ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোন আপোস নয়

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

কোন আপোস নয়

ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাইরাইনের চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই অধিকৃত পশ্চিম তীর, রামাল্লা ও গাঁজা উপত্যকায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইলী ভূখ-ে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে ইসরাইল-আমিরাত ও বাইরাইনের মধ্যে এ চুক্তি হয়। খবর আলজাজিরা, এপি ও সিএনএন অনলাইনের। চুক্তির খবরে শরীরে ফিলিস্তিনী পতাকা জরিয়ে, পশ্চিমতীর, নাবলুস, হেব্রন ও গাজার রাস্তায় শত শত নারী-পুরুষ নেমে আসেন। এ সময় প্রতিবাদকারীরা এ চুক্তিকে প্রতারণা, দখলদারদের সঙ্গে আপোস নয়, এই ধরনের চুক্তি লজ্জাজনক ইত্যাদি ব্যানার প্রদর্শন করে। প্রতিাবাদকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, বাইরাইনের সুলতান হামাদ বিন ইসা আল খলিফা ও আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনীর দখলকৃত ভূমি ছেড়ে দিলেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে। তিনি বলেন, তেলআবিব এ অঞ্চলে দখলদারিত্ব না ছাড়লে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা আসবে না। ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাত ও বাইরাইনের চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই এক বিবৃতিতে এর নিন্দা জানিয়ে মাহমুদ আব্বাস আরও বলেন, ফিলিস্তিনীরা এই ধরনের কর্মকা-কে বিশ^াসঘাতকতার চোখে দেখবে। এদিকে চুক্তির পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের জন্য ‘কালো দিবস’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে এ্যাক্টিভিস্টরা সামাজিক মাধ্যমে এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেন সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ ব্যাপারে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর তিনি এমন কথ বললেন। সৌদি আরব বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথ অনুসরণ করবে কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তা মনে করি। বিষয়টি নিয়ে আমি সৌদি আরবের বাদশাহ’র সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আরও বলেন, ‘যথা সময়ে’ তা জানা যাবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি আরও সাত বা আট অথবা নয়টি দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। ইসরায়েল-ইউএই-বাহরাইন চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন মধ্যপ্রাচ্যের সূর্যোদয় আখ্যা দিয়েছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিকে সই করে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। ঐতিহাসিক এ চুক্তির প্রশংসা করেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসে তিন দেশের এ চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠান হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নাটকীয় একটি মাসের সমাপ্তি ঘটল; যে মাসে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের কয়েক দশকের বিরোধ নিষ্পত্তি ছাড়াই প্রথমে আরব আমিরাত এবং পরে বাহরাইন তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু, আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ আল জায়ানি নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তিন দেশই চুক্তিটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছে। এই চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে পুরোপুরি স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলো। এর আগে ১৯৭৯ সালে মিসর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। আরব দেশগুলো কয়েক দশক ধরেই ইসরাইলকে বয়কট করে এসেছে। তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে তাদের শর্ত ছিল, আগে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরাইলের বিরোধের অবসান ঘটতে হবে। আর এখন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের বিষয়টির পাশাপাশি তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিকাশ নিয়ে উদ্বেগের কারণে আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করল বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘আজ ইতিহাসের নতুন অধ্যায় শুরুর দিন। এর মধ্য দিয়ে শান্তির নতুন ভোরের সূচনা হলো। আগস্টে আরব রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে তেলআবিবের সম্পর্ক স্থাপনের খবর আসে। এরপর ট্রাম্প প্রশাসনের দৌড়ঝাঁপ কুটনীতিতে বাইরাইন ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়।
×