ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

র‌্যাবের কব্জায় হেলেনা জাহাঙ্গীর ॥ ৩ দিনের রিমান্ডে

এক রাতের অভিযানেই তাসের ঘরের মতো সব ভেঙ্গে চুরমার

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩১ জুলাই ২০২১

এক রাতের অভিযানেই তাসের ঘরের মতো সব ভেঙ্গে চুরমার

আজাদ সুলায়মান ॥ কি ছিল না তার? ক্ষমতা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত ও প্রভাব- সবই ছিল। হালে যোগ হয় একটি টিভিও। নিজেকে কখনও বিএনপি, কখনও আওয়ামী লীগ ও কখনও ব্যবসায়িক নেত্রী হিসেবে তুলে ধরতেন। ছিল অর্ধ ডজন প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পদও ছিল। তারপরও হঠাৎ কেন ছন্দপতন! একরাতের অভিযানেই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে চুরমার তার স্বপ্নসাধের বিলাসী জীবন। র‌্যাবের হাতে তিনি বন্দী। এখন পর্যন্ত পরিণতি যা ঘটেছে- তাতেই তিনি পচে গেছেন। সামনের দিন কি ঘটে সেটাই দেখার বিষয়। এই নারী বহুল আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর। তার এহেন অকল্পনীয় পতনের কারণও কারও অজানা নয়। ‘চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন করে সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠায় সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। যে কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের বাসভবনে অভিযান চালায় র‌্যাব। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অভিযান শেষে রাত ১২টার দিকে তাকে আটক করা হয়। পরে র‌্যাব সদরদফতরে নিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মাদক, মুদ্রা পাচার ও বন্য আইনে আরও কমপক্ষে ৫টি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বিতর্কিত ফেসবুক গুজবকারী সেফুদার সঙ্গেও হেলেনার আর্থিক লেনদেন ছিল। এ ধরনের দলবাজি ও ধাপ্পাবাজি করে যে কেউ পার পাবে না। তার মতো আরও এমন যারা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। তার বাসায় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে। সর্বশেষ জানা যায়, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে গুলশান থানায় এ দুই মামলা দায়ের করা হয়। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, র‌্যাব সদস্যরা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে থানায় হস্তান্তর করেছেন। গ্রেফতারের পর শুক্রবার র‌্যাব পরিচালক (লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইং) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া মাদক, বিদেশী মুদ্রা ও বন্যপ্রাণীর চামড়া জব্দের ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন ছাড়া জয়যাত্রা নামক টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনার কারণে আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের পোস্টার ভাইরাল হলে আলোচনায় উঠে আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পোস্টারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। নামের সঙ্গে লীগ যুক্ত করে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের অনুমোদনহীন একটি সংগঠনের সভাপতি পদে নাম আসার পর তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে দলটির মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি। এই উপ-কমিটিতেই সদস্য ছিলেন- দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক পদে থাকা হেলেনা জাহাঙ্গীর। জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন। মূলত চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে ফেসবুকে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় তোলেন তিনি। ‘চাকরিজীবী লীগ’ নামের সংগঠনে সদস্যপদ দেয়ার কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছে হেলেনা টাকা দাবি করেন। এরপরই আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ হারান হেলেনা। ২৫ জুলাই দলটির মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বারবার শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের সদস্য পদ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটি থেকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বহুল আলেচিত এই নারীর প্রিন্টিং, এ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টেলিভিশনেরও মালিক এই হেলেনা জাহাঙ্গীর। যদিও জয়যাত্রা টিভি কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চলত। