ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রায়হান পরিবারের তিন দিনের কর্মসূচী

এসআই আকবর এখনও লাপাত্তা, হাসান সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২২ অক্টোবর ২০২০

এসআই আকবর এখনও লাপাত্তা, হাসান সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ পুলিশী নির্যাতনে রায়হান নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভে সোচ্চার। প্রতিদিন সিলেটের প্রাণকেন্দ্র বন্দর বাজার কোর্ট পয়েন্টে চলছে সভা সমাবেশ। রায়হান হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল তার পরিবার। গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এসআই আকবরসহ অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন রায়হানের মা সালমা বেগম। বেঁধে দেয়া সময়সীমা ৭২ ঘণ্টা অতিক্রম হয়েছে বুধবার দুপুরে। এখনও প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূইয়াকে গ্রেফতার করা হয়নি। একমাত্র পুলিশ কনস্টেবল টুটু চন্দ্র দাস ছাড়া এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আর কোন গ্রেফতার নেই। ফলে লাগাতার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে রায়হানের পরিবার। এমনটিই জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, বৃহস্পতিবার ২২ অক্টোবর পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত, পরদিন শুক্রবার বাদ জুমা মসজিদে মসজিদে রায়হানের জন্য দোয়া মাহফিল ও শনিবার বিকেল ৪টায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মদিনা মার্কেট পয়েন্টে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হবে। পরিবারের পক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রায়হানের স্বজন মোঃ শওকত হোসেন। তিনি ঘোষিত প্রতিটা কর্মসূচী সফল করতে সিলেটের সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামের অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচী দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা আপাতত কঠোর কর্মসূচী থেকে সরে এসেছি। তবে এরপর যদি প্রশাসন জড়িতদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয় তাহলে নতুন করে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা আসবে। সাময়িক বরখাস্ত এস.আই হাসান উদ্দিন ॥ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এস.আই হাসান উদ্দিন। মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রায়হান হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ (সাময়িক বরখাস্ত) এস.আই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি হতে পালাতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির (টু আইসি) এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িকভাবে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে বুধবার দুপুরে এই হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে ও বিচারের দাবিতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সিলেটের কর্মীরা। আমরা সিলেটী-এর ব্যানারে দুপুর কোট পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আকবর হোসেন এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে ॥ যুবক রায়হান হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এস আই আকবর হোসেন এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সিলেটের বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছেন না পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা থাকার পরেও এসআই আকবর লাপাত্তা। আকবরের কৌশল আর বুদ্ধিতে পরাস্থ পুলিশের কর্তারা। প্রায় ১০ দিন থেকে আকবরের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। যদিও পিবিআই দাবি করছে আকবরকে ধরতে তাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু হদিস মিলছে না এস আই আকবরের। তার পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে মহানগর পুলিশসহ অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ সদর দফতরের একটি তদন্ত দল। রায়হান হত্যাকা-ের ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কোথায় আছেন আকবর কবে গ্রেফতার হচ্ছেন এমন প্রশ্ন এখন রায়হানের পরিবার ও সিলেটের সাধারণ মানুষের। মঙ্গলবার সিলেটসহ সারাদেশে হাওয়ায় ভাসতে থাকে এসআই আকবর গ্রেফতারের খবর। দিনভর গুঞ্জন শেষে খবরের সত্যতা পাওয়া গেল না। আকবরের পালিয়ে যাবার পর একটি বিষয় জোরালোভাবে আলোচনায় আসে। প্রশ্ন উঠে আকবরকে পালিয়ে যেতে কারা সহযোগিতা করেছেন। এই নৃশংস খুনের সঙ্গে যারা জড়িয়ে রয়েছেন তারা এখন কোথায়। তাদের কোথায় থাকা উচিত ছিল। খুন সংঘটিত হওয়ার পর অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয় ? পুলিশ যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে এতে যদি সাধারণ মানুষ জড়িত থাকত, তাহলে পুলিশ কী ধরনের আচরণ করত ? যে আচরণ পুলিশ মানুষের সঙ্গে করে সেই আচরণ তারা পুলিশ সঙ্গে করছে কি না ? আকবর প্রসঙ্গে সিলেট পিবিআই পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান বলেন, এসআই আকবরকে ধরতে পিবিআই একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে আকবরকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, পিবিআই নানা বিষয় মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে এই মামলাটি সার্বিক বিষয় তদন্তে প্রকাশ পায়। প্রতিবেদন দু-একদিনের মধ্যে ॥ বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ নিহতের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দু-একদিনের মধ্যে জমা দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) মোহাম্মদ আয়ুবের নেতৃত্বে রায়হানের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির সদস্যরা সিলেট এসে বিভিন্ন তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করে রাতে নগরীর আখালিয়ায় রায়হানের বাড়িতে যান। রায়হানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান এআইজি মোহাম্মদ আয়ুব বলেন, এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আর কোন পুলিশ সদস্য জড়িত কী না এ ব্যাপারে তদন্ত করতে আমরা এখানে এসেছি। এ ব্যাপারে রায়হানের পরিবারের কাছে কোন তথ্য আছে কী না তা জানতেই আমরা এখানে এসেছি। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই আজ আমরা রায়হানের বাড়িতে এসে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। দু’একদিনের মধ্যেই এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
×