ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই মহামারীর মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই মহামারীর মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্যদের দেখেছি কেবল লিফ সার্ভিস দিতে, মুখে মুখে কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে সাহায্য করার বিষয়টিতে অন্য দলগুলো বা এনজিওসহ কোনও সংস্থার উপস্থিতি সেইভাবে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই মহামারীর মধ্যে ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে’ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ আজ বুধবার গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দীর্ঘ বিরতির পর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এতদিন আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত ছিল। সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন মিটিং করতে পারিনি। এখন আস্তে আস্তে কিছু মিটিং শুরু করছি। সেই জন্য এ সভাটার আয়োজন করছি। দুঃখের বিষয় হলো করোনাভাইরাসে আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকে ধারণা করছিলেন আমাদের রেমিট্যান্স কমে যাবে। রেমিট্যান্স কিন্তু কমেনি। আমরা দুই শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি, যার কারণে বেড়েছে। অনেকেই ভাবতেই পারনি রেমিট্যান্স এত বাড়বে। আমাদের রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৪০ মার্কিন ডলার। রিজার্ভও ভালো অবস্থানে। অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি ভালো অবস্থায় আমরা আছি।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই ইকোনমিক পলিসি আছে। সেটাকে মাথায় রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করে যাই। এখন আমরা সরকারে আছি এজন্য আমাদের দায়িত্ব হলো শুধু বর্তমান নয়, আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের জন্য দেশটা কীভাবে এগিয়ে যাবে, দেশ কীভাবে চলবে, এখন থেকে সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখবো।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পরিবর্তন করতে হবে তা আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, একটা ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা; সেটা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনও কাজ খুব সহজে হয়। যারাই আসুক ভবিষ্যতে তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন! কাজেই তারপরে যারা আসবে তারা যেন দিকহারা না হয়ে যায়। তাদের যেন একটা দিকনির্দেশনা থাকে, একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সেজন্য আমরা প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করলাম। এরপর দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিলাম। ২০৪১ সাল পর্যন্ত কী হবে।’ তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০। সেখানে এখন আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশ হচ্ছে একটা ডেল্টা। আমাদের বদ্বীপ।’ এই বদ্বীপের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর ভাঙ্গন হচ্ছে, নদীগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচানোর জন্য এটা দরকার। আমরা ডেল্টা প্ল্যান যেটা করেছি। ডেল্টা প্ল্যানের লক্ষ্য, আমাদের যতগুলি বড় নদী এবং যা আছে, আমরা নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্য বজায় রেখে এই বদ্বীপটা রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত করা। আমাদের দেশের মানুষকে কীভাবে সুন্দরভাবে একটা জীবন দেওয়া যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি, বাস্তবায়ন করছি। জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে-এসডিজি-২০৩০। সাসটেইনবেল ডেভেলপমেন্ট গোল। অর্থাৎ একটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেখানে যে ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছিলাম। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে, এজন্য আমরা ঠিক আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ধারাগুলো সেগুলো নিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, ‘২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ থেকে ২০২১ এটাই আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ১৬-১৭’র মধ্যে নামিয়ে নিয়ে আসবো। ইতোমধ্যে ২০ ভাগ নামিয়ে এনেছি, যেখানে ৪০ ভাগ ছিল। সেটা আমরা ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। করোনার কারণে আমাদের এসব কাজ একটু শ্লথ হয়ে গেছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এই দারিদ্র্য যেন আবার মানুষকে গ্রাস করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি। পাশাপাশি একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আর্থিকভাবে মানুষ চলতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। এই কারণে কোনোভাবে সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয়।’ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে নগদ অর্থ প্রণোদনার কথা তুলে ধরে বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলে এইভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে এবং মানুষকে সহযোগিতা করেছে। অন্য কোনও দল হলে এটা মোটেই করতো না। বরং তারা দেখতো যে, কীভাবে এখান থেকে ফায়দা লুটতে পারে। কিন্তু আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমাদের নীতি, এটা আমাদের লক্ষ্য। এটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সেইভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’ করোনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহায়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুনলে অবাক হবেন, এমনকি রিকশার পেছনে যারা পেইন্টিং করে তাদের খোঁজ করে তাদের সাহায্য দেওয়া। এমনকি আমাদের আর্টিস্ট; যারা যন্ত্র সংগীতের সঙ্গে আছে যাদের কোনও স্থায়ী চাকরি নাই তাদেরও আমরা সাহায্য করেছি। বিভিন্নভাবে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই এইভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
×