ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হচ্ছে ১৭০ টন, দেড় লাখ টন পাইপলাইনে

আমদানির পেঁয়াজ দ্রুত আসছে

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

আমদানির পেঁয়াজ দ্রুত আসছে

এম শাহজাহান ॥ দাম কমিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত দেশে নিয়ে আসা শুরু হয়েছে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার দ্রুত সময়ে মসলা জাতীয় এই পণ্য নিয়ে আসলেন আমদানিকারকরা। আগামী দু’একদিনের মধ্যে এসব পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে এসে পৌঁছেছে ১৭০ মে. টন পেঁয়াজ। মঙ্গলবার খালাস হয়েছে প্রথম চালানের ৫৪ মে. টন এবং ১১৬ মে. টন খালাসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া পাইপলাইনে রয়েছে আরও দেড় লাখ টন পেঁয়াজ। বাজার সামাল দিতে এবার ভারতের বিকল্প বিশ্বের ১১ দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার অনুমতি নিয়েছেন আমদানিকারকরা। এর মধ্যে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি ১ লাখ টন পেঁয়াজ আনছে তুরস্ক থেকে। নেদারল্যান্ডস থেকে বিপুল পরিমাণ আমদানি কার্যক্রম শুরু করেছে এস আলম গ্রুপ। এর বাইরে আরও প্রায় ৫ শতাধিক আমদানিকারক পেঁয়াজ আনতে ঋণপত্র খুলেছেন। আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজ দেশে আসলে দাম কমে আসবে। এছাড়া বাজার সয়লাব হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জানা গেছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করলে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে সরকারীভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার, বাকিতে এলসি খোলার সুযোগ, সুদের হার হ্রাস, বন্দরে দ্রুত ছাড়করণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন আমদানিকারকরা। আর এ কারণে এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ এই পেঁয়াজ দেশে নিয়ে আসা সম্ভব হলে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফরউদ্দিন পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ তিন জেলা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি কৃষকদের কথা শুনেছেন। এছাড়া তিন জেলা ফরিদপুর, রাজবাড়ী এবং মানিকগঞ্জে তিনটি হিমাগার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানি একটি স্থায়ী সমাধান নয়। এ বছর উৎপাদন কম হওয়া এবং ভারত রফতানি বন্ধ করায় এখন আমদানি করে প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। আর এ কারণে উৎপাদন ও পেঁয়াজ সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৯০-১০০ এবং আমদানিকৃত বড় সাইজের ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। গত একমাস ধরে এই দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এতে করে স্বল্পআয়ের মানুষ বেশ চাপে রয়েছেন। এ কারণে টিসিবি ট্রাকসেলে ৩০ টাকা দরে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এর পাশাপাশি অনলাইনে ৩৬ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন ই-কমার্সের ৫টি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ বিক্রির সুযোগ পায়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসছে দেড় লাখ টন পেঁয়াজ ॥ হাসান নাসির চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানিয়েছেন, সঙ্কট মোকাবেলায় ভারতের বিকল্প দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। দু’দিনে বন্দরে এসে পৌঁছেছে ১৭০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। এরমধ্যে মঙ্গলবার খালাস হয়েছে প্রথম চালানের ৫৪ মেট্রিক টন। আরও ১১৬ টন পেঁয়াজ খালাস প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে প্রায় দেড়লাখ টন পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ এসে পৌঁছালে বাজার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছেন আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে পেঁয়াজ এসে পড়ার খবরের প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। দু’একদিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান বুলবুল জনকণ্ঠকে জানান, এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৩২৯টি অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন ও মিসরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এ পেঁয়াজ আমদানি করবেন। সঙ্কট মোকাবেলায় দ্রুততার সঙ্গে যেন পেঁয়াজ আমদানি হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকার রাখা হয়েছে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা প্রথম চালানের ৫৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মঙ্গলবারই খালাস হয়েছে। এ পেঁয়াজের আমদানিকারক চট্টগ্রামের কায়েল স্টোর। দুটি কন্টেনারে জাহাজযোগে এ পেঁয়াজ আসে। বন্দরে এসে পৌঁছেছে পাকিস্তান থেকে আরও ১১৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। এ নিয়ে দুদিনে এসেছে মোট ১৭০ টন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব সৈয়দ ওমর ফারুক জানান, আমদানির পেঁয়াজ পরীক্ষা করে বেশ দ্রুততার সঙ্গে ছাড়পত্র প্রদান করছে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র। কাস্টমস কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। আমদানির পেঁয়াজ যেন দ্রুত বাজারে চলে যেতে পারে সে জন্য খালাসের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। তিনি জানান, পেঁয়াজের জাহাজ এসে পৌঁছালে যেন খালাসে বিলম্ব না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলপক্ষই সচেতন রয়েছে। এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হওয়ার পর বাজারে যে উর্ধগতি শুরু হয়েছিল তা কিছুটা হলেও থমকে গেছে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির খবরে। এতে করে খানিকটা স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দামে যে উর্ধগতি সোমবারও ছিল তেমনটি মঙ্গলবার দেখা যায়নি। খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইদ্রিস জনকণ্ঠকে জানান, আমদানির পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাজারে আসতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার মানভেদে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত কয়েকদিন ধরেও প্রায় এমনই ছিল। পেঁয়াজের মূল্য আরও বাড়তে পারে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করছে সরবরাহের ওপর। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় দেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
×