ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের মৌখিক নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৬ জুলাই ২০২০

সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের মৌখিক নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। আসাদুল ইসলাম বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় এমন তথ্য দিয়েছেন। বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় তিনি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের কাছে কাগজ জমা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক, এমপিসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিয়েছি। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের কাছে কাগজ জমা দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যার বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন মহাপরিচালক। বুধবার স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিখিত জবাব দিয়েছেন, আমরা সেটি পেয়েছি। সেই জবাবের সঙ্গে তিনি অনেক কাগজ সংযুক্তি দিয়েছেন। সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। আমরা দেখব, তার কাছে যা জানতে চেয়েছি সেগুলো তার জবাবে আছে কিনা। জবাবে সন্তুষ্ট হলেও আমরা লিখিতভাবে জানাব এবং সন্তুষ্ট না হলে ব্যবস্থা নেব তা আপনারা জানবেন। স্বাস্থ্য সচিব আরও বলেন, মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তির লিখিত আদেশ এই ব্যাখ্যার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে কিনা। সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে সেই চুক্তি করা হয়েছিল বলে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন মহাপরিচালক। সব বিস্তারিত জানার জন্যই আমরা তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম বলে জানান সচিব আবদুল মান্নান। চুক্তির দায় নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির আগে অধিদফতর তাদের কাছে কোন নথি পাঠায়নি, কোন প্রস্তাবও পাঠায়নি। তবে ওই হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। সেই দাওয়াতেই মন্ত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র বলেছে, মন্ত্রণালয়কে জানিয়েই তারা চুক্তি করেছে, চুক্তির আগে মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেই প্রমাণ তাদের কাছে আছে। তারই ধারাবাহিকতায় অধিদফতরের মহাপরিচালক বুধবার মন্ত্রণালয়ের কাছে তার বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন। মানুষ যখন করোনা পরীক্ষা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছে, তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে জেকেজির নকল পরীক্ষা সনদের বিষয়টি সামনে এল। এরপরই রিজেন্টের অনিয়ম দেশবাসীর সামনে হাজির হলো। প্রশ্ন উঠেছে কার দোষ বেশি, তা নিয়ে। মন্ত্রণালয়ের, না অধিদফতরের। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে ১১ জুলাই অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়।’ ১২ জুলাই সংবাদপত্রে তা ছাপা হয়। ওই দিনই স্বাস্থ্য অধিদফতরের বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে অধিদফতরকে জরুরী চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ জানাতে বলা হয়। গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মধ্যে নানা কাজে দ্বৈধতা ও মতভিন্নতা আছে। করোনা নিয়ে ব্রিফিং শুরু থেকে করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা একই কাজ মন্ত্রণালয়ে শুরু করেন। একই ধরনের কমিটি মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর গঠন করে। অধিদফতর গঠন করেছিল পাবলিক হেলথ এ্যাডভাইজারি কমিটি। আর মন্ত্রণালয় গঠন করে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
×