ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেশবপুরে ১৬ ইটভাঁটিতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

কেশবপুরে ১৬ ইটভাঁটিতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ২৫ ডিসেম্বর ॥ কেশবপুর উপজেলায় ১৬ ইটভাঁটিতে সরকারী নিয়ম মানা হচ্ছে না। অবৈধভাবে গড়ে তোলা এ সব ইটভাঁটিতে প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে কাঠ পোড়ানো নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ভাঁটিগুলোর বৈধ কাগজপত্র নেই। শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ভাঁটির মালিকরা তাদের ইটভাঁটিতে শিশুদের দিয়ে করাছেন। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদনের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি কেউ। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভাঁটিগুলোর পাশের গাছগাছালি, ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পরিবেশ। জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলায় ১৬টি ইটভাঁটি রয়েছে। ওই ভাঁটিগুলোর পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। ভাঁটিগুলো হচ্ছে, কেশবপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী বরুনিয়া বাজার শ্রীনদী অববাহিকায় প্রাণ ব্রিকস, আগরহাটি এলাকায় প্রাইম ব্রিকস, সন্ন্যাসগাছা এলাকায় বিউটি ব্রিকস নামে ২টি ও এস এস বি ব্রিকস, সাতবাড়িয়া এলাকায় রহমান ব্রিকস, আলম ব্রিকস ও মেসার্স সুপার ব্রিকস, পৌরসভার ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকায় জামান ব্রিকস ও বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় খান ব্রিকস, বারুইহাটি এলাকায় রোমান ব্রিকস, বায়সা কালীবাড়ি এলাকায় গাজী ব্রিকস ও গোল্ড ব্রিকস, বেগমপুর এলাকায় মেসার্স রিপন ব্রিকস, দোরমুটিয়া এলাকায় মেসার্স কেশবপুর ব্রিকস ও বগা এলাকায় মেসার্স বিএসবি ব্রিকস। ভাঁটিগুলোতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ভাঁটির মালিকরা তা মানছেন না। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদনের কোন কাগজপত্র নেই কারও। সরজমিনে দেখা গেছে, প্রাণ ব্রিকসের পশ্চিমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতাধীন পর্যটন কেন্দ্র ভরত রাজার (ভরতের) দেউল, বসতবাড়ি, ভরতভায়না বাজার, মসজিদ, সরকারী প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ ও কৃষি জমি রয়েছে। এভাবে প্রত্যেকটি ইটভাঁটির চারপাশে রয়েছে বসতবাড়ি, মসজিদ, সরকারী প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ ও কৃষি জমি। ভাঁটির কারণে নষ্ট হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, শস্যহানিসহ পরিবেশ রয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। এলাকাবাসী প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিলে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামান ব্রিকস ও রোমান ব্রিকস কয়েক দফা বন্ধ করে দেয় এবং জরিমানা আদায় করা হয়। তারপরও প্রশাসনের চোখে সামনে ইটভাঁটি ফসলের জমিতে পরিচালিত হচ্ছে। মালিকরা কাঠ পোড়াচ্ছে। ইট উৎপাদন ও বিকিকিনির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ভাঁটিতে তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে ইট, কাদা বহনের কাজ। ইট পোড়ানোর জন্যে চিপনি ও চুলার পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে কাঠ। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করেই ভাঁটিগুলো চলছে। ভাঁটির পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মাটি। ভাঁটির জন্যে ব্যবহারকারী ট্রাক ও ট্রাক্টরের ঘন ঘন যাতায়াতের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা, পথচারীসহ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট, ঘটছে মারাত্মক ফসলহানি। উপজেলা ইটভাঁটি মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গাজী ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আরমান গাজী বলেন, চলতি বছর ভাঁটির কোন লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। পূর্বের আইনেই ভাঁটিগুলো চলছে। সম্প্রতি মেসার্স সুপার ব্রিকস ও মেসার্স রিপন ব্রিকস ২টি পরিবেশ অধিদফতর যশোর জেলা অফিসের কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার, কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে উচ্ছেদ করেছেন। উপজেলা নাগরিক কমিটির নেতা এ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকীসহ অনেক মন্তব্য করে বলেছেন, ইটভাঁটির মালিকরা আইন অমান্য করে কাঠ পোড়াচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। ভাঁটির জন্যে ব্যবহারকারী ট্রাক ও ট্রাক্টরের ঘন ঘন যাতায়াতের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা, পথচারীসহ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট, ঘটছে মারাত্মক ফসলি কৃষি জমিরহানি। এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা বলেন, এ উপজেলায় ১৬ ইটভাঁটি রয়েছে। গত বছর এদের পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছিল না। ইতোমধ্যে কাঠ পোড়ানো ও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ২টি ভাঁটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক সৈয়দ আনোয়ার বলেন, ইটভাঁটিতে কোন কাঠ পোড়ানো যাবে না। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ভাঁটির মালিকরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাঠ পোড়াচ্ছে। কেশবপুরের ভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। ২০ ডিসেম্বর ২টি ভাঁটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন জানান, ইটভাঁটির ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ইতোমধ্যে দুটি ইটভাঁটির কাগজপত্র না থাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। নিয়মের বাইরে যেগুলো ইটভাঁটি রয়েছে সব ভেঙ্গে উচ্ছেদ করা হবে।
×