ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি ॥ বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রমাণ সরবরাহ করলে তথ্য দেবে সুইস ব্যাংক

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২০ জুন ২০২১

প্রমাণ সরবরাহ করলে তথ্য দেবে সুইস ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সারাবিশ্ব থেকেই অসংখ্য মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ রেখে থাকেন। সুইস ব্যাংকে টাকা-পয়সা রাখতে সারা দুনিয়ার মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বোধ করে থাকে তাদের গোপনীয়তার নীতির কারণে। সুইজারল্যান্ডের একটি আইন দ্বারা এই গোপনীয়তা স্বীকৃত, যার ফলে ব্যাংকগুলো কোন অবস্থাতেই তাদের গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করতে কারো কাছে বাধ্য থাকে না। ফলে কে, কেন বা কীভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যাংকে রাখছে, সেই গ্রাহক সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোন তথ্য দেয় না। এই আইন বদল করতে হলে সেটা গণভোট অথবা পার্লামেন্টে পাল্টাতে হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা ব্যক্তির তালিকা সংবলিত কোন তথ্য দেয়নি। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে, এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই। সম্প্রতি সুইস জাতীয় ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা বাংলাদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ২০২০ সালে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ কমে ৫৬৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কে নেমে এসেছে। টাকার হিসাবে এই পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ২১৫ কোটি। পরপর দুই বছর ধরে এই পরিমাণটি কমছে। এর আগে ২০১৮ সালে আমানতের পরিমাণ ছিল ৬১৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক, যা ২০১৯ সালে কমে গিয়ে ৬০৩ মিলিয়ন হয়। প্রকাশিত তথ্যে নির্দিষ্ট করে বলা নেইÑএই অর্থের মালিক কে বা কারা এবং এটাও বলা নেই যে, এই আমানত বাংলাদেশ থেকে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে কিনা। ২০২০ সালে ভারত থেকে সুইস ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ দেশটির গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। ২০১৯ সালের চেয়ে ৮৯৯ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক বেশি আমানত জমা হয়েছে ২০২০ সালে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন। পাকিস্তান থেকেও সুইস ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৭৭ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালে ৬৪০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের বেশিরভাগই বৈদেশিক বাণিজ্যকেন্দ্রিক। গ্রাহকের আমানত হিসাবে যে অর্থ থাকে, তার মধ্যে সুইজারল্যান্ডে এবং অন্যান্য দেশে যেসব বাংলাদেীশ থাকেন, তাদের অর্থও রয়েছে। গ্রাহক আমানতের একটি অংশ পাচার হয়ে যেতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। বিএফআইইউর কাছে এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা এর আগে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সংবলিত কোন তথ্য তারা দেয়নি। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে- এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই। দীর্ঘদিন ধরে সারাবিশ্বের ধনীরা কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা রাখছেন। টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের গন্তব্য হওয়ার পেছনে দেশটির ব্যাংকিং আইনের মাধ্যমে দেয়া উঁচু পর্যায়ের গোপনীয়তাই মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৩৪ সালের সুইস ব্যাংকিং আইন যে কোন সুইস ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমানতকারীর অনুমতি ছাড়া কোন এ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোন ধরনের তথ্য, এমনকি সেটির অস্তিত্ব স্বীকার করাকেও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। যদি কোন সরকারী সংস্থা দাবি করে যে আমানতকারী কোন ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে অথবা অন্য কোন ধরনের আর্থিক ব্যাপার (যেমন দেউলিয়া হওয়া, বিবাহবিচ্ছেদ অথবা উত্তরাধিকার) নিয়ে বিতর্ক থাকে, কেবলমাত্র সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে এ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশীরাও তাদের অর্থ সুইস ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা রেখে আসছেন। এই আমানতগুলোকে সরাসরি কালো টাকা হিসেবে ধরে নেয়া যায় না বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকও সুইজারল্যান্ডে তহবিল জমা রাখে। সঙ্গে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখেন। একই সঙ্গে অর্থ পাচারকারীরা সেখানে তাদের অর্থ লুকিয়ে রাখেন। কি পরিমাণ অর্থ তারা সুইজারল্যান্ডে জমা রেখেছে, তা প্রকাশ করতে তিনি সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। ইউরোপের এই দেশটিতে কি পরিমাণ অবৈধ অর্থ জমা আছে, তা জানা যায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশীদের মধ্যে কর অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে সুইজারল্যান্ডের আকর্ষণ অনেকটাই কমে এসেছে। এখন জার্সি, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ, পানামা, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের মতো বেশ কিছু বিকল্পের কথা জানান তিনি। সুইস ব্যাংকগুলো এখন আর আগের মতো নিরাপদ নেই। আর সুইজারল্যান্ড সরকার এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে তথ্য ভাগ করার ব্যাপারে আরও খোলা মনে ভাবছে বলে মনে করেন তিনি। এ কারণেই সম্ভবত বাংলাদেশী নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ কমে গিয়েছে। তিনি বলেন, অথবা এটাও হতে পারে যে যেহেতু সুইজারল্যান্ডে সুদের হার কমে গিয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই কিছু তহবিল উঠিয়ে এনে অন্য কোথাও আমানত রেখেছে।
×