ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ১০ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শিল্পকলায় ১০ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষ ও মাঘকে সঙ্গী করে বিদায় নিয়েছে শীতকাল। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় শীতের বিদায়ঘণ্টা বাজলেও রয়ে গেছে উৎসবের আমেজটি। সেই আবহের দেখা মিললো বসন্ত বিকেলে। সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তরে বিরাজ করছিল ভিন্ন এক আমেজ। মঞ্চ থেকে ভেসে বেড়াচ্ছিল লোকসঙ্গীতের সুর। অন্যদিকে লোকসঙ্গীতের সেই সুরকে সঙ্গী করে এ দোকান থেকে সে দোকানে ঘুরছিলেন দর্শনার্থীরা। চেখে দেখছিলেন নানা রকমের পিঠা। পিঠাশিল্পীরাও ব্যস্ত ছিলেন তাদের রসনা মেটাতে। তৈরি করছিলেন রকমারি স্বাদের পিঠা। হৃদয়হরণ থেকে ভাপা কিংবা মালপোয়া পিঠার স্বাদ নিয়ে নাগরিক জীবনের মাঝে খুঁজে ফিরছিলেন ফেলে আসা গ্রামীণ জীবনকে। এভাবেই শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার বারতায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো চতুর্দশতম জাতীয় পিঠা উৎসব। নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে দশ দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদ্্যাপন পরিষদ। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসবে সহায়তা দিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। বসন্ত বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির কফি হাউসের সামনে উন্মুক্ত মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান ও নৃত্যগুরু আমানুল হক। উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিষদের সভাপতি ম. হামিদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির সচিব নওসাদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ্ আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণসহ নানা কারণে এখন আর গ্রামেগঞ্জে সেভাবে পিঠা উৎসব হয় না। সেই উৎসবটি এখন শহরের চার দেয়ালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা ভাল দিক। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের পিঠাপুলির সেই ঘ্রাণ ও স্বাদ নিতে পারছি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, করোনার কারণে সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আমরা করোনাকে প্রায় জয় করার দারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে জন্য আমাদের দেশ বিশ্বের সর্বনিম্ন করোনা আক্রান্ত দেশে, সর্বনিম্ন মৃত্যুহারের দেশ। আজ যেখানে বিশ্বের ১৩১টিরও বেশি দেশ করোনার টিকা পায়নি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কারণেই আমরা করোনার টিকা গ্রহণ করতে পারছি। আমি টিকা নিয়েছি, এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাইনি। আপনারাও টিকা নিন, দেশকে করোনা মুক্ত করুন। আতাউর রহমান বলেন, কথায় বলে ‘জীবন চর্চা নয়, জীবন চর্যা’। আমাদের এই জীবন চর্যার এক বিরাট উৎসব হলো পিঠা উৎসব। এটা আমাদের জাতির একটা পরিচয়ও বটে। পৃথিবীর অনেক দেশে পিঠা-পায়েশ আছে। উৎসবও হয়। কিন্তু কোথাও আমাদের দেশের মতো এত বাহারী পিঠা-পুলি কিংবা পায়েশ নেই। এই মহামারীর দিনেও এই পিঠা উৎসব হচ্ছে এটা আমার কাছে খুব আনন্দের। আমানুল হক বলেন, পিঠা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটা অংশ। আমাদের এই ঐতিহ্যকে যদি তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে না পারি তাহলে আমরা পিছিয়ে যাব। সুতরাং এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরা জরুরী। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে এই পিঠা উৎসব করতে পেরে আমরা আনন্দিত। করোনা সংক্রমণ প্রতিকারের যে নির্দেশনা আছে, আমরা সকলে সেই নির্দেশনা মেনে এই পিঠা উৎসবে আসব। এদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অনন্য উপাদান পিঠার স্বাদ গ্রহণ করব। এবারের উৎসবে উৎসবে প্রায় ৫০টি স্টলে প্রায় দুই শ’ পদের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের পিঠাশিল্পীরা। এসব স্টলে ঠাঁই পেয়েছে বিচিত্র স্বাদ ও নক্সার রকমারি পিঠা। এগুলো মধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই, বিবিখানা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, সেমাই পিঠা, নক্সি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ নানা বাহারি নামের পিঠা। আগামী ৫ মার্চ শেষ হবে এ উৎসব। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে পিঠা খাওয়ার এ আয়োজন। বাহারি পিঠার সঙ্গে উৎসব আঙিনায় প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তারই অংশ হিসেবে উদ্বোধনী আয়োজন শেষে উৎসব মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা এ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।
×