ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যৌনতার ফাঁদে বাড়ছে অপরাধ

প্রকাশিত: ২১:২০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

যৌনতার ফাঁদে বাড়ছে অপরাধ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খুন, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি নতুন নতুন কৌশলে সাইবার অপরাধও বেড়েছে। চলতি বছরের গত প্রায় দুই মাসে রাজশাহী মহানগর ও জেলায় অন্তত ১১টি হত্যা মামলা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের এ সংক্রান্ত মামলার মধ্যে ৩টিই নারীঘটিত। এদিকে একই মাসে রাজশাহীজুড়ে মোট ১২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩১টি। জেলা প্রশাসনের দেয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রাজশাহী জেলায় জানুয়ারিতে মোট চিহ্নিত অপরাধ সংঘটিত হয় ৭৪৫টি। সংখ্যার হিসেবে বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এসব অপরাধ দমনে প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় হলেও অপরাধীরা ধরন পাল্টাচ্ছে নতুন নতুন কৌশলে। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জানান, জানুয়ারি মাসে রাজশাহী জেলার ৬টি থানায় মোট ৯টি হত্যা মামলা হয়েছে। আর মহানগর পুলিশের মুখপাত্র রুহুল কুদ্দস জানান, রাজশাহী মহানগরীর দুইটি থানা এলাকায় পৃথক ঘটনায় দুইটি হত্যামামলা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বাইরে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এখন রাজশাহী অঞ্চলে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী নগর সম্প্রসারিত হয়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন অভিজাত আবাসিক এলাকা। চাকচিক্যে ভরা বহুতল ভবনে বেড়েছে জনপরিসর। অভিজাত সেসব কিছু এলাকাতেই এখন নারী দিয়ে পাতা হচ্ছে যৌনতার ফাঁদ। এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন নামীদামী ব্যক্তিরা। ফাঁদে গিয়ে হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। তারপরই বিষয়গুলো জানতে পারছে পুলিশ। অনেকে পুলিশকে জানাচ্ছেনও না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক শ্রেণীর সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ছাড়াও বিধিবদ্ধ সরকারী বিভিন্ন দফতরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ টাকা কামাই করছেন এ শহরে। এসব সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাদের কারও কারও পরিবার থাকেন ঢাকায়। একাকীত্ব কাটাতে এসব কর্মকর্তা নারীসঙ্গ ভোগের নেশায় ছোটেন। ঠিকাদার, অনুগত কর্মচারী, দালালেরা কাজ, সুবিধা ও নগদ টাকার লোভে তাদের চিনিয়ে দেন নগরীর বিভিন্ন মধুচক্র। মোটা টাকার বিনিময়ে তারা উপভোগ করতে যান সুন্দরী নারীসঙ্গ ও নারীদেহ। আর তখনই পড়েন ফাঁদে। নগর উন্নয়ন সংস্থার একজন বড় কর্মকর্তা বসবাস করেন রাজশাহীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকায়। পরিবার থাকলেও এই কর্মকর্তা নারীসঙ্গ ভোগে পটু। অঢেল অবৈধ টাকার মালিক। এ কর্মকর্তা নগরীর পদ্মা আবাসিকের একটি মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন। সম্প্রতি সেখানে নারীসহ এ কর্মকর্তা আটকে পড়েন ফাঁদচক্রে। ফাঁদচক্রের হাতে ধরা পড়ে তার কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা টাকা। তবে এ কর্মকর্তা মান-সম্মানের ভয়ে পুলিশকে অভিযোগ দেননি। সদ্য বদলি হওয়া এক রেল কর্মকর্তাও নিয়মিত রাজশাহীতে একাধিক মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন। মধুচক্রের দালালদের তার অফিসেও দেখা যেত। অফিসের লোকজনের মধ্যেও তার যৌন উন্মত্ততা ও মাদকাসক্তি নিয়েও কানাঘুষা ছিল। তিনি অফিস করতেন রাতে। তার সরকারী গাড়িতে প্রায়ই অল্পবয়সী সুন্দরী তরুণীদের দেখা যেত। আবাসিক ভবনেও তিনি প্রায়ই সরকারী গাড়িতে করে নারী নিয়ে ঢুকতেন বলে জানা গেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ কর্মকর্তার বেপরোয়া জীবনাচারের বিষয়টি অবগত হয়ে সম্প্রতি তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে। সম্প্রতি নগরীর উপশহরের একটি বাসায় রেলের একজন কর্মকর্তাকে নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিওচিত্র ধারণ, বিকাশে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে এক যুবক ও দুই তরুণীকে গ্রেফতার করে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ। তবে ভুক্তভোগী রেল কর্মকর্তা মধুচক্র থেকে ছাড়া পেয়েই পুলিশের কাছে যান। এ নিয়ে থানায় মামলা করেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর অভিজাত আবাসিক উপশহর, পদ্মা আবাসিক, ভদ্রা, কলাবাগান, বিলসিমলা, নগরীর উপকণ্ঠ বায়া, নওদাপাড়া, আমচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে মধুচক্রের ঠিকানা। আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এসব এসব মধুকুঞ্জ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দরী তরুণীদের রাজশাহীতে এনে আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে মধুচক্র গড়ে তুলেছে একাধিক চক্র। জানা গেছে, কিছুদিন আগে একজন সাব- রেজিস্ট্রার নগরীর একটি মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন।
×