ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আগ বাড়িয়ে প্রস্তাব দান সাহেদের চাল ছিল ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৬ জুলাই ২০২০

আগ বাড়িয়ে প্রস্তাব দান সাহেদের চাল ছিল ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তারের মধ্যে সঙ্কটময় মুহূর্তে আগ বাড়িয়ে আক্রান্তদের রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়াটা যে প্রতারক মোহাম্মদ সাহেদের চাল ছিল তা কেউ ধরতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, প্রতারণা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন প্রতারণা করে কেউ রেহাই পাবে না। গ্রেফতার হওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিষয়ে তিনি বলেছেন, প্রতারকরা সব সময় কোন না কোন ফাঁকফোকর বের করে নেয়। সেজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও সব সময় সজাগ থাকে। আমরা কিন্তু কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। যেদিনই প্রতারকদের প্রতারণা প্রকাশিত হচ্ছে, তখনই আমরা তাকে ধরছি। প্রতারকরা কেউ বাদ যাবে না, এই জায়গায় আমরা শক্ত অবস্থানে আছি। কোভিড-১৯ পরীক্ষা না করে সনদ দেয়া ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগে সাহেদকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় আনার পর ধানম-ির বাসভবনে বাড়িতে বুধবার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গী দমন করে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর সময়ও তারা নির্ভয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অনন্য কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সাহেদ সব সময় ফাঁকফোকর খুঁজেছে- কীভাবে সে বেরিয়ে যাবে, কীভাবে প্রতারণা করবে। তিনি বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করেছে। কিন্তু এবার সবকিছু উদঘাটন করে আইনের কাছে বা বিচারকের কাছে আমরা হস্তান্তর করব। সে যাতে আর কোন ধরনের প্রতারণা করতে না পারে, সে যেন আর কোন সুযোগ না পায় সেটা আমরা দেখব। সাংবাদিকরা জানতে চান, অতীতে সাহেদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এখন সরকারী দলে এসে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম ও প্রতারণা করছে। সে ক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা- যাতে এসব লোক যাচাই-বাছাই ছাড়া কমিটিতে আসতে না পারে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে অনেক কিছুই করেছে। অনেক ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়েছে। এজন্য দলের হোক কিংবা যে কোন ব্যক্তি হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, আমাদের দলের হোক কিংবা আমাদের জনপ্রতিনিধি হোক কিংবা সরকারী কর্মকর্তা হোক, প্রতারণা বা অপরাধ করলে কেউ কিন্তু বাদ যাচ্ছেন না। কাজেই এটা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি দলে প্রবেশ করানোর আগে আরও ভাল করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবসময় এটি বলে আসছেন। তিনি এ ব্যাপারে অনেক যাচাই-বাছাই করে দল চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। আমরা মনে করি এই ফাঁকফোকর দিয়ে যারাই দু’একজন বের হচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আমরা দল থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তারের মধ্যে সঙ্কটময় মুহূর্তে আগ বাড়িয়ে আক্রান্তদের রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়াটা যে প্রতারক মোহাম্মদ সাহেদের চাল ছিল তা কেউ ধরতে পারেনি। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমরা অনেক হাসপাতাল খুঁজছিলাম। কেউ তখন দিবেন কি দিবেন না- এ রকম একটা ভয়ের প্রসঙ্গ এসেছিল সামনে। সে (সাহেদ) তখন এগিয়ে এসেছিল, এটা যে একটা তার চাল ছিল; সেটা তো অনেকেই তখন বুঝতে পারিনি। আমিও তার হাসপাতালে ৪-৫ জন রোগী পাঠিয়েছিলাম। এটা আমার এখনও মনে পড়ে। সাহেদ সবসময় প্রতারণার ফাঁকফোকর তৈরিতে লেগে থাকত এবং তার জন্য ‘টেলিভিশনের টক-শোতে’ গিয়ে নিজের একটা ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, আপনারা এখনই বলবেন, অনেকের সঙ্গে তার ফটো রয়েছে, অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই ধরনের সুযোগ তিনি সব সময় নিয়ে থাকেন এবং এই পর্যন্ত এসেছেন। আসাদুজ্জামান খান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সবাই যখন উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই সময় মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে যে প্রতারণা সাহেদ করেছেন, তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং আমরা মনে করি, প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে বিচারকের কাছে পাঠিয়ে দেব। তার যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়, সেটাই আমরা ব্যবস্থা করব। কোন ‘দুষ্কৃতিকারী’ শেখ হাসিনার আমলে পার পাচ্ছে না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেদিন আপনারা (সাংবাদিক) জানতে চেয়েছিলেন সাহেদকে ধরা হবে কি না। আমি জোর দিয়ে বলেছিলাম, যেই হোক তাকে ধরা হবে। মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা আর জালিয়াতির মামলায় এক সপ্তাহ ধরে পলাতক রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার এড়াতে সে পরিচিত আধা-পাকা চুলে কলপ দিয়েছে ও গোঁফ ছোট করছে কিন্তু তারপরও ধরা পড়ল। এখন সে র‌্যাবের সদর দফতরে রয়েছে।
×