ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসা প্রতারণা

রিজেন্টের আইটি প্রধান গ্রেফতার, আটক সাহেদের ভায়রা

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১০ জুলাই ২০২০

রিজেন্টের আইটি প্রধান গ্রেফতার, আটক সাহেদের ভায়রা

আজাদ সুলায়মান ও মিজানুর রহমান ॥ করোনার ভুয়া সনদ প্রদানসহ অসংখ্য অভিযোগে সিলগালা করে দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে আটকের জন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। বিশেষ করে বুধবার রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এ সময় তার ব্যক্তিগত সহকারী ও আইটি শাখার প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সূত্রে আটক করা হয়েছে সাহেদের ভায়রা ভাই নাট্যনির্মাতা মোহাম্মদ আলী বশিরকে। দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনার নায়ক সাহেদ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে নোটিস জারি করা হয়েছে। এ দিকে লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে রিজেন্টকে কোভিডের জন্য স্পেশালাইজ হিসেবে কাজ দেয়া হয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে থাকা ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ। এ সম্পর্কে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন- তারেক শিবলীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তিনি মোঃ সাহেদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া সাহেদের ভায়রা মোহাম্মদ আলী বশিরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত তারেক শিবলী সম্পর্কে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, তার কাজ ছিল মূলত আইটি বিভাগ সামাল দেয়া। করোনার নকল সনদ তৈরির বিষয়ে তারেক শিবলী অত্যন্ত নিপুণ কায়দায় নিজেই দায়িত্ব পালন করতেন। কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট নেয়া, রিপোর্ট নেগেটিভ পজেটিভ করার মতো কঠিন দায়িত্বটা সেই করত। সাহেদ তাকে দিয়েই বিশ্বস্ততার সঙ্গে সনদ তৈরি করাতেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে জানা যাবে এ পর্যন্ত কত সংখ্যক সনদ তৈরি করা হয়েছে। কত লোক প্রতারণার শিকার হয়েছে সে তথ্যও তার কাছে রয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে টিভি নাটকের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টেলিহোমের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বশিরকে সার্বিকভাবে আর্থিক সহায়তা দিতেন সাহেদ। মূলত তার অবৈধ টাকা দিয়ে আলী বশির নাটক প্রযোজনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাহেদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বুধবার রাতে বনানীর অফিস থেকে তাকে আটক করে আনা হয়। এই অভিযোগে এবং সাহেদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে কিনা, এ বিষয়ে র‌্যাবের নবনিযুক্ত পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, এখনও এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। র‌্যাব জানিয়েছে, প্রতারক সাহেদ যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সীমান্তে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, মোঃ সাহেদ দেশত্যাগ করতে পারেন এই আশঙ্কা থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে তাকে দেশত্যাগ করতে না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে দেশ-বিদেশে তোলপাড় করা এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও এখন টনক নড়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে কিভাবে লাইসেন্সের মেয়াদ নবায়ন না করেই রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিডের চিকিৎসা করার জন্য চুক্তি করা হলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত চিঠিতে এক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়Ñ গত ৬ জুলাই হাসপাতালটিতে চালানো র‌্যাবের অভিযান ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হাসপাতালটির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। চিঠিতে হাসপাতালটির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমঝোতা চুক্তি বাতিল করতেও বলা হয়। এছাড়া সমঝোতা চুক্তির শর্ত ভেঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতেও বলা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালটির সব কার্যক্রম বাতিল ও সিলগালা করার জন্যও বলা হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, সাহেদের প্রতারণার শিকার অনেক ভুক্তভোগীই নতুন নতুন অভিযোগ প্রকাশ করছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, সাহেদ শুধু একটা প্রতারকই নয়- সে জুলুম নির্যতকারী দুর্ধর্ষ মাস্তানের চেয়েও ভয়ঙ্কর। উত্তরা ও মিরপুরের যে দুটো বাড়িতে তার হাসপাতাল সেগুলোর ভাড়া ঠিকমতো পরিশোধ করত না। মিরপুরের বাড়ির মালিক ভাড়া চাইতে গেলে তাকে সাহেদ অস্ত্র নিয়ে দৌড়িয়ে দিয়েছে। অবৈধ অর্থ আর ক্ষমতার জোরে সে মানুষের পাওনা দিত না। