ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নারী পাচার চক্রের হোতা আজম খান দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৩ জুলাই ২০২০

নারী পাচার চক্রের হোতা আজম খান দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুবাই ড্যান্স ক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের গড ফাদার আজম খান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা জানান, গত আট বছরে আজম খান সহস্রাধিক বাংলাদেশী তরুণীকে দুবাই পাচার করে যৌনকর্মে বাধ্য করেছে। তার বিরুদ্ধে দেশে ১৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি হত্যা মামলা। রবিবার দুপুরে সিআইডির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, দুবাইতে নারী পাচারকারী চক্রের গডফাদার আজমের তারকাবহুল বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পেয়েছি। দুবাইতে চার তারকাযুক্ত তিনটি ও তিন তারকাবিশিষ্ট একটি হোটেলের মালিক এই আজম খান। আজম খানের মালিকানাধীন হোটেলগুলো হচ্ছে, ফরচুন পার্ল হোটেল এ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ার। তিনি জানান, সম্প্রতি দুবাই পুলিশ আজম খানের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসে জানায়। দেশটি তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। একটি এক্সিট পাস নিয়ে আজম খান বাংলাদেশে চলে আসে। তারপর থেকে আত্মগোপনে যায়। এরপরই সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগ এই নারী পাচারকারী চক্রের গডফাদার আজম খান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। তার দুই সহযোগী হচ্ছে, আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড এবং ময়না। গ্রেফতার হওয়া আজম দীর্ঘ আট বছর ধরে দুবাইতে কম বয়সী নারীদের পাচার করে আসছিল বলে স্বীকার করেছে। ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, দুবাইতে ড্যান্স ক্লাবে, হোটেলে উচ্চ বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দেশ থেকে কম বয়সী নারীদের দুবাই পাচার করত আজম। আজমের সহযোগী আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ডসহ আরও অনেকে তরুণীদের ড্যান্স প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাত। এজন্য তাদের অগ্রিম ১ মাসের বেতন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতেন তারা। পরে এসব তরুণীকে দুবাইয়ের এসব ক্লাব ও হোটেলগুলোতে বাধ্য করা হতো নানা অপকর্মে লিপ্ত হতে। তিনি জানান, গডফাদার আজম গত ৮ বছর ধরে সহস্রাধিক বাংলাদেশী তরুণীকে দুবাই পাচার করেছে। এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য দেশে তার অর্ধশতাধিক সহযোগী দালাল রয়েছে। নারী পাচারের জন্য নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সি আছে। এমনকি একটি বিশেষ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সে নারী পাচার করত। এ কাজে আজম খানকে সহযোগিতা করত একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি ও বিদেশী কিছু বিমান সংস্থা। এসব নারী দুবাই যাওয়ার পরে তাদের প্রথমে হোটেলে ছোটখাটো কাজ দেয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। আটকে রাখা হতো, খাবার দেয়া হতো না, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেয়া হতো। পরে তাদের দেহব্যবসায় বাধ্য করা হতো। এসব ঘটনার বেশ কিছু অডিও ক্লিপ সিআইডির হাতে এসেছে। পাচারের শিকার নারীরা জবানবন্দীও দিয়েছেন। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রধান জানান, দেশে ছয়টি হত্যা মামলাসহ এই আজম খানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি। তিনি ছাড়া ও এ কাজে দুবাইয়ে তার সঙ্গে আরও দুই ভাই যুক্ত ছিলেন। এই দলে ভারত ও পাকিস্তানের দলগুলোও যুক্ত আছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ফটিকছড়িতে এক সময় তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট রেখে আজম খানকে দেশে পাঠায়। দেশে ফিরে কী করে তিনি পালিয়ে গেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, একজন আসামিকে পাঠানো হচ্ছে, সে সম্পর্কে পুলিশ অবহিত ছিল না। এই সুযোগে আজম খান নতুন পাসপোর্ট করে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। এ ঘটনায় ২ জুলাই সিআইডি বাদী হয়ে লালবাগ থানায় মামলা করেছে। অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সি, বিদেশী এয়ারলাইন্স ও গ্রেফতারের তথ্য পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
×