ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালকের পদত্যাগ

ট্রাম্পের মামলা আমলেই নিল না উইসকনসিন সুপ্রীমকোর্ট

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

ট্রাম্পের মামলা আমলেই নিল না উইসকনসিন সুপ্রীমকোর্ট

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গতমাসের ৩ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়ের করা মামলা আমলেই নিল না উইসকনসিনের সুপ্রীমকোর্ট। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তার ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এসময় বলা হয়েছে, সরাসরি সুপ্রীমকোর্টে নয়, দরকার হলে নিম্ন আদালতের রায় নিয়ে তারপর সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে ট্রাম্পকে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে, ইউএসএ টুডে ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার উইসকনসিন সুপ্রীমকোর্টে ট্রাম্পের মামলা বিষয়ক রুলের পক্ষে পড়ে তিন ভোট, আর বিপক্ষে ছিলেন চার বিচারপতি। ফলে অঙ্গরাজ্যটিতে সরাসরি সুপ্রীমকোর্টে আইনী লড়াইয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে ট্রাম্প শিবিরের। জানা গেছে, সুপ্রীমকোর্টে উইসকনসিনের ডেমোক্র্যাট শাসিত দুটি কাউন্টির ২ লাখ ২১ হাজারের বেশি ব্যালট বাতিলের আবেদন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে এ্যাবসেন্টি ব্যালটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। নিম্ন আদালতে আইনী লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট সময় নেই দাবি করে ওই মামলা নিয়ে সরাসরি সুপ্রীমকোর্টের দ্বারস্থ হন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সেখানেও খালি হাতে ফিরতে হলো তাকে। ট্রাম্পের আশা ছিল, উইসকনসিন সুপ্রীমকোর্টে রক্ষণশীল বিচারপতিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তার অভিযোগ সহজেই আমলে নেয়া হবে। তবে বিচারপতি ব্রায়ান হেইজডর্ন তিন উদারপন্থী বিচারপতির পক্ষে গিয়ে মামলা আমলে নেয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়ায় আশাভঙ্গ হয় রিপাবলিকানদের। এ বিষয়ে বিচারপতি হেইজডর্ন বলেছেন, আইন অনুসারে এটা পরিষ্কার যে, ট্রাম্পের মামলাটি অবশ্যই নিম্ন আদালত ঘুরে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সময়-পরীক্ষিত বিচারিক নিয়মগুলো মেনে চলতে পারি, এমনকি হাই প্রোফাইলদের ক্ষেত্রেও। রক্ষণশীল এ বিচারপতি বলেন, আমার কিছু সহকর্মীর মতে, এটি অনুসরণ করলে আমাদের দায়িত্বে অবহেলা করা হচ্ছে না। এটি আইন মেনেই চলছে। হেইজডর্নের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রধান বিচারপতি পেশেন্স রোজেনস্যাক বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের মামলাটি গ্রহণ করতেন এবং সত্য অনুসন্ধানের জন্য সেটি নিম্ন আদালতে পাঠাতেন, যা পরে রায় ঘোষণার জন্য সুপ্রীমকোর্টকে জানানো যেত। চলতি সপ্তাহে উইসকনসিনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যটির ১০টি ইলেক্টোরাল ভোট ডেমোক্র্যাটদের ঝুলিতে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। গত ৩ নবেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে হেরে যাওয়া অঙ্গরাজ্যগুলোতে মামলার ঝড় তুলেছিলেন ট্রাম্প সমর্থকরা। উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে না পারায় বেশিরভাগ আদালতেই খারিজ হয়ে গেছে মামলাগুলো। এ তালিকায় সবশেষ গত ২১ নবেম্বর যোগ হয়েছে ব্যাটল গ্রাউন্ড পেনসিলভানিয়া। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচার দলের দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে এক ডিস্ট্রিক্ট জজ আদালত। যোগাযোগ পরিচালকের পদত্যাগ ॥ হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিষয়ক (কমিউনিকেশন্স) পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এ্যালিসা ফারাহ। এক বিবৃতিতে এ্যালিসা ফারাহ বলেছেন, নতুন কাজের লক্ষ্যে তিনি হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাচ্ছেন। গত সাড়ে তিন বছর ট্রাম্প প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করতে পারাকে নিজের পুরো জীবনের জন্য একটি সম্মানের বিষয় বলে উল্লেখ করেন এ্যালিসা। এ্যালিসা ফারাহ যে হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন, তা নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। ৩ নবেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক মাসের মাথায় ট্রাম্পের প্রশাসন ছাড়ছেন এ্যালিসা। হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন্স পরিচালক ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনে আরও দুটি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এ্যালিসা ফারাহ। তিনি প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। পরে প্রতিরক্ষা দফতরের প্রেস সেক্রেটারি হয়েছিলেন। তহবিল তছরুপের অভিযোগে ইভাঙ্কাকে জিজ্ঞাসাবাদ ॥ বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্পকে সরকারী অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ইভাঙ্কার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগে ওয়াশিংটন ডিসির (ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া) কর্তৃপক্ষ বলছে, চার বছর আগে তিনি বাবা ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের তহবিল থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ অপব্যবহারে ভূমিকা রেখেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ওয়াশিংটন ডিসির এ্যাটর্নি জেনারেল কার্ল রেসিনের কার্যালয় ইভাঙ্কাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে। সেদিনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানুয়ারিতে রেসিন এক মামলায় অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের অলাভজনক তহবিল থেকে বড় অঙ্কের টাকা পরিবারের স্বার্থে ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য ব্যবসার কাজে লাগানো হয়। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, তখন করমুক্ত অলাভজনক তহবিলের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের কমিটির সভা ওয়াশিংটনে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আহ্বান করে। অভিষেকের দিনে ট্রাম্পের বড় তিন সন্তান-ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং এরিক ট্রাম্পের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের জন্য সেই হোটেলকে তিন লাখ ডলারের বেশি দেয়া হয় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়। এ বছরের শুরুতে কার্ল রেসিন বলেছিলেন, আইন অনুযায়ী অলাভজনক তহবিলের অর্থ আইনে বর্ণিত জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় করার কথা, সেই অর্থ কোন ব্যক্তি বা কোম্পানির লাভের জন্য ব্যয় করা যায় না। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসার কাজে লাগানো হয়। সেই টাকা উদ্ধারের জন্যই মামলাটি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্রের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পাওয়া কমিটি অবশ্য অলাভজনক তহবিলের অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কমিটির দাবি, তহবিলের অর্থ আইন মেনেই খরচ করা হয়েছে এবং যাবতীয় আর্থিক লেনদেন যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে নিরীক্ষা (অডিট) করানো হয়েছে। অবৈধ ব্যালটের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ জুলিয়ানি ॥ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার আইনজীবী ও ঘনিষ্ঠরা এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেকোন উপায় নির্বাচনে জয় পেতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে ৩ লাখ অবৈধ ব্যালট চিহ্নিতের দাবি জানিয়ে এক শুনানিতে অংশ নিতে মিশিগান যান ট্রাম্পের আইনজীবী জুলিয়ানি। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। জুলিয়ানি ২ ডিসেম্বর রিপাবলিকান দলের কর্মীদের বলেন, আপনারা মিশিগানের আইন প্রণেতাদের চাপ, এমনকি হুমকি দিন, যাতে তারা মিশিগানের ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট ট্রাম্পকে দেন। মিশিগান হাউস ওভারসাইট কমিটির চার ঘণ্টাব্যাপী শুনানিতে দেয়া বক্তব্যে জুলিয়ানি মিশিগানের আইন প্রণেতাদের সমালোচনা করেন এবং ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মিশিগানের আইন প্রণেতাদের তিনি বলেন, আপনাদের অঙ্গরাজ্যে ভোট জালিয়াতি, অনিয়মের ব্যাপারে আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আপনাদের নিতে হবে। শুনানির সময় মিশিগান হাউস ওভারসাইট কমিটির চেয়ারম্যান জুলিয়ানিকে ভোটের সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রশ্ন করার অনুমতি দেন। এ সময় জ্যাকব নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ডেট্রয়েটের টিসিএফ সেন্টারে যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়া ব্যালট গণনা করা হয়েছিল। মেলিসা ক্যারন নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি দেখেছেন টিসিএফ সেন্টারে হাজার হাজার ব্যালটে অনিয়ম হয়েছে। যদিও ওয়েন কাউন্টির এক বিচারক ক্যারনের দাবিকে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে নবেম্বর মাসে রায় দিয়েছিলেন। মিশিগানে এক লাখ ৫৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে বাইডেন ট্রাম্পকে পরাজিত করেন। রাজ্যের ৮৩ কাউন্টির দ্বিদলীয় ক্যানভাসিং বোর্ড ও স্টেট ক্যানভাসারদের দ্বারা ভোটের ফল ইতোমধ্যে প্রত্যয়ন হয়েছে। কিন্তু জুলিয়ানির ভাষ্য ছিল, ট্রাম্পের নির্বাচনী কর্মকর্তারা মিশিগানে ৩ লাখ অবৈধ ব্যালট চিহ্নিত করেছেন। ডেট্রয়েটের টিসিএফ কেন্দ্রের ভোট গণনায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগের কোন প্রমাণ তারা দেখাতে পারেননি। ইউএস এ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ১ ডিসেম্বর বিকেলে ঘোষণা করেন, বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকে পরিবর্তন করতে পারে এমন ব্যাপক ভোট জালিয়াতির কোন প্রমাণ পায়নি। নির্বিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ॥ ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার দিনে যুক্তরাষ্ট্রে নিহত সমপরিমাণ মানুষের মৃত্যু প্রতিদিন হচ্ছে করোনাভাইরাসে। জাতীয় দুর্যোগের এ সময়ে নির্বাচনে কারচুপির ভুয়া দাবি করেই যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রতিদিন হাজারও মানুষের মৃত্যু নিয়ে পালন করছেন রহস্যের নীরবতা। তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পরই ১০০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে মাস্ক পরার আহ্বান জানাবেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী হামলায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থমকে দাঁড়িয়েছিল। একদিনে প্রায় ৩০০০ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেদিন দলমত-নির্বিশেষে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্যোগ মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোভিডে প্রতিদিন তিন হাজারের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সাবধানতা অবলম্বনের জন্যও রাষ্ট্রনেতার কোন আহ্বান নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে একজন মার্কিন ফুটবল কোচকে সম্মাননা দিয়ে দিন কাটিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে করোনায় মৃত্যু নিয়ে কোন কথা বলেননি। বাকিটা সময় তিনি ব্যয় করেছেন টুইটার আর ফেসবুকে নিজের নির্বাচন চুরি হয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে। ট্রাম্পের এমন অভিযোগ মার্কিন সংবাদমাধ্যম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও প্রচার করছে না। ফেসবুক, টুইটার ট্রাম্পের পোস্টের নিচে জুড়ে দিচ্ছে নিজেদের বক্তব্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বিকার। স্বাস্থ্যসেবীরা মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট অবশ্য শুরু থেকেই কোন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেননি। মাস্ক পরা নিয়ে তিনি কয়েক দফা উপহাসও করেছেন। নিজে সংক্রমিত হয়েও ট্রাম্প তার অবস্থানের কোন পরিবর্তন করেননি। তার সমর্থকদের মধ্যে এখনও মাস্ক পরাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। ট্রাম্প নিজেও বেশ কয়েকটি পার্টির আয়োজন করছেন ক্রিসমাসের আগে। এসব ঘরোয়া পার্টিও এড়িয়ে চলার জন্য সিডিসি নাগরিকদের একদিকে নির্দেশ দিচ্ছে। ‘প্রোটেক্ট আওয়ার কেয়ারস’ নামের সংগঠনের পরিচালক জ্যাক পেটকানাস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন করোনা নিয়ে এখনও বিকারহীন। অপরদিকে সামনের সারির স্বাস্থ্যসেবীরা কঠিন সময় পার করছেন। ডাক্তার, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সামাল দিতে হচ্ছে চরম কঠিন বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কাঠামোতে এত নাজুক পরিস্থিতি আগে কখনও সামাল দিতে হয়নি। সবাইকে মাস্ক পরতে বলবেন বাইডেন ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন দেশের সব মানুষকে মাস্ক পরতে বলবেন। তার বিশ্বাস, শুধু মাস্ক পরেই কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব। বৃহস্পতিবার দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাইডেন বলেন, যদি প্রত্যেক মার্কিনী মাস্ক ব্যবহার করেন তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি সরকারী ভবনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেবেন বলেও জানান তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট এবং ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’ উপলক্ষে ছুটিতে প্রচুর মানুষ ভ্রমণে বের হওয়ায় দেশটিতে মহামারী পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাইডেন যা বলেছেন : বাইডেন বলেন, প্রথম দিন আমার অভিষেকের পর আমি জনগণকে ১০০ দিনের জন্য মাস্ক পরার কথা বলতে যাচ্ছি। শুধু ১০০ দিন, তার বেশি নয়। এক শ’ দিন এবং যদি আমরা সেটা করতে পারি; তবে আমার মনে হয় তাতেই সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করা সম্ভব হবে। যদি টিকা গ্রহণের সঙ্গে মাস্কও ব্যবহার করা হয় তবে রোগের বিস্তার অনেক কমে যাবে। যদিও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্ট জনগণকে মাস্ক পরার নির্দেশ দিতে পারেন না। কিন্তু বাইডেন বলেন, তিনি এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সব সময় মাস্ক পরে একটি উদাহরণ তৈরি করবেন। জনগণকে নির্দেশ দিতে না পারলেও প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা বলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী সম্পত্তিতে এ আদেশ জারি করতে পারবেন। বাইডেন জানান, তিনি তার ওই ক্ষমতার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ফেডারেল ভবনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে আমি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করতে যাচ্ছি। উড়োজাহাজে এবং বাসে যাতায়াত, এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে যাতায়াত করতেও আপনাকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সব এয়ারলাইন্স, বিমানবন্দর এবং সরকারী পরিবহন ব্যবস্থায় এরই মধ্যে সব যাত্রী ও কর্মীর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই পরিবহন ব্যবস্থায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সেই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে বলেছিল, এটা ‘অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ’ হয়ে যায়।
×