ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌন ভোগ বিলাসের ডিজে পার্টি

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৭ জুন ২০২১

যৌন ভোগ বিলাসের ডিজে পার্টি

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রাতের আঁধারে মাদক আর নারী নিয়ে মনোরঞ্জনের জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডিজে পার্টি। পিপাসার্ত অর্থ-বিত্ত-প্রভাবশালী-প্রতাপশালী ক্ষমতাধররাই আয়োজক, উদ্যোক্তা। গানের তালে তালে অশ্লীল নৃত্যে, মাদক-ইয়াবার নীল নেশায় অবাধ যৌনতার আনন্দ বাজার। রূপের হাটে রঙের দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিনোদনের জন্য সেখানে কাগজের মতো টাকা ওড়ে। বিদেশী অপসংস্কৃতির, দেশীয় সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ইংরেজী ভাষায় সুন্দর নাম ডিজে পার্টি। চিত্র নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় আবারও ডিজে পার্টির নামটি পাদপ্রদীপের আলোচনায় চলে এসেছে। লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধার (২৪)। রাজধানীর রাতের আঁধারের ডিজে পার্টির মধ্যমণি এই তিন যুবতী। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার হওয়া আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন তারা। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসছে রাজধানীর রাতের আঁধারের ডিজে পার্টির অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর কাহিনী। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হওয়া আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদক ইয়াবাসহ গ্রেফতারের সময়ে ছিলেন ওই তিন যুবতী। প্রায় প্রতি রাতেই মাদকের আসর বসিয়ে তিন যুবতীসহ নারীদেহ ব্যবসার নামে চলত ডিজে পার্টি। রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকায়, বিলাস বহুল ভবনের, বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাটে বসে ডিজে পার্টির নামে অসামাজিক কার্যকলাপের রমরমা ব্যবসার আসর। খুব অল্প খরচে এ ধরনের পার্টিতে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকার তরুণ-তরুণীরা। আর এসব রাতজাগা ইভেন্টের মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজে পার্টি। এক সময় উঠতি বয়সের ছেলেরাই ডিজে পার্টির বড় খদ্দের হলেও এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঢাকার অভিজাত এলাকার তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা। গানের তালে তালে অশ্লীল নৃত্য, ইয়াবার ছড়াছড়ি, সঙ্গে অবাধ যৌনতা কি নেই সেখানে। ডিজে পার্টিগুলোর আকর্ষণ বাড়ায় সিনেমার নায়িকা, নাটকের পরিচিত মুখ, মডেল। আলো ঝলমলে জগতের পরিচিত মুখগুলো দেখামাত্রই হুমড়ি খেয়ে পড়েন নীল নেশায় আসক্তরা। পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বিলাস বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে প্রায় রাতে ডিজে পার্টি করে থাকেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা, আর এসব পার্টিতে টিকেট কিনে যোগ দেন তরুণ থেকে শুরু করে একশ্রেণীর মধ্য বয়সী পুরুষ। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমÐিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ডিজে পার্টি। দিনের বেলায় সাদা চোখে দেখা যাবে এসব ফ্ল্যাট, ফ্ল্যাটের সামনে থাকে অফিস। সাজানা-গোছানো কক্ষ, চেয়ার টেবিল সোফা। দেয়ালে টানানো থাকে নানা শৈল্পিক চিত্র। প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আশপাশের লোকজন ভাবতেই পারেন না এসব ফ্ল্যাটের অফিসে রাতের আঁধারে বসে ডিজে পার্টি। পুলিশের অনুন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে শতাধিক ডিজে পার্টির আসর বসে রাতের আঁধারে। কয়েক তরুণী-যুবতী রয়েছে যারা ওই পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে রাতব্যাপী উঠতি তরুণদের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়ে পরদিন ফিরতেন বাসায়। এছাড়া একটু বেশি টাকা খরচ করলেই সেক্স পার্টনার হিসেবে পাওয়া যাবে বিভিন্ন মিউজিক ভিডিও, শর্ট ফিল্মের নায়িকাদের। রাজধানী ঢাকার আশুলিয়ার ঢাকা বোর্ড ক্লাবে চিত্র নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টায় জড়িতদের গ্রেফতারের আগেও রাজধানী ঢাকার শেষপ্রান্তে রূপনগরের বিরুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় তুরাগ রিক্রিয়েশন নামের একটি রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল একটি চক্র। প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে জড়ো হতো তরুণ-তরুণীরা। রাতব্যাপী গান, নাচ ও মাদকে বুঁদ হয়ে থাকত তারা। এসব বিষয়ে একটি মামলা হলে তা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। জেলা উত্তর ডিবির দায়ের করা ওই মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই রিসোর্টটি ভাড়া নিতো একটি চক্র। স্যুটিংয়ের নামে ভাড়া নিয়ে তারা চালাতো নানা অপকর্ম। ভবনের নিচতলায় রাতব্যাপী অনুষ্ঠিত হতো নাচ-গান। ইংরেজী-পপ গান বাজাতেন ডিস্ক জকিরা। নাচের তালে তালে চলত মাদকের আড্ডা। দ্বিতীয় তলার বিভিন্ন কক্ষ ভাড়া নিয়ে অন্যরকম ফুর্তিতে মেতে উঠতেন বেপরোয়া তরুণ-তরুণীরা। তাদের এই অপকর্মের কথা জানাজানি হওয়ার পর একসময় ডিজে পার্টি বন্ধ করে দেন আয়োজকেরা। অবাধ যৌনতার পাশাপাশি উঠতি তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। মদ, বিয়ার, ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন, ফেনসিডেলসহ প্রায় সকল ধরনের মাদক কিনতে পাওয়া যায় এসব পার্টিতে। ডিজে পার্টির অনন্য উদাহরণ গত ফেব্রæয়ারি মাসে রাজধানীর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহা। মৃত ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় অন্যতম আসামি এই নেহা। গ্রেফতারের পর মামলা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গণমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে ডিজে নেহার কুকর্মের বেশ কিছু ছবি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ থাকলেও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে নেহা। তার বাবা একজন মাঝারি স্তরের ব্যবসায়ী। রাজধানীর আজিমপুরে বসবাস করেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরান ঢাকায়। অন্যদিকে নেহার মা থাকেন মিরপুরে। দীর্ঘদিন ধরে তার বাবা-মায়ের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলে আসছে। একরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে বেড়ে ওঠেন নেহা। পড়াশোনাও বেশ দূর করতে পারেননি নেহা। মেধাবী হলেও স্কুলের গÐিতেই আটকে যায় পড়াশোনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেহা বিপথে যাওয়ার নেপথ্যে তার বাবা-মায়ের দ্ব›দ্ব ও দূরত্ব উল্লেখযোগ্য। কয়েক বছর আগে কথিত লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তির সঙ্গে নেহার বিয়ের কথাও শোনা যায়। সেই ব্যক্তি নেহাকে লন্ডনে নেয়ার কথা বললেও বিভিন্ন অজুহাতে সেখানে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন নেহা। তবে নেহার বিয়ের বিষয়ে পুলিশ সন্দিহান। দিনে ঘুমে থাকলেও রাতে ডিজে ও মদের পার্টিতে অশ্লীল রকমের উদ্যাম নাচানাচিতে মেতে উঠতেন নেহা। পরতেন ওয়েস্টার্ন পোশাক। পার্টিতে সীসার পাইপ দিয়ে ¯েøা মোশনে ধোঁয়া ছাড়াই ছিল তার নেশা। বেশকিছু ছবিতে দেখা গেছে, দামী বিদেশী মদের বোতল নিয়ে চুমো দিতে। নিজের কোন আয় না থাকলেও নামী-দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন এই নারী। টার্গেট ছিল ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীদের বাগে আনা। তাদের দিয়ে চালাত দেহ ব্যবসা। এক কথায় রূপের ঝলক দেখানো ডিজে নেহা নানান কুকর্ম ও অশ্লীলতার মধ্যেই ডুবে ছিল। নামী-দামী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই ছিল নেহার শিকার। তাদের বশ করতে একাধিক তরুণ-তরুণী তার হয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করত। সীসা পার্টি, মদ পার্টি এবং অশ্লীল নাচের আয়োজনে দাওয়াত পেত সমাজের উচ্চ বিত্তের সন্তানরা। যারা নেহার হাত ধরেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যেতেন। সকল অপকর্মের হোতা ডিজে নেহার কপাল খুলতো সীসা লাউঞ্জ ও মদের পার্টিতে। এসব পার্টিতে আসা ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতো। ভাল লাগা থেকে একান্তে মিলিত হতে চাইলে ডিজে নেহার সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হতো। এখান থেকেই শিকারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। তার এই অবৈধ অর্থকড়ির খোঁজে নেমেছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভাল লাগা তরুণী-তরুণীদের একান্তে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের একাধিক আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নেহার। তাছাড়া নেহার এসব পার্টিতে মাদক সরবরাহ করত অবৈধ মাদক কারবারিরা। গত ফেব্রæয়ারি মাসের শেষ দিকে মদ পানের পর অস্বাভাবিকভাবে মারা যায় ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরী ও তার বন্ধু আরাফাত। এ ঘটনায় মামলা হলে আলোচনায় চলে আসেন নেহা। ডিজে পার্টির বিষয়টি উঠে এসেছে নিহত শিক্ষার্থীর মামলায়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৮ জানুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে মর্তুজা রায়হান ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে মিরপুর থেকে স্কুটার করে লালমাটিয়ায় আরাফাতের বাসায় নিয়ে যান। পরে আরাফাত, ওই শিক্ষার্থী ও রায়হান একসঙ্গে উবারে করে উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের ‘বাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে’ যান। সেখানে আসামি নেহা, শাফায়েত জামিলসহ (২২) আসামিরা মদ পান করেন এবং ভিকটিমকে মদ পান করান। একপর্যায়ে ভিকটিম অসুস্থবোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নুহাতের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে রায়হান ভিকটিমকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর রাতে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খানকে ফোন দেয়। অসিম পরদিন এসে ভিকটিমকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ভিকটিম মারা যান। এছাড়া তার সঙ্গে থেকে মদপান করা আরও এক সহপাঠী আরাফাত রাজধানীর সিটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও বান্ধবী নুহাত আলম তাফসীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া শাফায়াত নামে অপর আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার সর্বশেষ আসামি নেহাকে আজিমপুরের একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নেহার অপরাধ নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমেই। উল্লেখ্য, ৫ জন একে অপরের বন্ধুতে রূপান্তরিত হয় বলে জানা গেছে। প্রতিদিন ওয়েস্টার্ন দামী দামী সব ড্রেস পরে বার ক্লাবে যেত ডিজে নেহা। ব্যবহার করত দামি ব্র্যান্ডের সব মেকআপ। আর এমন রূপের ঝলক দেখিয়ে আয়োজন করতেন ডিজে পার্টির। সেই পার্টিতে নিয়ে আসা হতো ধনী পরিবারের সন্তানদের। সেখান থেকে অনৈতিক কার্যকলাপ। এটাই ছিল নেহার আয়ের উৎস। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমÐিসহ বেশকিছু এলাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাট বাড়িতে চলছে ডিজে পার্টির নামে মাদক ও দেহ ব্যবসা। এর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক উত্তরা এলাকায়। এর ডিজে পার্টিতে মদ, বিয়ারের পাশাপাশি সেবন করা হয় ইয়াবা। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এখান থেকে ইয়াবা ও বিয়ারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল খদ্দেরসহ কয়েকজন তরুণী। অপরদিকে বনানীর একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে ম্যানেজারসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। এখানে ডিজে পার্টির নামে চলছিল রমরমা মাদক ও দেহ ব্যবসা। শান্তিনগর এলাকার একটি সঙ্গীত স্কুলে অভিযান চালিয়ে মদ, বিয়ার ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় এক তরুণীসহ তিনজনকে। এখানে বিকালে চলত শিশুদের সঙ্গীত শিক্ষা। আর রাত দশটার পরে বসতো ডিজে পার্টি। অনেক ডিজে পার্টিতে প্রবেশ ফি দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। এখানে যারা আসেন তারা সবাই তরুণ-তরুণী। এখানে উঁচু মঞ্চের ওপর কয়েকজন নারী-পুরুষ ডিজে কান ফাটানো শব্দে মিউজিক বাজায়। আর মঞ্চের সামনে যুবক-যুবতীরা একে অপরের বাহুবন্ধনে উন্মাতাল হয়ে নাচে। এসব তরুণীকে নিয়ে নাচতে হলে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হয়। আর চাহিদামতো টাকা দিলে অনৈতিক কাজ করার অনুমতি মেলে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব স্থান নিরাপদ, নির্জন সেসব এলাকায় প্রায় রাতেই ডিজে পার্টির নামে বেপরোয়াভাবে চলছে যৌন-বাণিজ্য। তরুণদের বিপদগামী করছে এসব চক্র। তারা ডিজে পার্টির নামে কমবয়সী মেয়েদের দিয়ে যৌনকর্ম করাচ্ছে। বিভিন্ন বাসা-অফিস ভাড়া নিয়ে চক্রটি এসব অপকর্ম করছে। বলে রাখি, ডিজে ইংরেজী শব্দ। যার মূল অর্থ করলে দাঁড়ায় ডিস্ক জকি। একজন ব্যক্তি যখন তার সংগ্রহে দেশী-বিদেশী গান নিজের পছন্দমতো আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে অতিথির উদ্দেশে প্লে করে তখন তাকে ডিজে বলা হয়। আর ওই গানের তালে তালে অতিথি তার মনের অনুভূতি নৃত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। একজন ব্যক্তি নিজের পছন্দমতো গান চালিয়ে দিলেই তাকে ডিজে বলা যাবে না। ডিজে হতে হলে কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী হতে হবে। আর সেই গুণের অধিকারী হতে গেলে দরকার হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। বর্তমানে আমাদের দেশে যে কয়েকজন ডিজে হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে প্রায় প্রত্যেকেই ভিন্ন কিছু করার তাড়না থেকে এই পেশায় আসেন। এদের মধ্যে ডিজে রাহাত, প্রিন্স, ওয়াহেদ, অমি, রিয়েল, জোবায়ের, মেহেদী, ফারুক, হিমু, ইমন, হৃদয় মিশু অন্যতম। আশার কথা হচ্ছে বেশকিছু মেয়ে ডিজেও সাফল্যের সঙ্গে এই পেশায় কাজ করছে। যারা অনেক বাধার দেয়াল ডিঙিয়ে ডিজে পেশাতে সফল হয়েছে। এর মধ্যে ডিজে সনিকা, মিষ্টি, রিটা, পরী অন্যতম। চিত্র নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতারকৃতদের ডিজে পার্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×