ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভার ছয় সদস্যের নাম ঘোষণা বাইডেনের

অনেক নাটকীয়তার পর ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৫ নভেম্বর ২০২০

অনেক নাটকীয়তার পর ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজি হলেন তিনি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে তার সম্ভাব্য মন্ত্রিসভার ছয় সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন। এদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন। খবর বিবিসি, সিএনএন, এএফপি, ফক্স নিউজ, আল-জাজিরা ও নিউইয়র্ক টাইমসের। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার যা করার প্রয়োজন করুক। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল সার্ভিস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) বলছে, তারা বাইডেনকে ‘আপাত বিজয়ী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। মূলত মিশিগানে নির্বাচনের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে হাতে আসার পরপরই বাইডেনের বিজয় চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করেছে। এদিকে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাইডেন টিম। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতিতে গতি আনাসহ জাতির সামনে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আজকের এই সিদ্ধান্তটি ছিল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় থাকা জিএসএ বাইডেন শিবিরকে জানিয়েছেন যে, তারা প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। প্রশাসক এমিলি মারফি বলেছেন, তিনি নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য ৬৩ লাখ ডলার অবমুক্ত করেছেন। তবে ‘ভাল লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এমিলি ও তার টিমের করণীয় কাজটাই করা উচিত এবং আমার টিমকেও তাই বলেছি।’ এমিলি মারফিকে ট্রাম্পই জিএসএ প্রধান হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনের ফল সার্টিফিকেশন ও আইনী চ্যালেঞ্জসহ সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে তার সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে হোয়াইট হাউসের দিক থেকে কোন চাপের বিষয়টি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমিলি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করতে চাই যে আমি প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করতে কোন নির্দেশনা পাইনি। বাইডেনকে দেয়া তার চিঠিতে এভাবেই পুরো বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে তিনি এও বলছেন যে, ‘অনলাইনে, ফোনে এবং ই-মেলে হুমকি পেয়েছি যাতে আমার নিরাপত্তা, আমার পরিবার, কর্মকর্তা এমনকি আমার পোষা প্রাণীটিকে জড়ানো হয়েছে যাতে সময়ের আগেই আমি সিদ্ধান্ত নেই। এমনকি হাজার হাজার হুমকির মুখেও আমি আইনকে সর্বাগ্রে রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলাম।’ নির্বাচনের পর রুটিন কাজ হিসেবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্র্রের দুই রাজনৈতিক শিবির থেকেই এমিলি মারফির তুমুল সমালোচনা হচ্ছিল। ডেমোক্র্যাটরা এটি শুরু করতে তাকে গত সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। মন্ত্রিসভার ছয় সদস্যের নাম ঘোষণা বাইডেনের ॥ ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা স্বাক্ষরকারী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়েছেন জো বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় বাইডেন বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতা হাতে পাওয়ার প্রথম দিনই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরিয়ে নেবেন। বারাক ওবামার শাসনামলের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এবং জ্যাক সুলিভান পেয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব। ব্লিংকেন ও সুলিভান দু’জনই ২০১৫ সালে জন কেরির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর পরমাণু সমঝোতা স্বাক্ষরের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার তার মন্ত্রিসভার ছয় সদস্যের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে বলেন, ‘আমি এমন একটি টিম নিয়ে কাজ করতে চাই যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে আমাকে সাহায্য করবেন যাতে আমি বিশ্বের সামনে থাকা বৃহৎ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারি।’ জো বাইডেনের মন্ত্রিসভার অপর তিন সদস্য হলেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী আলেজান্দার মায়োরকাস, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এ্যাভরিল হাইনেস। ক্ষমতা গ্রহণের আগে বাইডেন যেসব সুবিধা পাচ্ছেন ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য প্রায় ৬৩ লাখ ডলারের ফেডারেল অর্থ তহবিল পাচ্ছেন। নির্বাচনের তিন সপ্তাহ পরে জয়ী জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসনের জন্য ফেডারেল অর্থসহ অন্য সুবিধাও দেয়া হলো। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি দেখভাল করে ফেডারেল এজেন্সি জেনারেল সার্ভিস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ)। জিএসএর দেয়া স্মারক থেকে জানা গেছে, আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ফেডারেল অর্থ তহবিলের ৬৩ লাখ ডলার ব্যয় করতে পারবে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন। এ অর্থ মূলত ট্রানজিশনের প্রস্তুতির জন্য অফিস ভাড়া, ট্রানজিশন কর্মীদের বেতন-ভাতা, বিশেষজ্ঞদের সম্মানী, ট্রানজিশন কাজের জন্য ভ্রমণ, গাড়ি ভাড়া, আইটি সার্ভিসের জন্য ব্যয় এবং প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করতে হবে। ৬৩ লাখ ডলার নগদ অর্থের বাইরে অতিরিক্ত ১০ লাখ ডলার তহবিল রয়েছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওরিয়েন্টেশনের জন্য। ফেডারেল ট্রানজিশন আইনে বলা আছে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনে যে কোন ফেডারেল এজেন্সির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে কংগ্রেসে কর্মরত কর্মীদেরও সংশ্লিষ্টদের সম্মতি সাপেক্ষে ট্রানজিশন টিমে কাজের জন্য ডাকা যেতে পারে। বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন তাদের প্রস্তুতির জন্য ৫০০ জনকে নিয়ে কাজ করতে আনুমানিক এক লাখ ২৮ হাজার বর্গফুটের একটি বা একাধিক অফিস ভাড়া করতে পারবেন। জিএসএর স্মারকে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার জন্য অফিস প্রস্তুতিতে যে কোন গ্রহণযোগ্য প্রয়াসের সমন্বয় করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে সঠিক রাস্তায় ফেরাতে সরকারে ফিরছি-জন কেরি ॥ ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দর কষাকষিতে সহায়তা করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বের করে নেয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে চুক্তিটিতে স্বাক্ষরও করেন কেরি। এবারে দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু দূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। এক টুইট বার্তায় কেরি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সঠিক পথে ফেরাতে আবারও সরকারে ফিরছেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি কমাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ওই চুক্তি স্বাক্ষরের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জন কেরি। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ডোনাল্ড ট্র্রাম্পের জলবায়ু নীতির কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন কেরি। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাইডেনের ট্রানজিশন টিম জানিয়েছে, নতুন প্রশাসনে প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পূর্ণ সময় ব্যয় করবেন জন কেরি।
×