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ এখন তার বিরুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে। ঠিক আজকের (বৃহস্পতিবার বেলা দুটো) এই মুহূর্তেও আমার অফিসে একজন ভদ্র লোক সিলেট থেকে এসে অপেক্ষা করছেন। তার অভিযোগ সাহেদের বিরুদ্ধে। তিনি কিভাবে সাহেদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন সেগুলো শোনা হবে। তার মতো এমন আরও অসংখ্য ভুক্তভোগী যারা সাহেদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এখন র‌্যাব অফিসে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের সবার অভিযোগই আমলে নিতে হবে তদন্তের স্বার্থে। সাহেদকে আটক না করার বিষয়ে কোন চাপ অনুভব করছেন কিনা জানতে চাইলে সারোয়ার আলম বলেন কিসের চাপ। তার মতো ক্রিমিনালের জন্য কে আবার তদবির করবে। যেই এ ঘটনায় তদবির করবে তাকেও ধরা হবে। জিরো টরালেন্স নীতি নিয়েই র‌্যাব কাজ করছে। র‌্যাব জানিয়েছে, সাহেদের মতো প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বছর চারেক আগেও সতর্ক করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারপরও কোন অদৃশ্য শক্তির বলে সে বিভিন্ন স্থানে প্রটোকল পেত। এ বিষয়ে আরও জানা যায় মোহাম্মদ সাহেদের প্রতারণা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা থেকে উপসচিব নওয়াব আলী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আসে তৎকালীন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, সাহেদ নিজেকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ১৯৯৬-০১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ছিলেন বলেও পরিচয় দিয়ে আসছে। এই ব্যক্তি ‘ভয়ঙ্কর প্রতারক’। তার বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা রয়েছে, সে দুই বছর কারাবাসে ছিল, সেই বিষয়েও উল্লেখ করা হয়। এরপরও তার বিষয়ে তেমন কোন আইনী প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। উল্টো এই চিঠির পরও ২০১৭ সালে সাজেক ভ্রমণে গেলে সেখানে তিনি পুলিশ প্রোটেকশন পায়। রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানেও তাকে হর্তকর্তাদের সঙ্গে খোশগল্প ও ছবি তুলতে দেখা যেত। সেগুলো দিয়েই সে ক্ষমতার অপব্যবহার করত। বাড়িওয়ালার ভাড়া থেকে অন্যান্য নীরিহ লোকের পাওনা সে দিত না। টাকা চাইলে অস্ত্রের মুখে বিতাড়ন ও হুমকি দেয়া হতো। এমনকি উত্তরার যে বাড়িতে রিজেন্ট গ্রুপের অফিস সেখানেও- এক পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পাল্টা হুমকি দিয়েছে সে। গত সোমবার র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। যাতে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এসব অভিযোগে উত্তরা ও মিরপুরের দুটো শাখাই বন্ধ করে দেয়া হয়। সাহেদকে সাতক্ষীরায় কেউ চেনে না ॥ সাতক্ষীরা থেকে মিজানুর রহমান জানাচ্ছেন, সাতক্ষীরা সরকারী স্কুলের ছাত্র শাহেদ করিম এখন ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান। তিনি এখন মোঃ সাহেদে হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী রাজনীতিতে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবুও তিনি আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে নিজের নম্বরবিহীন গাড়িতে ব্যবহার করতেন ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, সাইরেনযুক্ত হর্ন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টিকার। প্রতারণার পাশাপাশি হাওয়া ভবনের সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। করোনা মহামারীর সময়ে তার প্রতিষ্ঠিত রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে সাহেদ এখন আলোচনার শীর্ষে। র‌্যাব এই হাসপাতালের দুটি শাখাই সিলগালা করার পর উঠে আসছে সাহেদের প্রতারণা নিয়ে নানা তথ্য। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিভিন্ন বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশনে চিঠি দেয়া হয়েছে। বহুল আলোচিত এই প্রতারকের সাতক্ষীরায় জন্ম হলেও সাতক্ষীরায় তার কোন প্রতারণার ঘটনা এখনও জানা যায়নি। এ জেলার কম মানুষই তাকে চেনেন। মা ছিলেন রাজনীতির পরিচিত মুখ। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন। মূলত মায়ের রাজনীতির পরিচয় ধরেই সাহেদের এই উত্থান বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অবশ্য সাহেদের দাদা ও বাবা-মা ছিলেন এলাকার পরিচিত মুখ। দাদা ভারত থেকে দেশ বিভাগের সময়ে এদেশে আসেন। দাদা ৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত যশোর জেলার তথ্য অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা যায়। সাহেদ করিম ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় গিয়ে এলাকায় আর ফিরে আসেননি। পরে ২০১৪-১৫ সালে সাহেদ সাতক্ষীরায় এসে অবশিষ্ট পৈত্রিক সব সম্পদ বিক্রি করে ঢাকায় চলে যান। ভারত থেকে আসা বলে এলাকায় নিকট আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই তার। সাহেদ করিম সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের বাসিন্দা। বাবা সিরাজুল করিমের একমাত্র ছেলে। সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় চলে যান। এরপর সাতক্ষীরায় তেমন বেশি যাতায়াত ছিল না। মাঝে মাঝে এসে দু’-একদিন থেকেই চলে যেতেন। তবে তার বাবা সিরাজুল করিম ও মা শাফিয়া করিম এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সাতক্ষীরাতেই কোটি টাকা সম্পদের মালিক ছিলেন তারা। করিম সুপার মার্কেট নামে তাদের একটা মার্কেট ছিল শহরেই। ২০০৮ সালের দিকে এই সুপার মার্কেট, বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে তারা ঢাকায় স্থায়ী হন। ভারত থেকে দেশ বিভাগের সময় সাতক্ষীরা এসে করিম বংশের প্রতিষ্ঠা করেন সাহেদের দাদা আব্দুল করিম। বর্তমানে সাতক্ষীরায় তাদের কোন আত্মীয় স্বজন নেই এবং কোন সম্পত্তি নেই। তার মা শাফিয়া করিম ছিলেন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক এবং আওয়ামী লীগের নেতা। মূলত মায়ের সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে ঢাকার রাজনীতি ও পরিচিত মহলে জায়গা তৈরি করেন সাহেদ। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মকা-ে সাহেদকে কেউ কখনও অংশ নিতে দেখেনি। রিজেন্ট হাসপাতালের এই প্রতারণার খবর প্রকাশের পরই সাতক্ষীরার মানুষ জানতে পারে সাহেদের জন্ম সাতক্ষীরায়। সাহেদের মা প্রয়াত শাফিয়া করিম আসমানী স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। শাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজনীতিতে তাকে সবাই ভাল মানুষ হিসেবেই চিনত। সাহেদ এসএসসি পাস করে ঢাকা লেখাপড়া করতে গেলেও কোন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সেটা কেউ বলতে পারেন না। তার আসল নাম মোঃ সাহেদ করিম। তবে ঢাকায় দাদা-বাবার নামের পদবি ‘করিম’ ফেলে দিয়ে মোঃ সাহেদ হিসেবে পরিচিতি পায়। ছোটবেলা থেকে সে কথা বলায় খুব পটু ছিল। খুব অল্প সময়ে মানুষকে আপন করে নেয়ার ক্ষমতা আছে তার এমন অভিমত তার বন্ধু মহলের। এসএসসির পরীক্ষার ১৫ বছর পরে ২০১৪ সালে সে সাতক্ষীরায় আসে জমি বিক্রি করতে। তখন এত আলোচিত ছিল না। আর এ মুহূর্তে তার স্কুল বন্ধুরাও তাকে আর পরিচিত বলে স্বীকার করতে রাজি হচ্ছেন না। রিজেন্ট পরিচালক সাহেদ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, সাহেদের মা প্রয়াত শাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১০ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সুনামের সঙ্গে কাজ করে গেছেন। সাহেদ এসএসসি পাসের আগে বা পরে ঢাকায় চলে যায়। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাহেদের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার মানুষের সঙ্গে তার বেশি যোগযোগ ছিল না। রিজেন্ট হাসপাতালের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের পর সাহেদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। বলে জানান। জন্ম সাতক্ষীরায় হলেও জাতীয় সনদ পত্রে তার ঠিকানা এখন ঢাকা। আর ব্যবসা বাণিজ্য, প্রতারণা সব কিছুই ঘটেছে ঢাকা কেন্দ্রিক। আর এ কারণেই রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদকে সাতক্ষীরার বেশিরভাগ মানুষই চেনেন না। রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ॥ করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা না করেই সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট (হিসাব) স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোন এ্যাকাউন্ট থাকলে তাও স্থগিত (অবরুদ্ধ) করার আদেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বিএফআইইউ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে। চিঠিতে সাহেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে সব হিসাব আগামী ৩০ দিন অবরুদ্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এরপর মঙ্গলবার রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় দণ্ডবিধি ৪০৬/৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/২৬৯ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোঃ সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। আটজনকে আটক করা হয়েছে। সাহেদসহ ৯ জন পলাতক।
×