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মতে-চাকরিজীবী লীগই হেলেনার কাল হলো। তার মতো অসংখ্য হেলেনা জাহাঙ্গীরের ওপর নজরদারি চলছে। চাকরিজীবী লীগ ছাড়াও তিনি রাজনীতির নামে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। এক সময় তিনি বিএনপির একটি অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তখন একটি অপ্রীতিকর ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে তিনি বিদেশ চলে যান। ফিরে এসে নতুন কৌশলে প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সাথে ছবি তোলার মিশন। পরে তিনি প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে ফেসবুকে হেলেনা নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেন। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির প্রয়াত এইচএম এরশাদের সঙ্গে তোলা হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছবিও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ বিষয়ে সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে হেলেনা বলেছিলেন, আমি যে কারও সঙ্গেই ছবি তুলতে পারি। এর মানে এই না যে, আমি বিএনপি বা জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি। আমি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। গভীর রাতে যা ঘটে ॥ রাত তখন আটটা। গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় হাজির র‌্যাব। তাদের দেখে হেলেনা বেশ ক্ষুব্ধ। এত রাতে কেন ওয়ারেন্ট ছাড়া তার বাসায় হানা- প্রশ্ন রাখেন তিনি। র‌্যাব তার নিজস্ব কৌশলেই এগিয়ে চলে অভিযানে। বাসার প্রতিটি রুমে তন্ন তন্ন করে চালানো হয় তল্লাশি। রাত দশটার দিকে র‌্যাবের তিনজন নারী সদস্য ওই বাসায় প্রবেশ করেন। প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনাকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশী মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় জমে সেখানে। কয়েকটি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচারও করে এ অভিযান। তাকে আটকের পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে জব্দকৃত আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। জয়যাত্রায় তালা ॥ রাত দুইটা থেকে রাত সোয়া চারটা পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতেই হেলেনার আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযান চালান র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে টেলিভিশন চ্যানেলটির কোন বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়ে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ বলেন, হেলেনাকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জয়যাত্রা নামে তার একটি আইপি টেলিভিশন রয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে- মিরপুর জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু টেলিভিশন চ্যানেলটির কোন বৈধ কাগজপত্র ছিল না। যদিও সম্প্রচার চ্যানেল হিসেবে যেসব সেটআপ থাকা দরকার তার সবকিছুই রয়েছে। তিনি বলেন, হেলেনা তার জয়যাত্রা টেলিভিশনের জন্য সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলেন। এমনকি দেশের বাইরেও প্রতিনিধি নিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ার কারণে পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এখানে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অফিস পেয়েছি। এ বিষয়েও তদন্ত করা হবে। চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে র‌্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জয়যাত্রা টেলিভিশনের কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র নেই। জয়যাত্রার মিরপুরের অফিসে অনেক সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে যেগুলো স্যাটেলাইট টিভির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিটিআরসির সহযোগিতায় এসব মালামাল জব্দ করা হচ্ছে। সেখানে টেলিযোগাযোগ আইনে কী মামলা করা যায় সেটাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, তিনি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সম্মানীয় ব্যক্তিদের সম্মানহানি করে আসছিলেন। রাষ্ট্রীয় কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে তিনি অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। সেফুদার কানেকশন ॥ বিকেলে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন হেলেনার অতীত জীবনের বিতর্কিত কর্মকা-। অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদার সঙ্গে তার লেনদেন ছিল। তিনি বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদাকে নাতি ডাকতেন। সেফুদার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তার সঙ্গে লেনদেনও ছিল হেলেনা জাহাঙ্গীরের। সেফুদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীর নজর কাড়তে চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে গ্রেফতারকৃতের নিয়মিত যোগাযোগ ও লেনদেন রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। এ ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীর অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে মাদার তেরেসা, ‘পল্লীমাতা’, ‘প্রবাসীমাতা’ হিসেবে পরিচিতি পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া খেতাবের অপপ্রচার চালাত। ব্যবসা ছেড়ে রাজনীতিতে আসা এই নারীকে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ থেকে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যা মানবিক সহায়তায় ব্যবহারের চেয়ে গ্রেফতারকৃতের খেতাব প্রচার-প্রচারণায় বেশি ব্যবহার করা হতো। হেলেনা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তিনি ১২টি ক্লাবের সদস্যপদে রয়েছেন। তার বিরুদ্বে মাদক ছাড়াাও অন্তত ৫টি মামলা দায়ের করার কাজ চলছে। মিথ্যাচার অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি তার নেশা ॥ হেলেনা জাহাঙ্গীর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানির অপচেষ্টা করতেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। শুক্রবার র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে বিদেশী মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বৈদেশিক মুদ্রা, হরিণের চামড়া ও চাকু জব্দ করা হয়। সুনির্দিষ্ট অনেক অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মদ ও চামড়ার লাইসেন্স আছে ॥ এদিকে হেলেনার বাসা থেকে মাদকসহ যেসব মালামাল জব্দ করেছে সে বিষয়ে তার মেয়ে জেসিয়া আলম বক্তব্য দিয়েছেন। রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত বলেন তিনি। মদের বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমার ভাইয়া মদ পান করে। সেগুলোই বাসায় ছিল। তবে ভাইয়ার মদ পানের লাইসেন্স রয়েছে। পাসপোর্টও আছে। র‌্যাব সেই লাইসেন্সটাও নিয়ে গেছে। এ সময় হরিণের চামড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসি বলেন, ভাইয়ার বিয়ের সময় মায়ের সঙ্গে রাজনীতি করা নেতানেত্রীরা মিলে ওইটা গিফট করেছে। সেটি ওয়ালে ঝোলানো ছিল। এটা কি থাকতে পারে না ? সৌন্দর্য হিসেবে রাখা হয়েছিল। আর ক্যাসিনোর সরঞ্জামাদির বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাসিনোর চিপস ওগুলো। আমরা নিজেরাই খেলতাম আর সময় কাটাতাম। তবে ক্যাসিনো খেলতে যে বোট আর সরঞ্জাম লাগে তা নেই আমাদের। ধরেন বাসায় তাস খেলে না কেউ? সে রকম একটা বিষয়। জাস্ট ক্যাসিনোর চিপগুলো ছিল বাসায়। মানুষ গেম খেলতে পারে না। ওরকম। এটা কি অন্যায় কিছু। বিদেশী মুদ্রার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমরা র‌্যান্ডমলি বিদেশে যাই। একাধিক দেশে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। বিদেশ থেকে আসার পর যে মুদ্রাগুলো বেঁচে যায় সেগুলো তো রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না। ওইসব মুদ্রা থেকে গেছে। এটা কি ইলিগ্যাল? জব্দের বিষয়ে সবই তো বললেন, আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছে র‌্যাব। তাহলে অভিযানকে কী হিসেবে দেখছেন। জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমাদের বাসায় ইলিগ্যাল মালামাল রয়েছে মানলাম। তাই বলে ওরকমভাবে অভিযান করা যায়। কোন ওয়ারেন্ট নেই, সার্চ ওয়ারেন্ট নেই হুট করে ঢুকে গেল আর অভিযান চালাল। কোন কো-অপারেট নেই। বিএনপি থেকে মনোনয়নের চেষ্টা ॥ জানা গেছে, ২০১৪ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালান। ওই দলে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হননি। ওই সময় বিএনপির এক ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ হয়। তখন ওই সোর্সের মাধ্যমে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেয়ার চেষ্টা চালান। তখন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে খালেদার জিয়ার সঙ্গে ছবি তোলেন। ওই ছবি নিয়ে মহিলা লীগের একজন নেত্রী প্রশ্ন তোলেন। নিস্তব্ধ বাসা ॥ এদিকে শুক্রবার সকালে হেলেনার বাসায় গিয়ে দেখা যায় সবই নিস্তব্ধ। কেউ কথা বলছেন না অভ্যাগতদের সাথে। আগের রাতে র‌্যাবের অভিযানের পর শুক্রবার সকাল থেকেই সুনসান এ বাসাটি। গণমাধ্যমের কিছু কর্মী এলেও তাদের প্রবেশ অথবা কোন ধরনের তথ্য দেয়া হচ্ছে না। রাজধানীর গুলশান ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর ওই বাসার ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, বাসায় শুধু ছোট্ট মেয়ে আর কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাসায় কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যকে যাতায়াত করতে দেখা যায়নি।
×