ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিগাথার ছয় বছর আজ

নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে সাবেক ছিটমহলবাসী

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ৩১ জুলাই ২০২১

নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে সাবেক ছিটমহলবাসী

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ আজ ৩১ জুলাই। ছিটমহল বিনিময়ের সেই মুক্তিগাথার ৬ বছর অতিবাহিত হচ্ছে। ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের চরম দুঃখ-কষ্ট, বন্দিদশা আর নিগ্রহের সেই দিন আর নেই। এই মানুষগুলোর নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। অতীত এই ছিটমহলগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। দেখতে দেখতে বদলে গেছে অবহেলিত সেই মানুষজগুলো। রাস্তা, বিদ্যুত, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পরিবর্তন ঘটে বঞ্চিত এসব মানুষের নাগরিক জীবন ব্যবস্থায়। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এ ইতিহাস সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর মানবতার ইতিহাস। ৬৮ বছর ধরে যাঁদের রাষ্ট্র ছিল না, ছিল না পরিচয়, সবাই যাঁদের চিনতো ছিটবাসী হিসেবে, আজ তাঁরা তাঁদের জাতীয়তার পরিচয় পেয়েছে। পেয়েছে নাগরিকত্বের পরিচয়, গর্বে বুক ফুলিয়ে। ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে প্রায় সাত দশক ধরে রাষ্ট্রহীন থাকা মানুষগুলো অবশেষে রাষ্ট্র ও নাগরিকত্ব পেয়েছে। চিকিৎসাসেবার অধিকার মিলেছে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মিলেছে আইনী সুরক্ষাও। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কার্যকর হয় ছিটমহল বিনিময়। অথচ এই সকল মানুষজনগুলোকে ব্রিটিশ শাসনকর্তা সিরিল র‌্যাডক্লিফের ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তিজনিত যে সীমানা নির্ধারণ-প্রক্রিয়া সাধিত করেছিল, সৃষ্টি করা হয়েছিল দুটি নতুন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। তারই নানা বিরূপ ও অমানবিক ফলাফলের একটি ছিল এই ছিটমহল। ১৬২টি বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের মতো এসব ছিটমহলবাসী পাক্কা ৬৮ বছর ধরে চরম মানবিক অধিকারহীনতার শিকার হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ যখন ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের নাগরিক পরিচয় লাভ করেছিল, তখন রাতারাতি ছিটমহলের বাসিন্দারা নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়েছিল। সিরিল র‌্যাডক্লিফের সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় তারা হয়ে পড়েছিল “নিজভূমে পরবাসী”। নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন ২০২০ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমির সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের পরিবারের আয়োজনে অপরাজিতা নারী হিসাবে সাবেক ছিটমহলবাসী ময়মন বেগমকে সম্মাননা প্রদান করেছিলাম। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এই বৃদ্ধা ১১৯ বছর বয়সে আজ বিলুপ্ত ছিটমহলের এক জীবন্ত ইতিহাস বৈ কি! তিনি জানান নীলফামারীর যে চারটি সাবেক ছিটমহল রয়েছে তার সার্বিক উন্নয়নে বদলে গেছে।
×