ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সবার ধারণা এমনই থাকে। হয়েছেও তাই। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ১২০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী এই বিজয়ে বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রথম দুই ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ বোলাররা দাপট দেখান। তৃতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। এবার ব্যাটসম্যানরাও দেখান দাপট। দলের সেরা চার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল (৬৪), ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিম (৬৪), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৬৪*) ও সিরিজসেরা সাকিব আল হাসান (৫১) ব্যাটিং ঝলক দেখান। তাতে করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে। আলজারি জোসেফ ও রেইমন রেইফার ২টি করে উইকেট শিকার করতে পারেন। এতবড় স্কোর সামনে পড়লে কী আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেতা সম্ভব? জিততে পারেওনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। ব্যাট হাতে রোভম্যান পাওয়েল ৪৭ রান করতে পারেন। বল হাতে ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রথম দুই ওয়ানডে হয় ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। টানা দুটি ওয়ানডে জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে জিতে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে যায়। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেটি অন্যসময় হলে বাংলাদেশের জন্য নিয়মরক্ষার এবং হোয়াইটওয়াশ করার চেষ্টার ম্যাচই হয়ে যেত। কিন্তু এবার ম্যাচটির গুরুত্ব অনেক থাকে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লীগের ম্যাচ। জিতলে ১০ পয়েন্ট আরও বেশি পাওয়া হবে। তাতে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য কাজে দেবে। আর তাই গুরুত্ব দিয়েই ম্যাচটি জিততে চায় বাংলাদেশ। জয়ও মিলে। তাতে করে বিশ্বকাপের সুপার লীগের প্রথম সিরিজেই পুরো ৩০ পয়েন্ট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ সুপার লীগের সিরিজেই শূন্য হাতে মাঠ ছাড়ে। বাংলাদেশ দল দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। পেসার রুবেল হোসেন ও হাসান মাহমুদের পরিবর্তে ইনজুরি থেকে মুক্ত হওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাসকিন আহমেদকে খেলানো হয়। তিন বছর পর ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান তাসকিন। সাইফউদ্দিন ও তাসকিন অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। সাইফউদ্দিন ৩ উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন ১ উইকেট নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতেও দুর্ভিক্ষেই পড়ে থাকে। দলের ৩০ রানেই মুস্তাফিজুর রহমানের ধামাকায় ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ওপেনার কিয়র্ন ওটলি (১) ও সুনীল এমব্রিসকে (১৩) সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। মাঝপথে কাইল মায়ের্সকে (১১) আউট করে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫০ রান পূরণ করার আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের ৭৯ রানে জেসন মোহাম্মদ (১৭) ও ৯৩ রানে এনক্রুমাহ বোনারকে (৩১) আউট করে দেন সাইফউদ্দিন। ২৭তম ওভারে গিয়ে ১০০ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের যখন ১১৯ রান হয় তখন অভিষিক্ত জামার হ্যামিল্টনকে (৫) আউট করে দেন মিরাজ। রোভম্যান পাওয়েল ও রেইমন রেইফার মিলে দলকে ১৫০ রানে নিয়ে যান। সিরিজে প্রথমবারের মতো দেড় শ’ রান করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের ১৫৫ রান হতেই পাওয়েলকে (৪৭) ফিরিয়ে দেন সৌম্য সরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলআউট হওয়া যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। দলের ১৭৪ রানে আলজারি জোসেফ (১১), ১ রান যোগ হতেই সাইফউদ্দিনের বলে আকিল হোসেন, ১৭৭ রানে তাসকিনের বলে রেইফার (২৭) আউট হতেই অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ শুরুতেই ব্যাটিংয়ে বিপাকে পড়ে। দলের ৩৮ রানের মধ্যেই লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়ে যান। রানের খাতা খোলার আগেই লিটন এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরেন। শান্ত (২০) রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচতে পারেননি। দুইজনই টানা তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হন। তবে এবার তামিম ও সাকিব মিলে দেখান উজ্জ্বলতা। শুরুতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। উইকেটে থিতু হতে সময় নেন। দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়ার পর দলকে ১০০ রানে নিয়ে গিয়ে ১৩১ রানেও যান। এমন মুহূর্তে আগেই ৭০ বলে ৫০ রান করে ক্যারিয়ারের ৪৯তম অর্ধশতক করা তামিম (৮০ বলে ৬৪ রান) আউট হয়ে গেলে ৯৩ রানের জুটি ভেঙ্গে যায়। তামিম ও সাকিব মিলে প্রথমবার তৃতীয় উইকেট জুটিতে এত বড় জুটি গড়েন। তাতে দলও বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যেতে থাকে। তামিম আউটের পর মুশফিক ব্যাট হাতে নেমে সাকিবকে সঙ্গ দেন। কিন্তু সাকিবই এরপর আর বেশি সময় থাকতে পারেননি। রানের খাতা খোলার আগেই ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচা সাকিব ৭৮ বলে ক্যারিয়ারের ৪৮তম অর্ধশতক করেন। আর এক রান যোগ করতেই দলের ১৭৯ রানে রেইফারের বলে বোল্ড হয়ে যান। সাকিব-মুশফিক মিলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন। এরপর মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেন মাহমুদুল্লাহ। দুইজন মিলে দলকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যান যেখানে জয় নিশ্চিত মিলবে বাংলাদেশের, সেটাই মনে করা হয়। দলকে ২০০ রানে নিয়ে যাওয়ার পর ২৫০ রানেও নিয়ে যান। এরমধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২১টি ওয়ানডে খেলা মুশফিক দ্রুতই ৪৭ বলে অর্ধশতক করে ফেলেন। ক্যারিয়ারের ৩৯তম অর্ধশতক করার পর আর ১৪ রান যোগ করে ৫৫ বলে ৬৪ রান করে দলের ২৫১ রানে রেইফারের শিকার হন মুশফিকও। ততক্ষণে ইনিংসের শেষ পর্যায় থাকে। ইনিংস শেষ হতে আর ৪ ওভার বাকি থাকে। এরআগে ১০ ওভারে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ মিলে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে ৭২ রানের জুটি গড়েন। মুশফিকের আউটের পর একদিক আগলে রাখেন সৌম্য। আরেকদিক রান তুলতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ। ছক্কা হাঁকিয়ে ৪০ বলে অর্ধশতক করেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ ওভারে গিয়ে অর্ধশতক করেন মাহমুদুল্লাহ। দলের ২৮৩ রানে সৌম্য সরকার (৭) রান আউট হয়ে যাওয়ার পর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে (৫*) নিয়ে দলকে ২৯৭ রানে নিয়ে গিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ। ৪৩ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজ, মিরাজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০০৯ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন ॥ ওয়ানডে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দফতর থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ‘প্রাণঢালা অভিনন্দন’ জানিয়েছেন এবং কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে জয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। খবর বিডিনিউজের। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২০ রানে হারিয়ে ‘হোয়াইটওয়াশ’ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দল। এর আগে গত শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ২০০৯ সালে ক্যারিবিয়ান সফরে প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
×