আরডিএ প্রায়োগিক গবেষণার পাশাপাশি দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের বিসিএস কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বগুড়া আরডিএ থেকে।
×