ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গরু চুরির অপবাদ, মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে ঘোরানো হলো সড়কে

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৪ আগস্ট ২০২০

গরু চুরির অপবাদ, মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে ঘোরানো হলো সড়কে

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার হারবাং এলাকায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়েকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়েকে প্রকাশ্যে সড়কে ঘোরানোর পর নিয়ে যাওয়া হয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সেখানেও চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম নিজে তাদের ফের মারধর করেন। এ ঘটনা কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে প্রতিবাদ, নিন্দার ঝড় উঠেছে। এদিকে জনসম্মুখে দুই নারীকে নির্যাতন ও মারধরের একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে ওই দুই নারীকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তিনদিন আগে ঘটনা ঘটলেও চেয়ারম্যান ও তার লাঠিয়ালদের ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর এটি জানাজানি হয়। শুক্রবার দুপুরে চকরিয়া হারবাং পহরচাঁদা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মা ও মেয়ে চকরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বর্তমানে। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে চকরিয়া থানার হারবাং তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে পুলিশ ফোর্স পাঠাই। ফোর্স গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও জানান, স্থানীয় এক ব্যক্তির দায়ের করা গরু চুরির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে মা-মেয়েসহ চারজনের বাড়ি পটিয়ার শান্তির হাটে। অপরজনের বাড়ি চকরিয়া লালব্রিজ এলাকায়। হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ ওদের কেউ করেনি। আমাদের ফোর্স যখন ঘটনাস্থলে যায়, তখন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসাটাই প্রাধান্য দিয়েছি। আর ভুক্তভোগী কিংবা অন্য কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ওই দুই নারীকে শ্লীলতাহানি করে মাথার ওড়না পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম চৌকিদার আমিনকে পাঠিয়ে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন চালান। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে মা-মেয়ের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন বুঝতে পেরে চেয়ারম্যানের লোকজন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে দেয়। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া যায়নি। কক্সবাজারের সমাজসেবী কলিম উল্লাহ বলেন, এটি কেমন বিচার চেয়ারম্যানের? আমরা এর বিচার চাই। মা- মেয়েকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে জনতার সামনে রশি দিয়ে বেঁধে পেটানোর পর চকরিয়া হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তার কার্যালয়ে নিয়েও আবারও পেটায় বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবী এহছান উল্লাহ মানিক জনকণ্ঠকে বলেন, এটা কেমন বিচার? ওই দুই মহিলা চেয়ারম্যানের এলাকার বাসিন্দাও নন। চট্টগ্রামের পটিয়ার দুই ভদ্র নারীকে এভাবে নির্যাতন করে বিচার করার অধিকার চেয়ারম্যান কিভাবে পেল? পুরুষ নয়-মহিলা অর্থাৎ মা মেয়ে এক জেলা থেকে ভিন্ন জেলায় গিয়ে গরু চুরি করতে পারে কি? চুরির অভিযোগে অতীতেও আমাদের দেশে হাজারো কলঙ্কের কালিমা লেপটে দিয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। উখিয়ার গণমাধ্যমকর্মী শ.ম গফুর বলেন, ধিক্কার জানাই চেয়ারম্যান পরিচয়ী নরপশুর। চকরিয়ার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যা হয়েছে, এসবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
×