ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশই ছিল গাড়ি চাপায়

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশই ছিল গাড়ি চাপায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানামুখি উদ্যোগের পরও সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা থেমে নেই। গাড়ি চাপায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত এক মাসের পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে এরমধ্যে মোট দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশই ছিল গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা। এছাড়া মোটরসাইলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে একথা বারবারই বলছিলেন পরিবহন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। অগাস্টে সড়ক দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশই ঘটেছে মোটরসাইকেলে। অর্থাৎ এই পরিসংখ্যান আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল লাটভাইখ্যাত মোটরসাইকেল চালকদের আইন মেনে গাড়ি চালাতে বাধ্য করার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ চিত্র ওঠে এসেছে। বুধবার দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর আগস্ট মাসে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪৪৪টি দুর্ঘটনায় ৫৫৩ জনের মৃত্যু এবং ৬৬৯ জন আহত হয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, অগাস্ট মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৮৮টি দুর্ঘটনায় ৪৫৯ জন নিহত ও ৬১৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ১৫টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৪১টি দুর্ঘটনায় ৮০জন নিহত ও ৫২জন আহত এবং ৩১জন নিখোঁজ হওয়ার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সামাজিক সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগাস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে ১৯৮ জন চালক, ১২৫ জন পথচারী, ৮০ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ৩৮ জন শিক্ষার্থী, ২২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন পুলিশ, একজন বিমান বাহিনীর সদস্য, একজন সিআইডির সদস্য এবং একজন সেনাবাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া ৯ জন শিক্ষক, ৮ জন রাজনৈতিক কর্মী, তিনজন চিকিৎসক, একজন সাংবাদিক এবং একজন প্রকৌশলীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৬৭ জন চালক, ১১০ জন পথচারী, ৬৩ জন নারী, ৩৪ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ছয়জন রাজনৈতিক কর্মী, ছয়জন শিক্ষক, তিনজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী, একজন সাংবাদিক এবং পাঁচজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। অগাস্টে সড়ক দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশই ঘটেছে মোটরসাইকেলে এতথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এছাড়া ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ ক্ষেত্রে বাস, ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ক্ষেত্রে অটোরিকশা, ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ক্ষেত্রে নছিমন-করিমন, ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ ক্ষেত্রে কার-জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েছে। পুরো মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৪ আগস্ট। সেদিন ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ৪৬ জন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনার খবর এসেছে ১৯ আগস্ট। সেদিন চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় চরজনের মৃত্যু এবং তিনজনের আহত হওয়ার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন বলছে, মোট দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশই ছিল গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা। ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে দুই বাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি খাদে পড়ে যাওয়া, ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্যভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রেনের সঙ্গে কোনো বাহনের সংঘর্ষ এবং শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ ক্ষেত্রে চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই মাসে মোট দুর্ঘটনার ৪৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ ফিডার রোডে ঘটেছে। এর বাইরে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঢাকা মহানগরীতে, ২ দশমিক ০৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে ঘটেছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও জাতীয় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা ইজিবাইক উঠে আসায় এবং বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোটরসাইকেলের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি এবং বেপরোয়া চলাচল সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাড়াঁচ্ছে। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বাড়ায় এবং জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোজাম্মেল বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পদ্ধতি ঢেলে সাজানো ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
×