ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৮ এপ্রিল ২০২১

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

নদী স্রোত আবহমান বাংলায় যাতায়াতের বিশেষ ব্যবস্থায় যাত্রী পারাপার এক অন্যতম কর্মযোগ। স্টিমার, লঞ্চ, নৌকায় পাড়ি দেয়া যাত্রী সাধারণের জীবনও থাকে বিপন্ন প্রায়। নিরাপত্তার বলয় সেভাবে সুরক্ষিতও থাকে না। তার মাসুল গুনতে হয় অসহায় যাত্রীদের এবং সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় স্বজনদের আর্তনাদ ও আহাজারি। সম্প্রতি শীতলক্ষ্যায় ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনায় যে মর্মান্তিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তাতে এখন অবধি ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা গেলেও সবার খোঁজ মেলেনি। লাশের সারির বিপন্ন দৃশ্যে ঘটনাস্থলের পরিবেশ-পরিস্থিতি সত্যিই ছিল দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক। পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়। একদিকে লাশের স্তূপ অন্যদিকে পরিবার-পরিজনের আর্তচিৎকার ও কান্নার রোলে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়। গত রবিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ‘এমভি সাবিত আল হাসান’ লঞ্চটি। লঞ্চটি শহরের কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় কার্গো জাহাজ ‘এসকেএল-৩’। তাৎক্ষণিকভাবে লঞ্চটি বেসামাল হয়ে শীতলক্ষ্যায় ডুবে যায়। মধ্যরাতে ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা লঞ্চটির উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হয়। জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। সর্বনাশা কার্গো জাহাজটি পালিয়ে গেলে সেটা ধরা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারেও জোর তদন্ত চলছে। দুর্ঘটনা ঘটার ব্যাপারটিও করুণ এবং হৃদয়বিদারক। প্রথমে কার্গো জাহাজ লঞ্চটিকে ধাক্কা দিলে সেটা হেলে কাত হয়ে যায়। পরের দৃশ্যটি ভয়াবহ- হেলে পড়া লঞ্চটির ওপর দিয়েই কার্গো জাহাজটি দ্রুত চলে যায়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, কার্গো জাহাজ ‘এসকেএল-৩কে শনাক্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে এক নির্মীয়মান সেতুর কারণে চলাচলের পথটি সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। সেখানে সতর্ক সাবধানতায় জাহাজ-লঞ্চসহ যাত্রীবাহী নৌকাকে পার হতে হয় ধীরে-সুস্থে। তড়িঘড়ি করে পার হওয়ার কারণেই বোধকরি এমন দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা এমনটাই আশঙ্কা করছেন। গতি নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি হওয়ার কারণেই এই ভয়াবহ লঞ্চডুবি। সব ধরনের পারাপারে নৌপথের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করার দুঃখজনক চিত্র আগেও প্রকাশ পেয়েছে- এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তার ওপর নৌযানের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও মেয়াদোত্তীর্ণের ব্যাপারটিকেও আমলে নেয়া একান্ত জরুরী। নৌপথের অসংখ্য যাত্রীর জীবনমালকে জিম্মি করে যে মাত্রায় বেপরোয়াভাবে নৌযানগুলো যাত্রা করে তাও এক প্রকার অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার আবর্তেই নিপতিত। এমন অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে আরও সতর্ক সাবধানতায় নৌযানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তার ওপর বিশেষ নজরদারিতে আনতে হবে জাহাজ আর লঞ্চের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনের চালকের প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক দক্ষতা এবং সক্ষমতাকে। অদক্ষ চালক এবং ত্রুটিপূর্ণ নৌযান কখনও নদীপথে চলাচলের উপযুক্ত হতে পারে না। সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করাও বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তার পরেও যাদের মূল্যবান জীবন এমন অসতর্কতার বলি হলো, তার দাম কখনও মেটানো যাবে না। নিঃস্ব পরিবারগুলোর বিপন্ন জীবনও টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। ভবিষ্যতে নৌপথে আরও কঠোর নজরদারি আর সচেতন দায়বদ্ধতার পরিচয় আশা করছে সাধারণ মানুষ।
×