ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ সংঘাতে জড়ায়নি’

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ সংঘাতে জড়ায়নি’

অনলাইন রিপোর্টার ॥ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০২০-২০২১ কোর্সের গ্রাজুয়েশন সিরিমনিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, মিয়ানমার থেকে আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে মিয়ানমার থেকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা দেশটির নাগরিকদের আশ্রয় দান এবং নিজ দেশে যাতে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য আমরা কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে তারা যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একটা বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়েই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি। তবে যারা অন্যায় করছে নিশ্চয়ই সেটা আমরা বলবো। আমরা চাই, তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যাক, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, এতোজন বাস্তুচ্যুত মানুষ, যারা নির্যাতিত হয়েছিল, তাদের আশ্রয় দেওয়ায় সারা বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করেছে, সাধুবাদ জানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক একাডেমি তৈরি করে দিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি কুমিল্লাতে সামরিক একাডেমির প্রথম বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন। তিনি সেসময় বলেন, ‘পূর্ণ সুযোগ সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যেকোনো দেশের যেকোনো সৈনিকের সাথে মোকাবিলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস আমরা এমন একটি একাডেমি তৈরি করবো, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে।’ এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। আজকে আমরা সেটা করতে পেরেছি। আমাদের এ একাডেমি সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময়। সারাবিশ্বের মানুষ এই একাডেমিকে অনুভব করে, প্রশংসা করে। শেখ হাসিনা বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা ২০২১ এ পদার্পণ করেছি। করোনায় সবকিছু স্তিমিত। স্থবিরতা নেমে এসেছে সবখানে। আমরা দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি সব উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সফলও হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ ই-লার্নিং সল্যুশন স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কোর্স চালু রেখেছে। একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। এজন্য একাডেমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন এ একাডমিতে প্রশিক্ষণার্থী ছিল ৩০ জন সামরিক কর্মকর্তা। আজকে ২২৫ জনে উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশের এক হাজার ২০৮ জন সামরিক কর্মকর্তা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা সবাই নিজ নিজ দেশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভালো অবদান রাখছেন। আজকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও ১৬ দেশের ৪৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র হচ্ছে- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এ নীতিমালা জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন। আর এ নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। কেউই বলতে পারবে না যে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশের সঙ্গে কোনো বৈরি সম্পর্ক আছে। আমরা মোটামুটি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে চলছি। বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া ক্যাডেটদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে, এ দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এ দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হবার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও অনেক দূর যাওয়া। এসময় দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষের একটা ঠিকানা হবে। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। প্রত্যেকটি মানুষ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং প্রতিটি গ্রামই শহরে রুপান্তর হবে। প্রত্যেকে নাগরিক সুবিধা একেবারে গ্রামে বসে পাবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। করোনা মহামারীর মধ্যে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে, অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স প্রান্তে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীনসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×