ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্রনায়িকা পরীমনি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৫ আগস্ট ২০২১

চিত্রনায়িকা পরীমনি গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার বিকেল চারটা থেকে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত বনানীর লেক ভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আরও দু’জনকেও আটক করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারের পর পরীমনিসহ তিনজকে র‌্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে তার সহযোগী নজরুল ইসলাম রাজকেও মদসহ আটক করা হয়। বনানীর সাত নম্বর সড়কে তার বাসায় ওই অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালানোর জন্য তার বাড়ির সামনে অবস্থান করলে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে যান পরীমনি। ফেসবুক লাইভে পরীমনি বলেন, দিন দুপুরে কে বা কারা তার বাসায় আক্রমণ চালাচ্ছে। ঘটনার একপর্যায়ে বনানী থানায় ফোন করেন পরীমনি। থানা থেকে জানানো হয়, তার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিকেল চারটায় বনানীর লেক ভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে পরীমনির ফ্ল্যাটে অভিযানে যান র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাব সদস্যরা বারবার তাদের পরিচয় দিলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না পরীমনি। তবে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় তিনি র‌্যাব সদস্যদের গেটে আটকে রেখে ফেসবুক লাইভে যান। পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়া হলে র‌্যাব সদস্যরা ভেতরে ঢোকেন। এরপর শুরু হয় তল্লাশি। একপর্যায়ের পরীমনিকে আটক করা হয়। র‌্যাব সদস্যরা মদসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একই সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ওই বাসায় র‌্যাব সদস্যরা তল্লাশি চালায়। র‌্যাব সদস্যরা পরীমনির বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী মদ, ভয়ঙ্কর মাদক আইস, এলএসডি ও মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। এরপর রাত ৮টা ১২ মিনিটে তাকে বাসা থেকে বের করা হয় এবং বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ মাদক গাড়িতে করে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে নেয়া হয় র‌্যাব সদর দফতরে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। পরীমনির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও মাদক মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযানে গিয়ে তাজ্জব বনে গেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফ্লাটে ঢুকেই তারা দেখেন থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের মদের বোতল। দেখে মনে হচ্ছিল, অভিনেত্রীর বাসাটা যেন ছোটখাটো একটা মদের বার। সম্প্রতি হেলেনা জাহাঙ্গীর, ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেফতারের ঘটনার ধারাবাহিকতায় চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান চালানো হয়। এর আগে বুধবার দুপুরের পরপরই পরীমনির বাড়িতে র‌্যাবের একটি দল উপস্থিত হলে তাকে গ্রেফতারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। র‌্যাব সদস্যরা বাড়ির ফটকে যাওয়ার পরপরই বিকেল ৪টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন পরীমনি। তিনি বলেছিলেন যে তিনি ‘ভয় পাচ্ছেন’। প্রায় এক ঘণ্টা পর র‌্যাব সদস্যরা ঘরে ঢোকার পর তার লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। তারমধ্যে পাঁচতলা ওই বাড়ির নিচতলায় র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে র‌্যাবের নারী সদস্যরাও ছিলেন। বাড়ির ফটক বন্ধ করে দেয়ায় সাংবাদিকরা ফটকের বাইরেই ভিড় করে ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফটক খুলে র‌্যাবের একটি মাইক্রোবাস ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ওঠানো হয় ওই গাড়িতে। রাত পৌনে ৮টায় গাড়িটি বেরিয়ে যায়। তার আধাঘণ্টা পর ৮টা ১২ মিনিটে পরীমনিকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসায় মিলেছে ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইস, বিপুল পরিমাণ মদসহ গ্রেফতারকৃত পরীমনির বাসা থেকে ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইস উদ্ধার করেছে