ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে সাত শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে

১৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৭ অক্টোবর ২০২০

১৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ দেশের ১৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে সব মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির প্রবাহ তৈরি করে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠন করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গণপূর্ত অধিদফতরকে দিয়ে শিল্পকলা ভবনগুলো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রতিমন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি জেলা শহরে একটি করে শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের সব উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন রয়েছে। বাকি ১৪টি জেলায় শিল্পকলা ভবন না থাকায় আমরা ওই ১৪টি জেলায় গণপূর্ত অধিদফতরকে দিয়ে ভবনগুলো নির্মাণ করছি। প্রতি ভবন নির্মাণে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। মানুষের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষার সর্বোত্তম জায়গা হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি। যেখানে সংস্কৃতিচর্চার উত্তম জায়গা। শিল্পকলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের জাতীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র। অত্যাধুনিক নাট্যশালা, জাতীয় চিত্রশালা, সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি ভবন এবং প্রশিক্ষণ ভবন। নিয়মিত মঞ্চে নাট্য প্রদর্শন, গ্যালারিতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, যে সব জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ হচ্ছে- সেগুলো হলো, ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোনা, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার। প্রতিটি ভবন ৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা গড়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিগুলো নির্মাণ হলে স্ব স্ব জেলায় শিল্প সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। ওই সব অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশ ঘটলে মানুষের নীতি নৈতিকতারও বিকাশ ঘটবে। শিল্প সংস্কৃতি মানুষের মনকে সমৃদ্ধ করে। আমরা বিষয়টি মাথায় রেখে যে সব জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ছিল না সেই সব জেলায় শিল্পকলা ভবন নির্মাণ করছি। এটা সরকারের নির্বচনী অঙ্গীকার। সমাজের সব ক্ষেত্রে শিল্প সংস্কৃতির ছোঁয়া থাকতে হবে। তা না হলে একটি সমাজ অপরাধ প্রবণন হয়ে উঠবে। সমাজে যাতে সম্প্রীতি বজায় থাকে তার জন্য শিল্প সংস্কৃতির ওপর আমরা জোর দিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ে আমরা সংস্কৃতি ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছি। যাতে কোন মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে অপসংস্কৃতির চর্চা না করে। বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর আশরাফুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের জন্য যতটুকু জায়গার প্রয়োজন তা অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। আবার অনেকগুলোর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া গেছে। এ জন্য কিছু ভবনের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কের হেরফের আছে। কোন ভবনের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক একটু বেশি। আবার কোনটার ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক একটু কম। আধুনিক নক্সার মাধ্যমে ভবনগুলো নির্মাণ হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্প গণপূর্ত বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। দেশের সব জেলায় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে অব্যাহত রাখতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করছে। দেশের সব জেলায় শিল্পকলা একাডেমি থাকলেও এই ১৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ছিল না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের সব জেলায় শিল্পকলা একাডেমি স্থাপন হবে। সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলার চর্চা ও বিকাশ ঘটবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭৪ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ আইন দ্বারা শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে জাতীয় আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে গৃহীত ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন ১৯৭৪’ (১৯৭৪ সালের আইন নং ৩১) অনুসারে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে জেলা শিল্পকলা একাডেমিসমূহ একটি ‘কার্য নির্বাহী’ কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়। জেলা প্রশাসন পদাধিকার বলে উক্ত কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি জেলায় একজন কালচারাল অফিসার রয়েছেন। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লালন ও বিকাশে এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অতীত ঐতিহ্য ও সমকালীন সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং সঙ্গীত, নাট্য ও চারুকলা বিষয়ে আন্তর্জাতিক উৎসবাদির আয়োজন করা হয়। এখানে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের অংশ হিসেবে উৎসব, সম্মেলন, সেমিনার, নাট্যানুষ্ঠান ও কর্মশালা আয়োজন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন ও পুরস্কার প্রদান, বিদেশে সরকারী পর্যায়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক দল প্রেরণ এবং বিদেশী সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো, দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করা হয়। শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গ্রন্থ, সাময়িকী ও স্মরণিকা প্রকাশ ইত্যাদি কাজ করে আসছে। শিল্প সাহিত্য চর্চার জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামীতেও যেন এ ধারা অব্যহত থাকে তার জন্য প্রতিটি জেলা উপজেলায় সংস্কৃতি চর্চার জন্য ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
×