ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

রাখাইন ও বাংলা ভাষার সম্মিলনে স্থাপনা শিল্প

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাখাইন ও বাংলা ভাষার সম্মিলনে স্থাপনা শিল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বীপটিতে ভেসে আসে সমুদ্রের গর্জন। সেই গর্জনের সঙ্গে বিরাজ করে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা। অপরদিকে ধরা দেয় বহমান বাকখালী নদী। আর নিসর্গের এমন বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে পাহাড়ীয়া দ্বীপের নাম মহেশখালী। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের এই দ্বীপে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে রাখাইন সম্প্রদায়। মহেশখালীর রাখা অধ্যুষিত এই অঞ্চলের একটি পাড়ার নাম ছেনসিরোঅ। আর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে এই পাড়াতে বাংলার সঙ্গে সম্মিলন ঘটল রাখাইন ভাষার। একুশের প্রথম প্রহরে এখানে দৃশ্যমান হলো উভয় ভাষার সংযোগ গড়া অদ্ভুত সুন্দর এক স্থাপনাশিল্প। বাকখালী নদীপাড়ে রাতের আলোয় বাঁশের কাঠামোয় গড়া শিল্পকর্মটির এক পাশে লুণ্ঠনের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে ‘আমরি বাংলা ভাষা’ শিরোনামের শব্দগুচ্ছ। স্থাপনার অপর পাশে এই বাংলা পঙ্্ক্তিমালা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে রাখাইন ভাষায়। একইভাবেই স্থাপনার মাঝ বরাবর ওপর ও নিচের দিকে বাংলা ও রাখাইন ভাষায় মেলে ধরা হয় ‘মা’ নামের মধুর শব্দটি। মহেশখালীর প্রাকৃতিক পরিবেশে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে রাখাইন সংস্কৃতির ভাববিনিময়ের প্রতিচ্ছবিময় স্থাপনাটি নির্মাণ করেছেন চারুশিল্পী ও শিক্ষক বিশ্বজিৎ গোস্বামী। বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নির্মাণ করেন ‘মা মাটি মানুষ স্বদেশ ভাষা প্রকৃতি’ শিরোনামের স্থাপনা শিল্পটি। এ বিষয়ে বিশ্বজিৎ গোস্বামী জনকণ্ঠকে বলেন, স্বদেশের মাটিতে সংস্কৃতির নতুন আবহ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজটি করেছি। এই দেশের অঞ্চলভেদে সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবনযাত্রার মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। জাতিসত্তার সেই ভিন্নতার সম্মিলন ঘটিয়েছি শিল্পের আশ্রয়ে। বাংলা ভাষার সঙ্গে রাখাইন ভাষার সৌন্দর্যকে এক করে গড়েছি এই শিল্পকর্ম। এর মাধ্যমে উভয় সংস্কৃতির মধ্যে ঘটেছে বিনিময়। এই দেশমাতৃকা আগলে রাখে তার নানা বর্ণের সন্তানকে। যেখানে মাটি ও জলের মাঝে বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে বেড়ে ওঠে মানুষ। সেই বৈচিত্র্যের সুবাদে স্বকীয় হয় সেই মানুষগুলোর সংস্কৃতি ও ভাষা। সেই প্রেক্ষাপটে শিল্পকর্মের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের দুটি পৃথক সংস্কৃতির মাঝে সম্পর্ক গড়েছি। পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি এই স্থাপনা শিল্পকে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই শুরু হয় দুই শ’ ফিট দৈর্ঘ্যরে এই ইন্সটলেশন প্রকল্পের কাজ। বাঁশ চিড়ে গড়া হয়েছে শিল্পকর্মটির কাঠামো। তার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে সহস্রাধিক রঙিন ফানুস। রাতের আঁধারে ঝলকানি দিয়ে জ্বলে ওঠা সেসব ফানুসের আলোক রেখায় বাংলার সঙ্গে সমান্তরাল হয়ে যায় রাখাইন ভাষা। বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের সকল মানুষের সাথে সংযুক্ত হওয়ার প্রয়াসে সংকল্পবদ্ধ এক প্রতিষ্ঠান বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক রচনায় বিশ্বাসী এই প্রতিষ্ঠান। সেই সূত্রে বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে রাখাইন ভাষা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানের প্রত্যাশায় নেয়া হয় স্থাপনাশিল্পটি নির্মাণের উদ্যোগ।
×