ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হাসপাতালে কোনো আইসিইইউ নেই

লালমনিরহাটে করোনা সংক্রামণ হার প্রায় ৪০% ॥ সীমান্ত গুলো প্রায় উম্মুক্ত

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১১ জুন ২০২১

লালমনিরহাটে করোনা সংক্রামণ হার প্রায় ৪০% ॥ সীমান্ত গুলো প্রায় উম্মুক্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে করোনা সংক্রামণ হার প্রায় ৪০%। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। হাসপাতালে কোন আইসিইইউ নেই। সীমান্ত গুলো প্রায় উম্মুক্ত। বুড়িমারী সীমান্তের ওপারে চেংরাবান্ধা শ্বশ্মানে শুক্রবার দিনভর লাশ পোড়ানোর দৃশ্য দেখা গেছে। এই শ্বশ্মানে সড়কার হয় বাংলাদেশী ধরলা নদীর পানি দিয়ে। লালমনিরহাটে করোনা সংক্রামণ মারাতœক আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই সীমান্ত গ্রাম গুলোতে করেনা সংক্রামণ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর খবরও শোনা যাচ্ছে। করোনা পরীক্ষায় সচেতনতার অভাবে সংক্রামণ ও মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান উঠে আসছেনা। হাসপাতাল গুলোতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মারাতœ শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এলেও কোন আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার মত অবকাঠামো গড়ে উঠেনি সরকারি হাসপাতালে। জেলা সদর হাসপাতালে নেই কোন আইসিইউ ও অক্সিজেন ভেন্টিলিশন দেয়ার ব্যবস্থা নেই। নিজ বাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক হোমকোয়াইন্টেশন অবস্থায় চিকিৎসাধীন দুই শিক্ষকের মৃত্যুতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে।এদিকে বুড়িমারী সীমান্ত সংলগ্ন বুড়িমারী স্থল বন্দরের বিপরীতে থাকা চেংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের পাশে ভারতীয় গ্রামে ধরলা নদীর পাড় সংলগ্ন শ্বশ্মানে আজ শুক্রবার সকাল হতে বেশ কয়েকটি লাশ পিইপি পরিহিত লোকজনকে পুড়িয়ে ফেলতে দেখা গেছে। এই শ্বশ্মানের সৎকারের পানি নিতে হয় বাংলাদেশের ভিতরে এসে সীমান্ত নদী ধরলা হতে। এতে করে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের গ্রাম গুলোতে করোনায় সংক্রামণের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা, কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও এপার ওপার অবাধ যাতাযাত ”শূন্যে” আনতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি’র মাধ্যমে ঊর্ধতণ কতৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত করেনায় সংক্রামণের হার প্রায় ৪০% (অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসায় আসা সন্দেহজনক রোগীদের সংগ্রহকৃত নমূনার ভিত্তিতে)। এসব রোগীর দেহে প্রায় সকলের ভারতীয় ভেরিয়েট করোনার জীবাণু থাকার সন্দেহ করা হচ্ছে। করোনায় নিহতদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, নিহত দুই স্কুল শিক্ষ কের বাড়ি জেলা শহরের সাপ্টানা বাজার মহল্লায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক হোমকোয়ান্টিশন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যায়। এরা হলেন, লালমনিরহাট শহরে চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অমিতা দেবো (৪৬) ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক মন্ডল লুলু (৫৫)। বাড়িতে রেখে তাদের প্রচলিত সকল চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে ছিল। কিন্তু তাদের অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে রেখে অথবা অক্সিজেন ভেন্টিলেশনে রেখে শেষবারের মত বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেত। কারণ তারা শ্বাসকষ্টজর্ণিত অক্সিজেন সংকটে মারা গেছে। তাদেও কৃত্রিম শ্বাসপ্রস্বাসের ব্যবস্থা করা গেছে বেঁচে যেতে পারত কিন্তু জেলা শহরে করোনার কোন আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এদিকে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় গ্রাম