ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফলন দ্বিগুণ করতে আরও উন্নত ধানের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

ফলন দ্বিগুণ করতে আরও উন্নত ধানের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফলন দ্বিগুণ বাড়াতে আরও উন্নতজাতের ধান উদ্ভাবনের জন্য ধানবিজ্ঞানী ও গবেষকদের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক সময় খাদ্য ঘাটতির ও ক্ষুধার দেশ হিসাবে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি যা এখন বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটির উপরে। এর সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগতো আছেই। তারপরও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এই সাফল্যের পিছনে ব্রির উদ্ভাবিত জাত ও বিজ্ঞানীদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তায় মূল চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের জনসংখ্যা প্রতিবছর ২২-২৩ লাখ বৃদ্ধি পাচ্ছে; অথচ নানান কারণে চাষের জমি কমছে। সেজন্য, ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হলে আরও উন্নত জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। ব্রি ২০১৯-২০ বছরের গবেষণা পর্যালোচনা বিষয়ক এ কর্মশালাটি আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহ্‌সান রাসেল এবং কৃষিসচিব মেসবাহুল ইসলাম। ব্রি উদ্ভাবিত শতাধিক জাতের ধানের প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এই জাতগুলো থেকে সেরাগুলো নিয়ে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে কৃষকের নিকট এগুলো জনপ্রিয় হয়, কৃষকের নিকট সহজে পৌছানো হয়। তিনি আরও বলেন, একটি পুষ্টিউপাদান সমৃদ্ধ জাত না করে, বহু পুষ্টিউপাদান সমৃদ্ধ জাতের ধান উদ্ভাবন করতে হবে। এছাড়া, মোটা চালের চাহিদা দিন দিন কমছে, সেজন্য চিকন চাল এবং কৃষক ও ভোক্তার চাহিদা বিবেচনা করে জাত উদ্ভাবনে এগিয়ে আসতে হবে। ফসল উৎপাদনের পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক আরও বলেন, বিবিএস ও কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মিলে না। কৃষি সম্প্রসারণের পরিসংখ্যানে মাঠ থেকে ফসল উৎপাদনের প্রকৃত তথ্য উঠে আসছে কিনা সেটি ক্রস চেক করা দরকার। তিনি এসময় মন্ত্রণালয় ও ব্রিসহ অন্যান্য সংস্থাকে উৎপাদনের তথ্য ক্রস চেক করার নির্দেশনা প্রদান করেন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর। বিগত এক বছরের গবেষণার অগ্রগতি তুলে ধরেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. কৃষ্ণ পদ হালদার। এছাড়া, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাশ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো: সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মন্ডল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ, সাবেক মহাপরিচালক মো: হামিদুর রহমান, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাজিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারি, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার(এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ব্রির সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর জানান, এখন পর্যন্ত ব্রি ১০৫টি উচ্চফলনশীল জাত ও ২৫০টি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে ব্রি ধানের জাত উদ্ভাবনে বড় সাফল্য পেয়েছে; এই সময়ে ৫৪টি জাত ও ২০০ এর বেশি প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে । তিনি আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অভিঘাত সহনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে ব্রি। এরই মধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে লবণাক্ততাসহিষ্ণু ১২টি, খরাসহিষ্ণু ৩টি, জলমগ্নতাসহনশীল ৪টি ও ঠান্ডাসহনশীল ৪টি জাত। জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ জাত উদ্ভাবনে বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োফর্টিফিকেশন ও জিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ব্রি বিজ্ঞানীরা। ডিজি ড. কবীর জানান, ইতোমধ্যে জিঙ্কসমৃদ্ধ ৫টি ও প্রিমিয়াম গুণসম্পন্ন ১১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া, মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসাবে হাইজিংক সমৃদ্ধ ব্রিধান ১০০ কারিগরি কমিটির অনুমোদন শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
×