ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মূত্রনালী ক্যান্সারের শল্যচিকিৎসা

প্রকাশিত: ২১:২৮, ৮ জুন ২০২১

মূত্রনালী ক্যান্সারের শল্যচিকিৎসা

মূত্রনালীতে ক্যান্সার কদাচিৎ হয়। শুরুতেই শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে এ রোগ নিরাময় সম্ভব। ষাটোর্ধ্ব নারীদের এ ক্যান্সার বেশি দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময় স্থানীয় জায়গায় বিস্তত অবস্থায় ধরা পড়ে। রোগের কারণ : কারণ অজানা। প্রাথমিক ঝুঁকিপূর্ণ নানা অঙ্গের মধ্যে মূত্রথলির ক্যান্সার, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ও যৌন রোগীদের এ রোগ হয় বেশি। তা ছাড়া ষাটোর্ধ্ব বয়সে দীর্ঘদিন ধরে মূত্রনালীর প্রদাহ ও ধূমপানের কারণেও এ রোগ হতে পারে। লক্ষণ : প্রাথমিক অবস্থায় কোন বোঝা যায় না। রোগটি বাড়তে থাকলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন- মূত্রের মধ্যে রক্ত যাওয়া, মূত্রের ধারা চিকন হওয়া ও পরিমাণ কমে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রস্রাব অজান্তে ঝরে যাওয়া, প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া, ঘন ঘন প্রদাহ, মূত্রনালী থেকে রক্ত, রস ঝরা ও ফুলে যাওয়া। চিকিৎসা পদ্ধতি : রোগের অবস্থা ও মূত্রনালীর কোন অংশ আক্রান্তের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীর বয়স, লিঙ্গ, রোগের বিস্তৃৃতির ওপরও অনেকটা নির্ভরশীল। চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি অন্যতম। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে সার্জারিই নির্ভরশীল চিকিৎসা। দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শল্যচিকিৎসা : রোগের অবস্থার ওপর নির্ভর করে শল্যচিকিৎসা। থেরাপি দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোগীর ক্ষেত্রে কারও মূত্রথলিসহ মূত্রনালি ফেলে দিতে হয়। কারও কারও পুরুষাঙ্গের কিছু অংশ ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কারও কারও পুরুষাঙ্গ ও মূত্রনালী অপসারণ করার প্রয়োজন হয়। অবস্থাভেদে কারও লসিকাগ্রন্থিও ফেলে দিতে হয়। নারীর মূত্রথলি, মূত্রনালী, যৌনদ্বার ফেলে দিতে হয়। মূত্রথলি ফেলে দিলে বিকল্প পথে প্রস্রাব নির্গমনের ব্যবস্থা করতে হয়। শল্যচিকিৎসা কিছু জটিলতাও তৈরি করতে পারে। যেমন- অবসকরণজনিত জটিলতা, খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লাগা, মূত্র ঝরা, রোগ সংক্রমিত হওয়া, মৃত্যুবরণ (১-২ শতাংশ)। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে, পচন হতে পারে, মূত্রনালী সরু হতে পারে। প্রস্তুতকৃত বিকল্প পথ ছাড়া অন্য পথ দিয়ে প্রস্রাব ঝরতে পারে। রেডিয়েশন : শরীরের বাইরে থেকে এবং রেডিও এ্যাকটিভ বড়ি বা পিলেট ক্যান্সারের জায়গায় বসিয়ে দুভাবে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। সপ্তাহে পাঁচ দিন হিসেবে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত দিতে হয়। এর প্রভাবে সুস্থ কোষে আঘাতজনিত কারণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন- অন্য জায়গা দিয়ে প্রস্রাব ঝরা, ত্বক জ্বলে যাওয়া, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, মূত্রথলির প্রদাহ, খাওয়ার অরুচি, চিকন ধারায় প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। কেমোথেরাপি : ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে এ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ওষুধ ব্যবহার করে আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা হয়। ওষুধ শিরায় দিতে হয়। দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার চিকিৎসায় এ থেরাপি প্রযোজ্য। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া : কেমোথেরাপির ফলে রক্তশূন্যতা, বমি হওয়া, রুচি কমে যাওয়া, মাথার চুল পড়ে যাওয়া, মুখে ঘা হওয়া ও রোগ সংক্রমিত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে এতগুলোয় রোগী ভয় না পেয়ে মনোবল শক্ত করে নিয়মিত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। অধ্যপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা লেখক : টিউমার ও ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ০১৮১৯২৩৯০১৭; ০১৬৮৭৮৭৫৯৯৭
×