ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী মাস থেকে ভিজিএফ

জেলা শহর, সিটি ও পৌরসভায় চলছে ওএমএসে চাল বিক্রি

প্রকাশিত: ২২:০৪, ৩ আগস্ট ২০২১

জেলা শহর, সিটি ও পৌরসভায় চলছে ওএমএসে চাল বিক্রি

তপন বিশ্বাস ॥ দেশের সকল জেলা শহর, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় এক যোগে চলছে খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচী। সারাদেশে প্রতিদিন ২ হাজার ৭৩৫.৫ টন চাল-আটা বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এই কর্মসূচী দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় চলছে কি না তা যাচাই-বছাই করতে নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি আগামী মাস থেকে চালু হচ্ছে ভিজিএফ কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবার ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। করোনায় আরোপিত বিধিনিষেধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় সরকার বিশেষ ওএমএস কর্মসূচীর আয়োজন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এই কর্মসূচী চালও হওয়ায় এখন ওএমএস কেন্দ্র থেকে প্রত্যেকে ৩০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল এবং ১৮ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারেন। শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিনই ওএমএস কার্যক্রম চলে। এ ব্যাপারে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ মুজিবর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের চলমান সংক্রমণের কারণে আরোপিত বিধিনিষেধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সকল জেলা শহর ও ১২টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় সারা বছর ওএমএসের কার্যক্রম চলে। এছাড়া বিশেষ ওএমএসের আওতায় দেশে ৩৩০টি পৌর এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পৌর এলাকার বাইরে অর্থাৎ ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদবান্ধব কর্মসূচী চালানো হবে। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীতে আগে ১০টি ট্রাকে করে ওএমএস কর্মসূচী পরিচালতি হতো। বর্তমানে এখানে দ্বিগুণ করে ২০টি ট্রাকে করে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা মহানগরী ব্যতীত অন্যান্য ১০টি সিটি কর্পোরেশনে তিনটি করে মোট ৩০টি ট্রাকে করে এই কর্মসূচী চালানো হচ্ছে। শ্রমঘন জেলার (সিটি কর্পোরেশন বহির্ভূত) ৮৬টি কেন্দ্রে একটি করে মোট ৮৬টি দোকান/ট্রাকে করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ‘ক’ শ্রেণীর (জেলা সদর বহির্ভূত) ১৩৩টি পৌরসভায় ৪টি করে মোট ৫৩২টি দোনানের মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রম চলছে। এছাড় ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণীর (নিয়মিত বরাদ্দে আওতা বহির্ভূত) ১৩৭টি পৌরসভায় ৩টি করে মোট ৪১১টি দোকানের মাধ্যমে কর্মসূচী চলছে। খাদ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃক করোনাভাইরাসের চলমান সংক্রমণের কারণে আরোপিত বিধিনিষেধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত (শুক্রবার বাদে) সারাদেশে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় বর্তমানে সারাদেশে ১২ সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও ৩৩০টি পৌরসভা আছে। পৌরসভাসমূহ স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ‘ক’, ‘খ’, ও ‘গ’ শ্রেণীর ক্যাটাগরিতে শ্রেণীবিন্যাস করা আছে। এর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণীর ১৯১ এবং ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণীর ১৩৯টি পৌরসভা রয়েছে। বর্তমানে ২০২১-২২ অর্থবছরে সারাদেশে চলমান ওএমএস কার্যক্রমে ১২টি সিটির মধ্যে ৮টি সিটি কর্পোরেশন (চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, কুশিল্লা) কেন্দ্রে দিনে ১,৫০০ টন করে চাল এবং ১ করে আটা এবং ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্র দিনে ১,৫০০ টন চাল ও ২ টন আটা বরাদ্দের অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া শ্রমঘন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলার আওতাধীন ‘ক’ শ্রেণীর ৫টি এবং ‘খ’ শ্রেণীর ২টি পৌরসভায় কেন্দ্র প্রতি দিনে ১ টন করে চাল ও ২ টন করে আটা এবং শ্রমঘন নরসিংদী জেলায় প্রতি কেন্দ্রে দিনে ১ টন চাল ও ২ টন আটা বরাদ্দ রয়েছে। অপরদিকে জেলা সদরে অবস্থিত মোট ৫৩টি ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভায় দৈনিক ১ টন করে চাল ও ১ টন করে আটা বিক্রি চলছে। করোনাভাইরাসে চলমান সংক্রমণের কারণে আরোপিত বিধিনিষেধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নি¤œ আয়ের মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য চলমান ওএমএস কার্যক্রমকে ‘ক’ শ্রেণীর ১৯১টি পৌরসভার মধ্যে মোট {১৯১-(৫৩+৫০}=১৩৩টি পৌরসভায় ৪টি করে কেন্দ্রে দিনে ১.৫ টন চাল এবং ০.৯০০ টন আটা, ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণীর (১৩৯-২)=১৩৭টি পৌরসভায় ৩টি করে কেন্দ্রে দিনে ১.৫ টন চাল এবং ০.৯০০ টন আটা বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। ওএমএস কেন্দ্র দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় কিনা যাচাইয়ের নির্দেশ সরকারের খোলা বাজারে চাল, আটা বিক্রির (ওএসএম) কেন্দ্রগুলোর অবস্থান প্রকৃতপক্ষে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় কিনা সেই বিষয়টি যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রগুলো দরিদ্র মানুষ বাস করে এমন এলাকায় সরিয়ে নেয়ার (রিলোকেশন) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শনিবার (৩১ জুলাই) খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীসহ সারা বাংলাদেশে পরিচালিত ওএমএস কেন্দ্রগুলোর অবস্থান প্রকৃতপক্ষে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় কিনা- সে বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনে রিলোকেশন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এমতাবস্থায় খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে।
×