র‌্যাব। ডি-লাইসার্জিক এ্যাসিড ডায়েথিলামাইড বা এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক এ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়। এটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে. এটি পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়। আর ‘আইস’ মূলত মানুষের শরীরে অতিমাত্রায় উন্মাদনা ও উত্তেজনা ছড়ায়। খুব ব্যয়বহুল হওয়ায় উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজনরাই তা গ্রহণ করে থাকে। বিভিন্ন ওষুধ থেকে এর কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, পরীমনির বাসার যাবতীয় আসবাবে থরে থরে বিদেশী মদ পাওয়া গেছে। বিদেশী ব্র্যান্ডের যত ধরনের মদ আছে প্রায় সবই সেখানে মিলেছে। ফ্রিজভর্তি ছিল নামী-দামী ব্র্যান্ডের মদ। এর পাশাপাশি পরীমনির বাসায় মিলেছে সর্বনাশা মাদক ইয়াবাও। এমনকি সেখানে ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি-আইসও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এই মাদক কারবারে কয়েকটি চক্র ও উচ্চবিত্ত ঘরের কিছু তরুণ গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যেই এ ধরনের মাদক সেবনের প্রবণতা বেশি। পরীমনির ‘ডাকে’ বনানীতে হাজারো মানুষ ॥ চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় র‌্যাব কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে। বুধবার বিকেল ৪টা থেকে বনানীর ১২ নম্বর রোডে অবস্থিত পরীমনির বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযান শুরুর আগে পরীমনি ফেসবুক লাইভে আসেন। সেখানে তিনি বলেন, অজ্ঞাত লোকেরা তার বাসায় ঢুকতে চাচ্ছে। তিনি পরিচিত সবাইকে তার বাসার সামনে আসার জন্য আহ্বান জানান। লাইভে এসে পরীমনি বলেন, আমার বাসায় বিভিন্ন পোশাকের লোকজন কলিংবেল বাজাচ্ছে। তারা বলছে পুলিশের লোক, কিন্তু তাদের গায়ে বিভিন্ন রঙের পোশাক রয়েছে, এজন্য আমি দরজা খুলছি না। আপনারা আমার বাসার সামনে আসুন। পরীমনির এ লাইভের পর তার বাসার সামনে হাজির হয় হাজারো উৎসুক জনতা। হাজির হন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও। সরেজমিনে দেখা যায়, উৎসুক জনতা পরীমনির বাসার সামনে এসে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেউ কেউ সেলফি তুলছেন, আবার কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করেছেন। এ সময় তাদের এ কার্যক্রমের কারণে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে সমস্যায় পড়তে দেখা গেছে। পরীমনির বাসার সামনে এমন ভিড় দেখে এগিয়ে এসেছে বনানী সোসাইটির লোকজনও। তারা বারবার মাইকিং করে বলেন, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া যারা আছেন তারা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। এছাড়া করোনা মহামারীর মধ্যে বনানী এলাকাকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বনানী সোসাইটি থেকে আহ্বান করা হয়। কিন্তু উপস্থিত লোকজন কোন কথার তোয়াক্কা না করে ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। পুলিশ ও র‌্যাবের দুই কর্মকর্তা বলেন, গত ৮ জুন রাতে পরীমনি অভিযোগ করেন ঢাকার অদূরে বিরুলিয়ার ঢাকা বোট ক্লাবে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যার চেষ্টা চালান। ১৩ জুন তিনি নাসির, তুহিন সিদ্দিকী ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও চারজনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন। সেদিনই নাসির ও তুহিনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে নাসির জামিনে থাকলেও তুহিন কারাগারে আছেন। জানা যায়, অভিযানের সময় পরীমনির বেডরুম-ডাইনিং ও টয়লেট থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়। অভিযানে প্রথম দিকে র‌্যাবকে সহযোগিতা করেননি পরীমনি। তবে পরে তার ঘর তল্লাশি করে ফ্ল্যাটের কেবিনেট থেকে বিদেশী মদ, লাইসার্জিক এসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) এবং আইস উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তার ড্রয়িং রুমের কাভার্ড, শো-কেস, ডাইনিং রুম, বেডরুমের সাইড টেবিল এবং টয়লেট থেকে বিপুলসংখ্যক মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। পরীমনির বাসায় এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মদ নেই। তার কাছে দেশী-বিদেশী নামীদামী ব্র্যান্ডের মদ ছিল, যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়।
×