গুলোতে করোনায় মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার বাহিরে থাকা ভারতীয় সীমান্ত গ্রামের নাগরিকদের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করছে। দিনরাত ২৪ ঘন্টায় জরুরি প্রয়োজনে মাত্র এক ঘন্টা করে তিন ঘন্টা কাঁটাতারের বেড়ার করিডোরের গেট গুলো খুলা রাখছে। সেটা সকাল ৯ টা, দুপুর ১২ টা ও বিকাল ৫ টা। তারপর কাঁটাতারের গেট গুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। সীমান্তে দিনরাত পালা করে বিএসএফকে পাহাড়া দিতে দেখা যায় কিন্তু বিজিবিকে সেই রকম ভাবে পাহাড়া দিতে দেখা যায়না। মোগলহাট সীমান্ত গ্রামের বাসিন্ধা ফারুক জানান, তার বাড়ির পাশে ১৫ বিজিবি’র বিওপি ক্যাম্প। তারা ক্যাম্প হতে বাহিরে তেমন বেরুয়না। সকাল ১০ টায়, দুপুর এক টায় ও সন্ধ্যায় দুই/ চার জনকে ২০/৩০ মিনিট একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ক্যাম্পের আশেপাশে ঘুরতে দেখা যায়। পরে ক্যাম্পে অবস্থান করে। কিন্তু বিএসএস সার্বক্ষণিক টহল সকলের নজর কাড়ে। সীমান্তের একটি বাঁশ ঝাঁড় দেখিয়ে বলেন, ওই দেখেন সেখানে দাঁড়িয়ে বিএসএফ পাহাড়া দিচ্ছে। কিন্তু আপনি প্রায় জ্জ ঘন্টা ধরে সীমান্তে গ্রামে কই আপনি আমি বিজিবিকে তো চোখে পড়লনা। তারা সীমান্তের চেয়ে রাস্তায় বাজারে রাস্তার মোড়ে পেনিক সৃষ্টি করতে পুলিশিং করতে বেশি ভালবাসে। নতুন কাইকে দেখলে হয়রানি করে। নানা প্রশ্নবানে জড়জড়িত করে। তাই গ্রামে আতœীয় স্বজনরা বেড়াতে আসতে চায়না। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, কারা মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, গরু, চোরাচালন করে বেছে। কে না জানে। শুধু আইনশৃংখলাবাহিনী ও বিজিবি জানেনা। গ্রামমের মানুষ সহায়তা করলে উল্টো চোরাচালানিরা গ্রামের নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়িদেও সাথে বিজিবি’র সর্ম্পক চোরে চোরে মামাত ভাই। তিনি বলেন, জ্জ বছর আগে মাদক পাচার বন্ধ চওড়াটারী গ্রামের এক প্রতিবাদি যুবক উদ্যোগ নিয়ে ছিল। তাঁকে বিজিবি’র সদস্যরা মোগলহাট বাজার হতে সন্ধ্যায় ধরে নিয়ে এসে বন্দুকের রাইফেলের বাটদিয়ে ও বেনোট চার্জ কওে হত্যা করে। ঘটনা ভিন্নখাতে ফেলতে ওই যুবকে নৌকা কওে নিয়ে গিয়ে ধরলা নদীর মাঝ নদীতে ফেলে দিয়ে এসে ছিল। পওে লাশ ভেসে উঠলে গ্রামের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনা দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। কয়েকদিন পর থেকে যায়। এই ঘটনায় মামলা হয়। থকন হতে সাধারণ মানুষ ভয়ে বিজিবি’র বিরুদ্ধে কিছু বলেনা। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়িগণ স্থানীয় বিওপি ক্যাম্প গুলোতে দালালের মাধ্যমে গরুর মাংস, মুরগি, মাছ পাঠায়। চোরাকারবারিরা মাসোহারা করে তাদের অবৈধ ব্যবসা - বানিজ্য পরিচালনা করে আসছে। ভারতীয় মাফিয়া সিন্ডিকেটের মূলহোতা আমিনুল ইসলাম পিঁপড়া, শহীদু ( ঝোলঝোলা) ভারতীয় নাগরিক। তারা জন্ম সূত্রে ভারতীয়। ভারতে রয়েছে বিশাল অট্রোলিকা। এরা মোগলহাট ইউনিয়নে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে। এমন কি ন্যাশনাল আইপি কার্ড সংগ্রহ করেছে। কয়েক বছর আগে ভারতীয় ফোঁকড়া বাবু অত্যাধুনিক রিবালবার ও কয়েক রাউন্ড গুলিসহ মোগলহাটের দুড়াকুটি বাজারে এসে টহল পুলিশের হাতে আটক হয়। সে র্দীঘ দিন লালমনিরহাটের কারাগারে হাজতে ছিল। পরে তাকে মোটা অস্কের অর্থের বিনিময়ে মোগলহাট ইউনিয়নের নাগরিক পরিচয়ে আইডি কার্ড বানিয়ে জামিনে মুক্ত করা হয়। তখন হতে সে ভারতে পালিয়ে আছে। এই অস্ত্রধারী ফঁকড়া বাবু আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ি। তার মোগলহাটে নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাঁকে প্রায় মোগলহাট সীমান্তের ঢিঁলছঁেড়ে মারার দুরুত্বে ভারতের নগদটারিতে দেখা যায়। সে অবাধে মোগলহাট আসে যায় বলে জানা গেছে। এই ফঁকড়া বাবু সীমান্ত ব্যবসা করে এখন ভারতে শতকোটি টাকার মালিক। তার পরিবহন ব্যবসা রয়েছে। সে কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িতে চলা ফেরা করে। এভারে সে ভারতের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্তিতা করে ছিল। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই জেলার সাথে প্রায় ২৮৫ কিঃমিঃ রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। এই সীমান্তের প্রায় ৭৪/৭৫ কিঃমিঃ রয়েছে তারকাটা বিহীন সীমান্ত। রয়েছে ধরলা, বুড়িতিস্তা, সতী, রতœাই, মালদাসহ বেশ কয়েকটি শাখা নদীর চর। ভারত বাংলাদেশের পাশাপাশি গ্রাম গুলোতে দুই দেশের মানুষের অবাধে যাতায়াত রয়েছে। করোনাও তাদেও যাতায়াত থাকাতে পারেনি। বরং বেড়েছে। করোনার সুয়োগে নারীপাচার, গরু পাচার , অস্ত্রপাশা, মাদক পাচার বেড়েছে। ওদিকে কাটাতারের বেড়ার বাহিওে থাকা গ্রামের মানুষদের বিএসএফ মূল ভূখন্ডে যাতাযাতে প্রতিবোন্ধকতা সৃষ্টি করায় তারা এখন অবাধে বাংলাদেশর হাটবাজাওে এসে নিত্যপ্রযোজনীয় সহাইপাতি ক্রয় বিক্রিয় করছে। এমন কি মোগলহাট, কুলাঘাট, দূর্গাপুর , দহগ্রাম সীমান্তে জ্বর সর্দি গলা ব্যাথা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক গণ চিকিৎসা নিতে এসে ঔষধপত্র কিনে নিয়ে গেছে। এমন খবর প্রচার আছে। এমন একজন অসুস্থ রোগী কয়েকদিন হলো মারা গেছে। এই খবর সীমান্ত গ্রাম গুলোতে চড়িয়ে পড়েছে। কালীগঞ্জের গোড়ল ইউপির চেয়ারম্যান শিক্ষিক মোঃ মাইদুল ইসলাম, মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান ও দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেক প্রামাণিক জানান, সীমান্তের হাটবাজারে ভারতীয় নাগরিক আসা যাওয়া র্দীঘদিনের। এটা প্রতিরোধে তেমন কোন কার্যকর ব্যবসা চোখে পড়েনা। আমরা আমাদেও সীমাবন্ধতার মধ্যে গ্রামপুলিশ বা চোকিদার দিয়ে কোন কোন সময় চেষ্টা করি। যদি খবর পাই কারো বাড়িতে ভারতীয়রা এসেছে তাহলে পুলিশে বা বিজিবিকে খবর দেই। কোন সময় গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে আটক করা হয়। কুলাঘট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিস আলী জানান, পাশেই বালারহাট সীমান্ত ধরলা নদীর উপর দ্বিতীয় শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণ হওয়ায় এই সেতুর ওপর দিয়ে অবাধে দুই থানার মানুষ যাতায়াত করছে। লোকমুখে শুনি এখানে ধরলা নদীর চর থাকায় দুই দেশের সীমান্ত প্রায় উম্মুক্ত। এটা মাদকের বৃহত্তম রুট। ভারতীয় বাংলাদেশী উভয় দেশের মানুষ অবৈধ যাতায়ত তো রয়েছে। সীমান্ত পাহাড়ায় নানা সীমাবদ্ধতা ও দূর্বলতা রয়েছে। করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধ করতে হলে সীমান্তে বিজিবি’র পাহাড়া জোরদার করতে হবে। সার্বক্ষনিখ টহল থাকতে হবে। লালমনিরহাট জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মূলন্দ রায় জানান, লালমনিরহাটে করোনা শনাক্তের হার হঠাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ এসে পৌচ্ছে। যা দুই মাসে আগে ছিল ১০-১১ শতাংশ ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাওয়া রির্পোট অনুয়ায়ী জেলায় নতুন করোনা পজিটিভ কেস - ৭ (সদর - ৫,আদিতমারী -২)। জেলায় এই পর্যন্ত রোগী শনাক্ত ১১৫৯ জন, সুস্থ ১০৬০ (সদর উপজেলার ১জন সুস্থ সহ)। এই পর্যন্ত মারা গেছে ১৭ জন। নমুনা কালেকশন- ৬৬০০ জনের , ফলাফল পাওয়া গেছে ৬৪৩৬ জনের । গত ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টাইন – ৩৫ জন, বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছে ৪২০ জন (সদর -২৭৫, হাতিবান্ধা -২০,আদিতমারী - ১১৫, পাটগ্রাম -১০) । এই পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন – ৬০৩৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে -৭ জন, বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন - ৮২ জন (হোম- ৬৬ প্রাতিষ্ঠানিক - ১৬) । এই পর্যন্ত আইসোলেশন ১১৫৯ জন।
×