ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ড্যান্স বারের আড়ালে নারী পাচারের ফাঁদ

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৮ জুন ২০২১

ড্যান্স বারের আড়ালে নারী পাচারের ফাঁদ

শংকর কুমার দে ॥ বিনোদন জগতের রোমাঞ্চকর নাম ড্যান্স বার। এই নামটি চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে আলো ঝলমলে শোবিজের নাম, যশ, খ্যাতির উচ্চ শিখরে ওঠার প্রত্যাশীদের। পতঙ্গের আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মতো কিশোরী, তরুণী, যুবতীরা ডান্স বারে যোগ দেয়ার নেশায় উদগ্রীব-ব্যাকুল। চমকপ্রদ এই নামটি আড়ালে চলেছে প্রলোভন, প্রতারণা করে নারী পাচারের ফাঁদ। গত আট বছরে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে এক হাজারের বেশি নারী। এই ধরনের তথ্য পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। পাচারের পর তাদের জোরপূর্বক বাধ্য করা হয় পতিতাবৃত্তিতে। খ্যাতনামা চিত্রনায়িকা থেকে শুরু করে অনেক জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী মডেল ও তাদের সহযোগীরা নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ভয়াবহ তথ্য বের হয়ে আসছে। ডান্স বারের নামে অর্থ বিত্ত খ্যাতির চ‚ড়ায় উঠতে গিয়ে নারীর সতীত্ব হারিয়ে যারা ফিরে আসতে পেরেছে। তারা তাদের করুণ কাহিনীর বর্ণনা করেছে। আর যারা দেশ থেকে দুবাইয়ে পাচার হওয়া তরুণী-কিশোরী ফিরে আসতে পারেনি তাদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলের সাহায্য সহযোগিত নেয়ার বিষয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ থেকে কিশোরী, তরুণী, যুবতীদের দুবাইয়ে পাচার করা হচ্ছে দুবাইয়ে পাচার করার ঘটনায় গত বছর গ্রেফতার হয়েছে জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পী ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ তদন্তে বের হয়ে এসেছে করে দুবাইয়ে নারী পাচারের চাঞ্চল্যকর কাহিনী। নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেরিয়ে আসছে আলো ঝলমলে সিনেমা-শোবিজের অনেকের নাম। গত এক বছরে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় এক ডজন ব্যক্তি। ডান্স বারের নাম ব্যাবহার করে এক হাজারের বেশি কিশোরী-তরুণী পাচার করেছে গ্রেফতারকৃতরাসহ তাদের সহযোগীরা। বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে পাচার হওয়া তরুণী-কিশোরীদের উদ্ধারে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন-ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে পারে পুলিশ। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ে নারী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পী ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাচারে জড়িত অনেকের নামই বেরিয়ে আসছে। পাচারকারীর তালিকায় আছে একজন খ্যাতিমান চিত্রনায়িকার ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফার। চলচ্চিত্র জগতের শীর্ষস্থানীয় এই নায়িকার ম্যানেজার কাম কেরিওগ্রাফার এখন পলাতক। দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খান, তার ভাই নাজিম এবং এরশাদের কাছে নৃত্যশিল্পীদের তুলে দিতেন চিত্রনায়িকার পলাতক ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফার। দুবাইয়ে নৃত্যশিল্পীদের পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া দুই আসামির জবানবন্দীতে চিত্রনায়িকার ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফারের নাম উঠে এসেছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নৃত্যশিল্পী ইভান গত বছর গ্রেফতার করার পর তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুবাইয়ে নারী পাচারের অভিযোগে নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগের জামিন নামঞ্জুর হয়। লালবাগ থানায় মানব পাচার আইনে দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। ইভান ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে পাচারকারী চক্রের হোতা আসামি আজম খান ও আলামিন। পাচারকারী চক্রের অন্য সদস্যরা এখনও পলাতক। দুবাইয়ের বিলাসবহুল হোটেলে মোটা অঙ্কের টাকার চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে তাদের পাচার করেছে পাচারকারী চক্র। দুবাইয়ে পাচার করার পর তাদের দিয়ে নাচ, গান করানোর নামে পতিতাবৃত্তিতে জড়ানো হয়েছে। দুবাই থেকে ফিরে এসেছে বেশ কয়েকজন তরুণী যার মধ্যে দুই তরুণী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। দুই তরুণী ফিরে আসতে পারলেও পাচার হওয়া বেশিরভাগ কিশোরী-তরুণী ও কিশোরী যারা ফিরে আসতে পারেনি তাদেরকে উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত আট বছরে বিশ-বাইশ বছর বয়সী হাজারের বেশি তরুণী-কিশোরীকে পাচার করা হয়েছে দুবাইয়ে। যাদের দুবাইয়ে বিলাসবহুল হোটেলে মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল, তাদের অনেককেই জিম্মি করে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে জড়ানো হয়। দুবাইয়ে বাংলাদেশী এসব তরুণী-কিশোরীকে উদ্ধার করে পাচারকারীদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের-সিআইডি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রটি শুধু বাংলাদেশ নয়, পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান থেকেও মেয়েদের দুবাইয়ে পাচার করে পতিতাবৃত্তিতে জড়ায়। আমরা পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইব। সেজন্য আমরা ডকুমেন্ট তৈরি করছি। যদিও সময় একটু বেশি লাগছে। তবে আমরা সেখানে জিম্মি বাংলাদেশীদের উদ্ধার করব। সেজন্য ইন্টারপোলের সহায়তা দরকার। সম্প্রতি চক্রটির বাংলাদেশের হোতা আজম খানসহ তার দুই সহযোগী ময়না ও মোঃ আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ডকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন আজম খান ও তার সহযোগী ডায়মন্ড। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, সিআইডির হাতে গ্রেফতার আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হোতা আজম খানের দেয়া জবানবন্দীতে, জিজ্ঞাসাবাদে, তদন্তে, অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দুবাইয়ের ফরচুন পার্ল হোটেল এ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক বাংলাদেশে চক্রটির গডফাদার আজম খান। অর্ধশত দালালের মাধ্যমে অল্পবয়সী মেয়েদের অথবা বিশ-বাইশ বছরের তরুণীদের উচ্চ বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করতেন। বিশ্বস্ততার জন্য চাকরির আগেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হতো। পাশাপাশি দুবাইয়ে যাওয়া-আসার সব খরচও দিত চক্রটি। দালালরা নির্ধারিত দুটি বিদেশী এয়ারলাইন্স এজেন্সির মাধ্যমে তাদের দুবাই পাঠাত। সেখানে যাওয়ার পরে প্রথমে তাদের ছোটখাটো কাজ দেয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্সবারে নাচতে বাধ্য করা হতো। অন্যথায় শারীরিকভাবে নির্যাতন অথবা বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেয়া হতো। দেয়া হতো না কোন খাবার। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন অর্থাৎ পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো তাদের। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী পাচারকারীদের গডফাদার আজম খান আদালতে সব স্বীকার করেছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগও পেয়েছি, সেগুলোর অনুসন্ধান চলছে। তার বিরুদ্ধে সিআইডি শীঘ্রই মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে। পাচারকারী চক্রটি একসঙ্গে ৪/৫ জন মেয়েকে দুবাইয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী মেয়ে এখনও সেখানে অবস্থান করছেন। তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দূতাবাসের সহযোগিতায় ১৬ ভুক্তভোগী দেশে ফিরেছে। গত ২ জুলাই সিআইডির এএসপি মৃণাল কান্তি সাহা বাদী হয়ে লালবাগ থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন, সেখানে আজম খান এবং আরও আট জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় দুবাই থেকে ফেরা তিন তরুণীর নাম উল্লেখসহ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও করা হয়েছে। তরুণীরা জবানবন্দীতে বলেছেন, আজম খান এক তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে অন্য লোক দিয়েও ধর্ষণ করিয়েছে। কিন্তু এর বিনিময়ে তাকে কোন টাকা দেয়া হয়নি। দুই তরুণী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তারা বলেছেন, দুবাইয়ে নেয়ার পর তিন মাস ঘরে বসিয়েই খাওয়ানো হতো। টুকটাক কাজ কাউকে দিত, কাউকে দিত না। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেই আজম খানের আসল রূপ সামনে আসত। এরপর তরুণীদের নেয়া হতো নাইট ক্লাবে। কেউ যেতে রাজি না হলে তার ওপর চলত বর্বর নির্যাতন। হাত-পা কেটে দেয়া হতো, ইলেকট্রিক শক দেয়া হতো। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তরুণীরা রাজি হতেন। তখন তরুণীদের আজম খান নিজেই ধর্ষণ করত। পরে পাঠানো হতো নাইট ক্লাবে। সেখানেই মনোরঞ্জন করতে হতো আগন্তুকদের। এ পর্যন্ত আজম খান দুবাইয়ে পাচার করেছেন ১ হাজারেও বেশি নারীকে। দুই-এক জন ফিরে এলেও অধিকাংশই সেখানে রয়ে গেছেন। