ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ৬৮ হাজার পশু প্রস্তুত, বিক্রি নিয়ে চিন্তিত খামারিরা

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ৯ জুলাই ২০২০

যশোরে ৬৮ হাজার পশু প্রস্তুত, বিক্রি নিয়ে চিন্তিত খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ প্রতিবছরের মতো এবারও কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু মোটাতাজা করেছেন যশোরের ১০ হাজারের বেশি খামারি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় কুরবানি ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে খামারিদের। তারা বলছে, ঈদপূর্ব পাইকারদের পদধুলিতে মুখরিত থাকলেও এবার পা পড়েনি খামারগুলোয়। আবার পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা এসব নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, কুরবানি ধর্মীয় কাজ। যারা প্রতিনিয়ত কুরবানি দেন তারা এবারো দিবে। ফলে পশু ক্রয় নিয়ে খামারিদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, এবার ঈদ-উল আযহায় কুরবানির জন্য যশোরে পশুর চাহিদা রয়েছে ৬০ হাজার ৫শ’ টি। আর জেলার ১০ হাজার ২শ’ ৮২ খামারিরা কুরবানির জন্য ৬৭ হাজার ৯শ’ ৭৫ টি পশু প্রস্তুত করেছেন। সেই হিসাব মতে জেলায় সাড়ে ৭ হাজার কুরবানির পশু বেশি রয়েছে। কুরবানির পশুর কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। আর এসকল প্রাণী বিক্রির জন্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনেই জেলায় ২৪টি পশুর হাটে পশু বিক্রি করা হবে। জেলার বেশ কয়েকজন খামার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে লাভের আশায় তারা সারাবছর গরু-ছাগল লালন পালনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে এখন পর্যন্ত খামারে কোনো পাইকারের পদধূলি পড়েনি। অথচ অন্য বছরগুলোয় কুরবানির দুই মাস আগেই বরিশাল, নোয়াখালী, ভোলাসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে গবাদিপশুর পাইকাররা যশোরের খামারিদের কাছে এসে চুক্তিবদ্ধ হয়ে টাকা বায়না দিয়ে যেতেন। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই কুরবানির ঈদ। কিন্তু এবার সাড়া দেখছেন না তারা। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর এলাকার খামারি মহাব্বত হোসেন জানান, খামারে ১২০টি গরু আছে। কুরবানি ঈদে ৮০টি বিক্রির আশা করছি। কিন্তু বাজারের অবস্থা ভাল ঠেকছে না। প্রতি গরুতে লোকসান গুনতে হবে মনে হচ্ছে। করোনার কারণে হাটে ব্যাপারিরা আসছে না। এজন্য দাম অনেকটা কম। বাইরের ক্রেতারা আসলে দাম বেশি পাওয়া যেতো। তিনি আরো বলেন, খামারিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। সীমিত পরিসরে মানুষের কেনাকাটার প্রবণতায় কমতে পারে পশু কোরবানিও। এতে অনেক গরু খামারিদের ন্যায্যদাম ও বেশি সংখ্যক বিক্রিতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি কতটা স্বাভাবিক হবে, তার উপর নির্ভর করবে গরুবেচাকেনা। সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার খামারি জহিরুল ইসলাম জানান, দেশে এখনও করোনা পরিস্থিতি ভালো হয়নি। এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি গরুর ভালো দাম না পাই তাহলে খামারিদের দুঃখের সীমা থাকবে না। বাড়ির পরে দুই একটা ব্যাপারি আসছে, তারাও ভালো দাম বলছে না। হাটে খোঁজ রাখছি, ক্রেতা তেমন আসছে না। এমনিতে এ বছর গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি। লাভও তেমন হবে না। চরম বিপদে আছি। একই এলাকার আরেক খামারি রাজু বলেন, প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০টি গরু পালন করি। কিন্তু এবার খাবারের দাম ও করোনার কারণে ঈদে বিক্রির আশায় ৮টি গরু লালন পালন করেছি। ঈদের বাজার এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি। বাজার অনেক ডাউন। মণিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রামে দফাদার ডেইরি ফার্মের মালিক শাহীন আলম জানান, এবার তার খামারে কোরবানির জন্য অর্ধশতাধিক ষাঁড় প্রস্তুত করা হয়েছে। গরুর গঠন অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিবছরই রোজার ঈদের পরই বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা খামারে এসে গরু কিনতেন। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি। ফলে গরু নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি। মণিরামপুরের সেই আলোচিত ‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার সম্রাট নামক দুটি গরুর মালিক ও খামারি আসমত আলী গাইন বলেন, আমার গরু দুটি ৮০ লক্ষ টাকা বিক্রি করার আশাবাদী। আমার খামারে এই কুরবানিতে বিক্রির জন্য আরো ৮টি গরু প্রস্তুত করেছি। তিনি আরো বলেন, ব্যাংক ঋণ নিয়ে খামারে গরু লালনপালন করছেন। এতে তার অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পাইকার ক্রেতা আসেনি। যা আসছে ‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার সম্রাট’ নামক গরু দুটি দেখতে। ফলে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে হাটে ক্রেতা মিলবে কিনা এবং মিললেও সঠিক দাম পাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিউল আলম বলেন, এবার কুরবানির জন্য জেলায় সাড়ে ৬০ হাজার গবাদি পশুর চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খামারিদের তথ্য অনুযায়ী গবাদি পশু প্রস্তুত ৬৭ হাজারের বেশি। চাহিদার চেয়ে ৭ হাজার বেশি। জেলায় গবাদি পশুর কোনো ঘাটতি নেই। করোনার কারণে কুরবানির পশু বেচাকেনায় কতটা প্রভাব পড়বে, সেটি আগেই বলা যাচ্ছে না। সাধারণত ঈদুল আযহার ১০ থেকে ১২ দিন আগে পশু বেচাকেনার তোড়জোড় শুরু হয়। এবার করোনার কারণে খামারিদের মাঝে কিছুটা হলেও ভীতি হয়েছে। তবে এখনো গরু-ছাগল বিক্রির প্রচুর সময় আছে। খামারিরা যাতে হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গরু-ছাগল বিক্রি করতে পারে এবং হয়রানির শিকার না হয়, এ জন্য প্রশাসনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
×