ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৫ মে ২০২১

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২২তম দিবস। এ মাসের সঙ্গে যাকাত প্রদানের একটি ঐতিহাসিক ও বরকতময় সূত্র রয়েছে। কুরআন মজিদে মানুষের আয়ের তুলনায় তার ব্যয়ের খাতের প্রতি বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। কেননা বিভিন্ন মাল একত্রিত করা ক্ষমতাসীনদের জন্য সহজ ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবত কঠিন হলো তা সঠিক খাতে ব্যয় করা এবং তাদের দেয়া যারা প্রকৃতই হকদার। এ কারণে কুরআন মজিদে যাকাত আদায়ের খাত নির্দিষ্টকরণ কোন শাসকের মত বা ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। সুরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে যাকাত প্রদানের জন্য ৮টি খাতকে সুনির্ধারিত করে দেয়া হয়। ইরশাদ হচ্ছে: এই সাদকাসমূহ মূলত ফকির ও মিসকিনদের জন্য আর তাদের জন্য যারা এতদসংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং তাদের জন্য যাদের মন জয় করা হলো উদ্দেশ্য। সেই সাথে এটি গলদাসের মুক্তিদানে ও ঋণ ভারাক্রান্তদের সাহায্যে আল্লাহর পথে ও পথিক মোসাফিরদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ...।’ উল্লেখ্য, ১. ফকির বলতে ঐ সকল লোককে বুঝায়, যাদের কিছু না কিছু সম্পদ আছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। তাদের অন্যের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হয়। জীবিকা অর্জনে অক্ষম ব্যক্তি, পঙ্গু, এতিম শিশু, বিধবা, স্বাস্থ্যহীন, দুর্বল, বেকার এবং যারা দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এমন লোককে সাময়িকভাবে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যেতে পারে। ২. মিসকিন বলতে ঐ সব সম্ভ্রান্ত দরিদ্রলোককে বুঝায় যাদের সম্পদ বলতে কিছুই নেই এবং যারা ভীষণ অভাবগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও সম্মানের ভয়ে কারও কাছে হাত পাতে না। হাদিসে মিসকিনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন মোতাবেক সম্পদ পায় না অথচ আত্মসম্মানের ভয়ে সে এমনভাবে চলে যে, তাকে অভাবী বলে বুঝাও যায় না, যাতে লোকেরা তাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারে।’ (বুখারী ও মুসলিম)। ৩. যাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ: যারা যাকাত আদায় করে, রক্ষণাবেক্ষণ করে, বণ্টন করে ও হিসাব পত্র রাখে তারা আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন হলেও যাকাত থেকে তাদের বেতন দেয়া যাবে। ৪. মন জয় করার উদ্দেশ্য : ইসলামী সামাজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যাদের মন জয় করা আবশ্যক হয়েছিল তাদের মুআল্লাফাতুল কুলুব বলা হয়েছিল, এসব লোক কাফির বা দুর্বল চিত্তের মুসলমান উভয় প্রকারই ছিল। ইসলামের প্রথমিক যুগে এ জাতীয় লোককে যাকাত দেয়া হতো। তারপর ইসলাম শক্তিশালী হওয়ার পর এ নিয়ম চিরদিনের জন্য রহিত করে দেয়া হয়। ৫. যে গোলাম তার মনিবের সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, এ পরিমাণ অর্থ দিলে তাকে আযাদ করে দেওয়া হবে, এমন গোলামকে বলে মুকাতাব। আযাদীর মূল্য পরিশোধের জন্য মুকাতাবকে যাকাত দেয়া যেতে পারে। ৬. যারা ঋণের বোঝায় পিষ্ট, নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম, তাদের যাকাত দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করা যাবে। ৭. ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ। জিহাদ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসার এবং কুফরি ব্যবস্থাকে দূরীভূত করে ইসলামী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সকল প্রচেষ্টাই জিহাদ। সে চেষ্টা মুখের দ্বারা, কলমের দ্বারা, তরবারি দ্বারা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হতে পারে। ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত এরূপ ব্যক্তিকে যাকাত থেকে সাহায্য করা যাবে। ৮. অসহায় প্রবাসী পথিক: কোন ব্যক্তি সফরে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়লে বা যাত্রাপথে আর্থিক বিপদে পড়লে সাময়িকভাবে তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে।
×