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে দুবাইয়ে বাংলাদেশী আজম খানের মালিকানাধীন ড্যান্স বার থেকে পাচার হওয়া একাধিক নারীকে উদ্ধার করার ঘটনার তদন্তে পাওয়া সর্বশেষ ওই মামলায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত আজম খান ছাড়াও তার এজেন্ট ইয়াসিন ও নির্মল সরকার আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। এরপর চলচ্চিত্র জগত ও শোবিজের অনেকের নাম উঠে আসে যারা নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। আসামি ইয়াছিন সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালরতে দেয়া জবানবন্দীতে বলেছেন, দুবাইয়ে নারীদের নেয়ার কাজে সহায়তা করে আজম খানের ভাই এরশাদ, আলমগীর, স্বপন ও অনিক। দেশ থেকে এরশাদ ও আজমদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাব থেকে ‘আর্টিস্ট’ দেয় খ্যাতনামা চিত্রনায়িকার ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফারসহ আক্তার, সোহাগ, রাসেল ও অপূর্ব। নির্মল সরকার তার জবানবন্দীতে বলেছেন, দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খানের ভাই নাজিম এক দিন তার ড্যান্স একাডেমিতে যান। সেখানে মেয়েদের নাচ দেখে সন্তুষ্ট হন। জবানবন্দীতে নির্মল সরকার বলেছেন, নির্মল ড্যান্স একাডেমি নামে তার একটি নাচের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরপর সেখান থেকে নাজিমের কথায় দুজন মেয়েকে দুবাইয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এজন্য তিনি ৩০ হাজার টাকা পান। এ ছাড়া মাইনুদ্দিন, সজীব, ইভান শাহরিয়ার সোহাগ, ওয়াসিম, জসিম, সোহেল রহমান, ওয়াসেক মুস্তাকিনুর রহমান, আনিসুল ইসলাম হিরুসহ অনেকেই তার কাছে আর্টিস্ট চায়। খ্যাতনামা চিত্রনায়িকার ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফার ছাড়াও আক্তার, সোহাগ, অপূর্ব তাকে আর্টিস্ট সরবরাহ করেন। তিনি তাদের সঙ্গে আর্টিস্টদের যোগাযোগ করিয়ে দিতেন। পরে দুজন মেয়ে তাকে জানায়, চুক্তি অনুযায়ী তারা কাজ ও বেতন পাচ্ছে না। তাদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি বুঝতে পারেন এই জগত খারাপ। তখন তিনি নিজের ড্যান্স একাডেমি বন্ধ করে দেড় বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে সংসার খরচ চালাচ্ছেন বলে জবানবন্দীতে বলেছেন নির্মল সরকার। পাচারের হোতা আজম খান জবানবন্দীতে বলেছেন, লালবাগের স্বপন, বংশালের আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়না, আলামিন ওরফে ডায়মন্ড, চট্টগ্রামের মাহফুজ ও ময়মনসিংহের অনিক তাকে মেয়ে সংগ্রহের কাজে সাহায্য করে। তার দুই ভাই এরশাদ, আজমও বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়ে সংগ্রহ করত। বাড্ডার সজীব ও ময়মনসিংহের অনিকেরও দুবাইয়ে ড্যান্স বার রয়েছে। সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, দুবাইতে জিম্মি থাকা অনেক তরুণী দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। শতাধিক তরুণীর দেশে ফেরার কাকুতি-মিনতির অডিও-ভিডিও রেকর্ডও সিআইডির হাতে এসেছে। আজম খানের মোবাইল ফোন থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বেশকিছু ভিকটিমের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তাদের জবানবন্দী ও বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তারা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, দুবাইয়ের স্থানীয় কিছু সদস্যও পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত’- বলেন ওই কর্মকর্তা। এ চক্রের হোতা আজম খান ছাড়াও বেশ কয়েকজনের নাম আমরা জেনেছি। তদন্তের স্বার্থে এখন নামগুলো বলা যাচ্ছে না। তাদের অনেকের অবস্থানও আমরা নিশ্চিত করেছি। আন্তর্জাতিক এই নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে ভারতীয় ও পাকিস্তানী নাগরিকরাও রয়েছেন। তারা সবাই এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তাদের সম্পর্কে তথ্য বের করাটা বেশ কঠিন। দুবাইয়ে যে হোটেলগুলোতে বাংলাদেশীদের রাখা হয়, সেগুলোর পরিচালনায় রয়েছেন আজমের দুই ভাই এরশাদ ও নাজিমউদ্দিন। তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। পাচারকারীদের গ্রেফতার এবং জিম্মি বাংলাদেশীদের উদ্ধারে আমরা পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়ার বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। আলাপ আলোচনায় নারী পাচার সংক্রান্ত ডকুমেন্ট তৈরির কাজ চলছে বলে সিআইডি কর্মকর্তার দাবি।
×