ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা গ্রুপ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ১৪ জুলাই ২০২০

যমুনা গ্রুপ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক এ্যাপোলো) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বিশিষ্ট শিল্পপতির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীসভার সদস্যগণ। এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। গত ১৪ জুন নুরুল ইসলাম বাবুলের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওইদিনই তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনায় তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভার কেয়ারের চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মাহবুদের নেতৃত্ব ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এর বাইরে চীনের চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরেই গেলেন। আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। যমুনা গ্রুপের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলমগীর আলম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বাদ জোহর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সীমিত পরিসরে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মরহুমকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেয়া নুরুল ইসলাম বাবুল ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প ও সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে এই গ্রুপে। নুরুল ইসলাম গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন যমুনা টেলিভিশনেরও প্রতিষ্ঠাতা। নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে যমুনা গ্রুপ, দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন পরিবারে। এই কঠিন সময়ে অভিভাবকের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিক্স, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় অন্যতম এই গ্রুপ। এই সফল শিল্প উদ্যোক্তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ শিল্প খাতে। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমীর হোসেন আমু, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা শোক জানিয়েছেন। তারা মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, চীফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন। এছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শোক জানিয়েছেন। এদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমসহ অন্য সদস্যরাও শোক জানিয়েছেন। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এছাড়াও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার এমপি, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জেএসডির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ অন্যরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সুপ্রীমকোর্ট বার, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন (এ্যাকটো), নিউজ পেপার মালিকদের সংগঠন (নোয়াব), এফবিসিসিআই, রিয়েল এ্যাস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ বিভিন্ন সংগঠনও শোক জানিয়েছেন। এছাড়ও দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শোক জানিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম বাবুল একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। সর্বশেষ করোনার চিকিৎসায় কুড়িলে ৩০০ ফিটের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় সহজ ও সুলভ মূল্যে যমুনা তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গুণগত মানের দিক থেকে যমুনা গ্রুপ স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি করছে। তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্য সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তার তিন মেয়ে- রোজালিন ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং সনিয়া ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।
×