ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রায়হান হত্যা মামলা

প্রত্যক্ষদর্শী তিন কনস্টেবলের জবানবন্দী

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২০ অক্টোবর ২০২০

প্রত্যক্ষদর্শী তিন কনস্টেবলের জবানবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনের ফলে রায়হান আহমদ নিহত হওয়ার ঘটনায় আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন ৩ পুলিশ সদস্য। সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালত বিচারক মোঃ জিহাদুুর রহমানের আদালতে পুলিশ কনস্টেবল দেলোয়ার, সাইদুর ও শামীম ১৬৪ ধারায় এ সাক্ষ্য প্রদান করেন। এই তিনজনই সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। রায়হানকে নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এই তিন কনস্টেবল আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৩টা থেকে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতে বিচারক মোঃ জিহাদুুর রহমানের আদালতে বন্দর ফাঁড়ির তিন পুলিশ কনস্টেবলকে হাজির করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিকেলে তারা রায়হান হত্যা মামলার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী প্রদান করেন। রায়হান হত্যাকা-ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন পলাতক রয়েছেন। রায়হান হত্যাকা- নিয়ে পুলিশের ভূমিকা হতাশাজনক বলে মনে করছেন সিলেটের সচেতনমহল। রায়হানকে নির্যাতন করে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়ার বিষয়টি জন সমক্ষে বেরিয়ে আসার পর ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যতম ব্যক্তি এসআই আকবর পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকেই। নির্যাতনকারী এসআই আকবর নগরীতে বেপোরোয়া ভাবে চাঁদাবাজি ও ব্যবসায়ীদের হযরানি করে আসছিল। সে বিষয়টিও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমলে নেননি। নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করে আকবরের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও জন হয়রানির মদদদাতাদের চিহ্নিত করার দাবিও উঠতে শুরু করেছে। রায়হান হত্যাকা- নিয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন কথাই বলছে না। মামলার গতি প্রকৃতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন নিহত রায়হানের পরিবার। রায়হানের পরিবার ও সচেতন মহল থেকে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হচ্ছে। ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ॥ সিলেটের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর রায়হান আহমদ হত্যাকা-ে প্রধান অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ধরিয়ে দিলে বা গ্রেফতার করতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। এই ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের সন্তান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সামাদ খান। সামাদ খান তার ঘোষণায় বলেন, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেছে রায়হান আহমদ। তার নিহতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবরকে ৭২ ঘণ্টার ভেতরে যে ধরিয়ে দিতে পারবেন অথবা প্রশাসনের যে সাহসী সৈনিক আকবরকে গ্রেফতার করতে পারবেন তাকে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে সামাদ খান এই পুরস্কার ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জার অথবা এই মোবাইল নাম্বার +১ (৮৬২) ৬০০-১৫৮৮-এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী ॥ সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের মাধ্যমে রায়হান আহমদকে হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ নামক নাগরিক মোর্চার সংগঠকরা। তারা সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী চলাকালে এ দাবি জানান। বক্তারা বলেন, দুষ্কাল আমাদের পেছন ছাড়ছে না। একের পর এক অভাবনীয় সব অন্যায়-আনাচার-নৃশংসতায় চমকে উঠছি। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের রেশ না কাটতেই সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের মাধ্যমে যুবককে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই দুষ্কাল থেকে মুক্তি চাই। বক্তারা বলেন, জেলা প্রশাসক জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটিরও সভাপতি। আমরা জেলা প্রশাসককে এই দুষ্কালের ছবিগুলো দেখাতে চাই। যাতে তিনি উপলব্ধি করতে পারেন এই সময়ে তার জেলায় কি ঘটছে। এ সময় নৃশংসতা বন্ধে তিনি যাতে উদ্যোগী হন এই দাবিতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। বক্তারা বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার মামলা তদন্তের জন্য পিবিআইকে হস্তান্তর করা হলেও এখন পর্যন্ত আমরা তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি দেখছি না। এখন পর্যন্ত কোন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাই আমরা মনে করি পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত পুলিশের কোন বাহিনী দ্বারা সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। এই আয়োজনে সিলেটের বিভিন্ন চিত্রশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।
×