ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ও বন্যার আঘাত ॥ কমে যেতে পারে কোরবানিদাতা

সীমান্তপথে গরু না এলেও চিন্তায় পশু খামারিরা

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২৫ জুলাই ২০২০

সীমান্তপথে গরু না এলেও চিন্তায় পশু খামারিরা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সীমান্তপথে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকায় আসন্ন কোরবানির ঈদে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় ছিলেন খামারিরা। কিন্তু করোনাভাইরাস, মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের। সব মিলিয়ে এবার কোরবানিদাতা কমে যেতে পারে, এমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে হাটবাজারে সাধারণ মানুষের যে তোড়জোড় লক্ষ্য করা যেত, এবার তেমন মনে হচ্ছে না। ফলে প্রস্তুত হওয়া গবাদিপশুর একটি বড় অংশ অবিক্রীত থেকে যেতে পারে, এমন ধারণা খোদ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের। ঈদ-উল-আজহার মাত্র একসপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে বাজারগুলো জমে ওঠার কথা। বেচাকেনা পুরোপুরি শুরু না হলেও দেখাদেখির কাজটা আগে থেকেই শুরু হয়। কিন্তু এবার নানা প্রতিকূলতায় সেই উচ্ছ্বাসেও ভাটা পড়েছে। খামারি এবং গরু ব্যবসায়ীরা রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তারা ধারণাই করতে পারছেন না, এবারের কোরবানিতে কেমন হবে তাদের ব্যবসা। ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তপথে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত থেকে গরু আসা এবার একপ্রকার বন্ধই বলা যায়। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের পূর্বে সীমান্তে যে পশুরহাটগুলো বসানো হতো তাও এবার নেই। ঈদের আগে মিয়ানমার থেকে কিছু গরু এলেও তা উল্লেখ করার মতো নয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত গবাদিপশুর করিডর দিয়ে দেশে গরু এসেছে ৩৫ হাজার ৩২৩টি। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৭ হাজার ২৩১, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ হাজার ৯৫০, মার্চ মাসে ৫ হাজার ৮৬৯, এপ্রিল মাসে ১১৮ এবং মে মাসে ২ হাজার ১৫৫টি গরু আসে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৬২ টাকা। জুন ও জুলাই মাসে কত গরু এসেছে সে তথ্য মেলেনি। তবে ঈদকে সামনে রেখে কিছুটা বেশি এলেও তা তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করছেন গবাদিপশু ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এ বছর কোরবানির ঈদে দেশে ১ কোটি ১০ লাখ গবাদিপশুর চাহিদা থাকার কথা। সাধারণত প্রতিবছর আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে এ হিসাব করা হয়। এ বছর দেশের খামারগুলোতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি গবাদিপশু। এছাড়া অবিক্রীত গরু রয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ। করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ মাস থেকে দেশে বন্ধ রয়েছে বিয়ে, মেজবান এবং সকল ধরনের সামাজিক উৎসব। ফলে বাজারে মাংস বিক্রি ছাড়া পশু জবাই গত কয়েক মাসে ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এ পশুগুলোও যুক্ত হয়েছে মোট মজুদের সঙ্গে। ফলে দেশী পশু দিয়ে এবার অনায়াসেই মিটে যাবে কোরবানির পশুর চাহিদা। শুধু তাই নয়, অনেক উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েসনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, তিনটি কারণে এবার কোরবানিদাতার সংখ্যা কমে যেতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। কারণগুলো হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। এতে অনেকের আয় কমে যাওয়া এবং সবশেষে দেশের একটি বিরাট অংশজুড়ে ভয়াবহ বন্যা। করোনার কারণে অনেকে কর্ম হারিয়েছেন, তাদের আয় কমেছে। ফলে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত অনেকেই কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। বন্যার কারণে অনেক অঞ্চলেই পশু জবাই করার অবস্থা নেই। ফলে এবার কোরবানির চামড়া সংগ্রহও কমে যেতে পারে। ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের এ নেতা আরও জানান, গত বছর ট্যানারিগুলোর জন্য গরুর চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ লাখ। এছাড়া মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল ২৫ লাখের বেশি। এবার কোরবানিদাতার সংখ্যা কমে যেতে পারে। যারা একা কোরবানি দিতেন তাদের অনেকেই হয়ত ভাগে কোরবানি দেবেন। চট্টগ্রামের সাগরিকা পশুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য হাটগুলোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এখনই ২০ হাজারের ওপর পশু মজুদ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসছে। বিশেষ করে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, মাগুরা, ফরিদপুরসহ উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে গরু এসে থাকে। ঈদকে সামনে রেখে গরুর বাজারগুলো কয়েকদিনের মধ্যে ঠিকই জমে উঠবে। তবে এখন পর্যন্ত যে লক্ষণ, তা বরাবরের মতো নয়। কেননা, গরু আগেভাগে বিক্রি না হলেও আগ্রহীদের দেখাদেখির কাজটি চলতে থাকে। কিন্তু এবার উচ্ছ্বাস কিছুটা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। পশুর দাম বেশি না কম থাকবে বা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণাও করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
×