ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসা দিতে হিমশিম চিকিৎসকরা

রামেক হাসপাতাল ও বগুড়ায় করোনা রোগীর চাপ

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৫ জুন ২০২১

রামেক হাসপাতাল ও বগুড়ায় করোনা রোগীর চাপ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/বগুড়া ॥ টানা ১৪ দিন শেষে ফের রাজশাহীতে তৃতীয় দফা শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। তবে কমেনি মৃত্যু ও সংক্রমণ। বরং ক্রমেই বেড়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল ও সংক্রমণ। এরই মধ্যে রাজশাহীতে করোনায় রেকর্ড মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন রাজশাহীবাসী। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না রোগীর। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতেই এখন নাজেহাল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সর্বোচ্চ আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগী বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে দুদিন পরই হাসপাতালে আর জায়গা থাকবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৫৭ বেডের বিপরীতে মোট চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪০৪ জন। বাকিদের মেঝে ও বারান্দায় অতিরিক্ত বেড তৈরি করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাই হাসপাতালে রোগীর চাপ কমানোর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। কেবলমাত্র গুরুতর রোগীকেই ভর্তি করা হচ্ছে। রামেক হাসপাতালের একটি সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, একমাসে করোনা রোগীর জন্য প্রায় ২০০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০ টি আইসিইউ বেডের বিপরীতে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ রোগী ভর্তির আবেদন থাকছে। হাসপাতালের মোট ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি ওয়ার্ডের ৩৫৭টি বেডে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বেডের রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা রয়েছে। এর বাইরে ১৪ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে এই দুটি ওয়ার্ড বৃদ্ধির পর হাসপাতালটিতে নতুন করে করোনা রোগীর জন্য বেড বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না। আর প্রতিদিন করোনা রোগী হাসপাতালে যে হারে ভর্তি হচ্ছে তাতে আগামী এক মাসের মধ্যে হাসপাতালটিতে বেডের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এমন দুরবস্থা আসার আগেই পৃথক হাসপাতাল বাড়ানো দরকার। হতে পারে সেটা করোনা রোগী নয়ত সাধারণ রোগীর জন্য। নইলে সংক্রমণের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যেই রাজশাহীর চিকিৎসা ব্যবস্থা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ শামীম ইয়াজদানী পরিস্থিতি তুলে ধরে স্পষ্টই বলেন, আমরা বেড বৃদ্ধি করছি কিন্তু রোগী তার চাইতে বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগী বৃদ্ধি আমরা রুখতে পারছি না। আর দুই/একটি ওয়ার্ড নেয়ার পর করোন রোগীর জন্য হয়ত আর নতুন করে ওয়ার্ড বা বেড বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না। সর্বশেষ ১৪ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পরিচালক বলেন। রোগী যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা উদ্বেগের বিষয়। হাসপাতালে যে জনবল আছে তা রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। এভাবে রোগী বৃদ্ধি পেলে ইফেকটিভ চিকিৎসাও মুখ থুবড়ে পড়বে। তবে তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা গুরুতর রোগীর কাউকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। করোনা বা উপসর্গে আসা রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯১ থেকে ৯২ এর নিচে না নামলে রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। সবাইকে ভর্তি নিলে গুরুতর রোগীর জন্য হাসপাতালে জায়গা থাকবে না। স্যাচুরেশন না থাকলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ওয়ার্ডে থাকা রোগীও আক্রান্ত হচ্ছেন বা উপসর্গে ভুগছেন। সর্বশেষ হিসেবে ৪২ রোগী সাধারণ ওয়ার্ড থেকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। একই হাসপাতালে যেহেতু করোনা ও নন-করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে এজন্য ওয়ার্ড ট্রান্সফার সম্ভব হচ্ছে। কোন রোগীকেই উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে বেড বৃদ্ধি করেও করোনা রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আগে যেখানে সর্বোচ্চ ১৩৫ করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া হতো এখন চার শ’র বেশি রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, রাজশাহীতে এখনও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা যায়নি। কারণ অবকাঠামো ও জনবলের অভাব। তিনি বলেন, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়েছে। অথচ রামেক হাসপাতালে সাধারণ রোগী ও করোনা আক্রান্ত দুই ধরনের রোগীকেই সামাল দিতে হচ্ছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ নওশাদ আলী জানান, যতদ্রæত সম্ভব আরেকটা হাসপাতাল বাড়ানো দরকার। হতে পারে সেটা করোনা রোগীর জন্য, নয়ত সাধারণ রোগীর জন্য। তিনি বলেন, কেবল সংক্রমণ কমলেই রোগীর সংখ্যা কমবে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন করোনা সংক্রমণ আরও বেগবান করেছে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক জানানÑ এখন পর্যন্ত সংক্রমণের হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী অসচেতনতা। স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। চিকিৎসা খুবই সীমিত। হাসপাতালে আসা রোগীর যে আবাসন, অক্সিজেন সরবরাহ তা বর্তমান সময়ে চাহিদার তুলনায় সীমিত। তার পরও সবাই সচেষ্ট রয়েছেন। চাহিদাটা হঠাৎ দেখা দিয়েছে। সীমিত সক্ষমতা নিয়েই লড়াই করছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বগুড়ার হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগী ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, বগুড়া শহর ও সদর এলাকায় কঠোর ও সর্বাত্মক বিধি-নিষেধ চললেও জেলার অন্য উপজেলাতেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে পড়ছে। আক্রান্তের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে জেলা ও ১০ উপজেলার গ্রাম এলাকাতে করোনা রোগী রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে ১০ উপজেলাতেই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই তথ্য গ্রামাঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। অপরদিকে বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগেরদিন ৩টি হাসপাতালে ২৮৯ রোগী থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১১। করোনা ডেডিকেটেড বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল জানান, রোগী বৃদ্ধির হার নিয়ে তারা শঙ্কিত। রোগী বৃদ্ধির হার একই থাকলে দুদিন পর আর রোগী ভর্তির জায়গা থাকবে না। তিনি জানান, হাসপাতালের অর্ধেক রোগী রয়েছে বাইরের জেলার। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, তাদের করোনা ইউনিট ইতোমধ্যে পরিপূর্ণ। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রোগী ভর্তি করা হয়েছে। তবে রোগী বাড়লে জেলা করোনা সংক্রমণ রোধ সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে কোথায় আরও বেড বাড়ানো যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×