ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে

প্রকাশিত: ২০:২১, ১৮ অক্টোবর ২০২০

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ পদ্মা নদীর লৌহজং ও চায়না চ্যানেলে ডুবোচর ও নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। রবিবার দুপুরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত প্রায় চার মাস ধরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নৌযান চলাচল ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। এবার উপর্যুপরি বন্যা, তীব্র স্রোত, অন্যসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উজানে নদী ভাঙ্গন, চ্যানেল মুখে পলি জমে যাওয়ায় নাব্য সংকট চরম আকার ধারণ করায় বিপর্যয় নেমে আসে নৌযান পারাপারে। ড্রেজিং করে এই নৌপথ সচল রাখতে বিআইডাব্লিউটিএ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রকৃতির কাছে কর্তৃপক্ষের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে তাও সঠিক করে কেউ বলতে পারছে না। কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই এ নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুইদিন চলে তো ৩/৪ দিন বন্ধ থাকে। আবার গত ২মাসের বেশি সময় ধরে শুধু দিনের বেলায় সীমিত পরিসরে ফেরি চলাচল করছে। ফের বন্ধ রাখা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ৫ থেকে ৬টি ফেরি সীমিত যানবাহন নিয়ে চলাচল করছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে চলাচলরত ৫টি ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রবিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেরি চলাচলে অচল অবস্থার সৃষ্টি হলে স্বাভাবিক ছিলো লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল। রবিবার দুপুর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রবিবার দুপুর ২টার দিকে বেশ কয়েকটি লঞ্চ চ্যানেল দিয়ে পারাপার হতে না পেরে ডুবোচরে আটকে যায়। চরে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করা হয় স্পিডবোট ও ট্রলারে। সেখানেও রয়েছে যাত্রী হয়রানী ও বিড়ম্বনা। চ্যানেল মূখ থেকে যাত্রী প্রতি আদায় করা হয়েছে ১৫০ টাকা করে। এক প্রকার জোরপূর্বক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এ সব দেখার বা প্রতিকারের কেউ নেই। এই নৌপথে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা সম্পূর্ণভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রবিবার দুপুরে ডুবোচরে আটকে পড়া লঞ্চ উদ্ধারে বাঁশ ফেলে চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে ঘটছে নৌদুর্ঘটনা। গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সকালে মুন্সিগঞ্জের পদ্মানদী অংশে ঘটনা ঘটে। যাত্রীবাহী একটি লঞ্চের ৩০০ যাত্রীকে উদ্ধার করে মাওয়া কোস্টগার্ডের সদস্যরা। লঞ্চটি ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি যাচ্ছিল। মাঝ পথে পদ্মা সেতুর পিলারের কাছে ডুবতে বসে লঞ্চটি। তাৎক্ষণিক কোস্টগার্ড সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে এম ভি মালেক দরবেশ-১ নামে ওই লঞ্চের যাত্রীদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। এর কয়েকদিন আগে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি থেকে শিমুলিয়া যাওয়ার পথে ড্রেজারের পাইপের সাথে ধাক্কা লেগে একটি লঞ্চের তলা ফেটে যায়। খবর পেয়ে কাঁঠালবাড়ি থেকে দ্রুত একটি খালি লঞ্চ ঘটনা স্থলে গিয়ে ১৫০ যাত্রী উদ্ধার করে। এর এক সপ্তাহ আগে একইভাবে তলা ফেটে গেলে লঞ্চ চালকের বুদ্ধিমত্তায় দ্রুত চালিয়ে লঞ্চটি চরে ঠেকিয়ে দিলে প্রাণে বেঁচে যায় ২০০ যাত্রী। কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা হায়াত ইবনে সিদ্দিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সকালে মাঝিরকান্দি ঘাটে যাওয়ার পথে জাজিরা পয়েন্টে পদ্মাসেতুর নীচে ডুবতে বসে লঞ্চটি। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির হন কোস্টগার্ড সদস্যরা। তারা লঞ্চের ৩০০ যাত্রীকেই নিরাপদে উদ্ধার করে। পানি কম থাকায় ও বেশি যাত্রী বহন করায় এ ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারকৃতদের পরবর্তীতে অন্য লঞ্চে করে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানান তিনি। শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডাব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মোঃ শাহদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, লঞ্চটি পদ্মার চরে আটকে গিয়েছিল। কয়েকদিন ধরে নদীর ওই জায়গায় ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ওই লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ছিল ১৫০ জনের আর যাত্রী নেওয়া হয়েছিল ১৬৫ জন বলে দাবি করেন তিনি। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথের মেরিন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ সাংবাদিকদের জানান, নাব্য সঙ্কটে ফেরি পারাপার বন্ধ আছে। প্রায় ২মাস ধরে দফায় দফায় দিনের বেলা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বন্ধ করা হয় ফেরি চলাচল। কখন ফেরি চালু হবে তা বলা মুশকিল। চ্যানেলে নাব্য ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই শুধু দিনের বেলা ৪-৫টি ফেরি চলাচল করছিল। সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিদিন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ নৌরুট ব্যবহার না করার জন্য।
×