ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের কমিটিতে মূল্যায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৪ অক্টোবর ২০২০

ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের কমিটিতে মূল্যায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘মাইম্যান’ কিংবা কারোর প্রভাবিত কমিটি নয়; দলের ত্যাগী, দুর্দিনের পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়ন এবং বিতর্কিত কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সারাদেশেই স্বচ্ছ দলীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছে তাদেরও দলে টানতে হবে। দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা যাতে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বাদ না পড়ে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না, কেউ অন্যায় করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি। বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সারাদেশ থেকে জমা পড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি যাচাই-বাছাই, যেসব জেলা-মহানগরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত নিরসন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-মহানগর-উপজেলা কমিটিগুলো দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে আট বিভাগের জন্য আটটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, যেসব জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটিও জমা দিয়েছে। এ ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন কোন বিতর্কিত লোক কমিটিতে না আসতে পারে। কোন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন কোন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে। এদের বাদ দিতে সব বিভাগে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আর দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতারা যেন কমিটিতে মূল্যায়ন হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে দু/একজন করে সভাপতিম-লীর সদস্য থাকবেন। বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ও লে. কর্নেল (অব) ফারুক খানকে ঢাকা দুই মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের কমিটিগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকা মহানগরের প্রস্তাবিত কমিটিতে ঢাকার ভোটার নন এমন নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ আরও দু’জন। তাঁদের অভিযোগ, ঢাকার ভোটার না হওয়ার কারণে ভোটের সময় মহানগর নেতাদের অধিকাংশকেই পাওয়া যায় না, এতে ভোটের সময় সঙ্কট সৃষ্টি হয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও ত্যাগীদের প্রাধান্য দিতে হবে। অনেক জেলায় সমস্যা আছে, দ্রুত সেগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কমিটি করা যাবে না। বৈঠক সূত্র জানায়, এ সময় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকা বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরে বলেন, সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই দুর্বল হচ্ছে এই বিভাগ। ঢাকা শহরে একটি থানাতেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন ছাড়া আগামীতে কমিটি গঠন করতে নিষেধ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। সাংগঠনিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে বলেন, সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে কোথায় কি সমস্যা ফেস করছেন, সেটা আমাকে অবহিত করবেন। আমি চাই তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছে তাদেরও দলে টানতে হবে। সাংগঠনিক কাজ করতে হলে কোন সমস্যা হলে দলের সেক্রেটারি আছে তাঁকে জানাবেন, প্রয়োজন হলে আমাকেও জানাবেন। জেনে ব্যবস্থা নেব। তবে দলকে সারাদেশেই শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে। আগামীতে যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে সে ব্যাপারে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে করোনার কারণে যে কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলেন তিনি। ‘মাই ম্যান’ কমিটি গঠন করা যাবে না ॥ এদিকে বৈঠক শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কমিটিগুলোতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হলেই নিজেদের লোক দিয়ে ‘মাই ম্যান’ (নিজস্ব বলয় সৃষ্টির জন্য) কমিটি গঠন করা যাবে না, কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন ও পরীক্ষিত নেতাদের কমিটিতে রাখতে হবে। তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই দলের অভ্যন্তরে বিতর্কিতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। তৃণমূলের সকল কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হলে মাঠের লোকরাই নেতা হবেন। আর সম্মেলন ছাড়া কমিটি হলে লবিংয়ে বা তদবিরের লোক নেতা হয়। পরে তিনি আট বিভাগের জন্য পৃথক আটটি সাংগঠনিক টিমের নাম ঘোষণা করেন। আটটি সাংগঠনিক বিভাগীয় টিম গঠন ॥ বৈঠকে দেশের আটটি সাংগঠনিক বিভাগের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে ৮টি শক্তিশালী সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এসব বিভাগীয় টিম বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সমস্যাসমূহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা সমাধান করবে। একই সঙ্গে জমাকৃত জেলা-মহানগর কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করবেন। গঠিত বিভাগীয় কমিটির মধ্যে ঢাকা বিভাগের টিম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এছাড়া সভাপতিম-লীর সদস্য ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, লে কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানসহ সম্পাদকম-লীর সদস্য ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ মোট ১৭ জন ঢাকা বিভাগে কাজ করবেন। তাঁরা হলেন- ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মৃণাল কান্তি দাস, দেলোয়ার হোসেন, শামসুন্নাহার চাঁপা, মেহের আফরোজ চুমকি, সিদ্দিকুর রহমান, ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, সানজিদা খানম, সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ময়মনসিংহ বিভাগে টিম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এই বিভাগে সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীসহ আরও চারজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন- অসীম কুমার উকিল, মারুফা আক্তার পপি ও রেমন্ড আরেং। সিলেট বিভাগে টিম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। এছাড়া সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আরও দুই সদস্য রয়েছেন। তাঁরা হলেন- ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী এবং সায়েম খান। চট্টগ্রাম বিভাগে টিম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। এছাড়া এই বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও আবদুল মতিন খসরু। এছাড়া মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ওয়াসিকা আয়েশা খান, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. সেলিম মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম আমিন ও দীপংকর তালুকদারও রয়েছেন এই কমিটিতে। বরিশাল বিভাগে টিম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। এছাড়া আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. শাম্মী আহমেদ, গোলাম রব্বানী চিনু ও আনিসুর রহমান বরিশাল বিভাগে কাজ করবেন। রংপুর বিভাগে টিম সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এছাড়া সভাপতিম-লীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, শাজাহান খানসহ কমিটির সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান, হোসেনে আরা লুৎফা ডালিয়া, সফুরা বেগম রুমি রংপুর বিভাগে কাজ করবেন। রাজশাহী বিভাগের টিম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। এছাড়া সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমানসহ ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, নুরুল ইসলাম ঠা-ু, মেরিনা জাহান ও বেগম আখতার জাহান রাজশাহী বিভাগে কাজ করবেন। খুলনা বিভাগের টিম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্যসহ হাবিবুর রহমান সিরাজ, আমিরুল ইসলাম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা খুলনা বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন।
×