ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিসংখ্যান দিবসের অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী পদক্ষেপে দেশ আজ মর্যাদাশীল রাষ্ট্র

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী পদক্ষেপে দেশ আজ মর্যাদাশীল রাষ্ট্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঠিক ও প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন পরিসংখ্যান প্রস্তুতের জন্য নিজস্ব দেশীয় পদ্ধতি (মেথড) উদ্ভাবনের জন্য পরিসংখ্যানবিদ ও বিবিএসের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক। একই সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে সংগৃহীত তথ্যের পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের জন্যও আহ্বান জানিয়ে বলেন টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন সঠিক ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান। শনিবার সকালে ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতির সভাপতি ড. পিকে মোঃ মতিউর রহমান ও গেস্ট অব অনার হিসেবে ইউনিসেফ বাংলাদেশ প্রতিনিধি টোমো হোযুমি অনলাইনে সংযুক্ত হন। সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন সঠিক ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে যে কোন ধরনের ইতিবাচক কৌশল গ্রহণে সময়োপযোগী ও গুণগত মানসম্পন্ন পরিসংখ্যানই কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। কিন্তু বিবিএসের জন্য সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা অনেক কঠিন। নির্ভরযোগ্য তথ্য কিভাবে সংগ্রহ করা যায় সে উপায় পরিসংখ্যানবিদ ও বিবিএসের কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ইউরোপ, আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্বে যে পদ্ধতিতে (মেথড) তথ্য সংগ্রহ করে, তা আমাদের দেশে কতটুকু কার্যকর তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী, জনগণের শিক্ষা, সামাজিক ও মানসিক অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে কিভাবে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা যায়Ñ সে রকম নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। একই সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে সংগৃহীত তথ্যের পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে দেশে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস’ পালিত হয়েছে। পরিসংখ্যানের গুরুত্বকে সবার কাছে তুলে ধরতেই বিবিএসের এ আয়োজন। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান, টেকসই উন্নয়নের উপাদান’। এখন থেকে প্রতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে ‘জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস’। ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের মানুষ এখনও তত বেশি শিক্ষিত ও সচেতন নয়। মানুষ যত বেশি সচেতন হবে তত বেশি সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। বর্তমান বাস্তবতায় সঠিক তথ্য বের করতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি সময়ের পরিক্রমায় জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো আরও উন্নত হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত পাচ্ছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে। এটি আমাদের জন্য গর্ব ও অহঙ্কারের। হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা বাংলাদেশে এসে বলেছিল, বাংলাদেশ হয়ত স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকবে না। স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকলেও চিরদিন বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে। অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছিল, বাংলাদেশ যদি উন্নয়ন করে তাহলে পৃথিবীর সব দেশই উন্নয়ন করবে। কিন্তু আজকে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে মিথ্যা প্রমাণ করে সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। আজকে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল তারাই আবার পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলেছিল। তারা বাংলাদেশের মুখে কালিমালেপন করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার। আজকে সেই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বাস্তবতা। কানাডিয়ান আদালত তিন বছর বিচার করে তারা বলেছে পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশে কোন রকম দুর্নীতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সেই সিদ্ধান্ত এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলেই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে আজ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রী ড. রাজ্জাক আরও বলেন, কৃষি খাতে সঠিক তথ্য খুবই দরকার। বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বছরে কতটুকু উৎপাদিত হচ্ছে, চাহিদা কতটুকু বা উৎপাদন বছরে কতটুকু বাড়ছে- এসবের প্রকৃত ও সঠিক তথ্য দরকার। সেটি করতে পারলে ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়ন অনেক ভাল ও সহজতর হবে। অন্যদিকে, দেশে দারিদ্র্যের হারসহ অন্যান্য বিষয় ও উন্নয়নের গতি প্রবৃদ্ধি নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সম্প্রতি আলু ও ধান-চালের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী আরও বলেন, আমার মনে হয়, দেশে এগুলোর আবাদ, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার (একর প্রতি) যে পরিসংখ্যান রয়েছে তা সঠিক নয়। পরিসংখ্যানের গড়মিলের কারণেই আলুর ও ধান-চালের দাম বেশি ছিল। কাজেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের উপায় পরিসংখ্যানবিদদের বের করতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতির সভাপতি ড. পিকে মোঃ মতিউর রহমান বলেন, দেশে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহে অনেক বাধা রয়েছে। সঠিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সামাজিক, মানসিক ও পারিবারিকসহ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেজন্য, তথ্য প্রদানকারীর সচেতনতা সবচেয়ে জরুরী। সভায় জানানো হয়, বিবিএস জরিপের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ হবে সম্পূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বা ই-সেন্সাস। কম্পিউটার এ্যাসিস্টেড পার্সোনাল ইন্টারভিউ (সিএপিআই) ব্যবহৃত হবে এই সেন্সাসে।
×