ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

শখের বশে খালের চরে কলা চাষে সফল ফটিকছড়ির এখলাস

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১২:১১, ৩ জুলাই ২০২৫

শখের বশে খালের চরে কলা চাষে সফল ফটিকছড়ির এখলাস

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

অনেকটা শখের বশে খালের চরে দেশি জাতের বিষমুক্ত রঙ সাগর কলা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের সৌখিন কৃষক মোহাম্মদ এখলাস। বাবা ছিলেন একজন কৃষক। তাই ছোটবেলা থেকে কৃষি সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। তাই ইউটিউব দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধুরুং খালের চরে সখের বশে পরিত্যাক্ত ৮০ শতক জমিতে 'রঙ সাগর জাতের' কলা চাষ করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। 

প্রথম পরীক্ষামুলক বেশ কিছু রঙ সাগর জাতের কলা গাছ রোপন করে। এতে ব্যাপক সাড়া পান। পরে ৮০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ৮'শত কলা চারা রোপণ করেন তিনি। এতে প্রথমবারেই ভালো ফলন বাজিমাত করেন তিনি। কলার আশানুরূপ ফলন পেয়ে দারুণভাবে খুশি সে। গত রমজান মাসে এ বাগান থেকে প্রায় ৭ ট্রাক কলা বিক্রি করেন। যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো। বাগানে বর্তমানে যা কলা গাছগুলো আছে এসব সেকেন্ড জেনারেশন বা দ্বিতীয় কিস্তির। প্রতিটি কলা গাছেও এসেছে ফলন। বর্তমানে প্রতিটি গাছেই রঙ সাগর কলার দৃষ্টিকারা ছড়ি ধরেছে। কলা চাষের পাশাপাশি এ মৌসুমে জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। সাথি ফসল হিসেবে জমিতে বেগুনগাছ লাগিয়েছেন। বেগুনের ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে বেগুনও বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

এদিকে, এখলাসের কলা ও সাথী ফসল পেপে ও বেগুন চাষ এলাকার বেকার যুবকদের আগ্রহী করে তুলেছে। তার অনুপ্রেরণায় অনেকেই কলা চাষের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তার কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিচ্ছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে যায়, লক্ষ্মীছড়ি- ফটিকছড়ি সীমান্তবর্তী বাইন্নেচুলা ব্রীজ সংলগ্ন ধুরুং খালের পরিত্যক্ত চরে বিস্তৃত জমি জুড়ে কলার বাগান। সারি সারি কলা গাছে শোভা পাচ্ছে গাঢ় সবুজ রঙের কলার ছড়ি। বাগান ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় কলা চাষী মো. এখলাসের সাথে। তিনি বলেন, 'বাড়ির দিয়ে বয়ে যাওয়া ধুরুং খালের চরে কিছু একটা করার চিন্তা থেকে কলা নিয়ে থেকে শুরু হয় গবেষণা। ইউটিউবে কলা চাষের ভিডিও দেখে নেমে পড়েন কলাচাষে। চরের পরিত্যক্ত উচুঁ জমিতে শুরু করেন সাগর কলা চাষ। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে কৃষির হাতেকড়ি থাকায় বেগ পেতে হয়নি। ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাকেন। চালিয়ে যেতে থাকেন বাগানের পরিচর্যা। একসময় এখলাসের কলা বাগান স্থানীয় বাসিন্দাদের অবাক করে তোলে। ৮০ শতক বন্ধক জমিতে বাণ্যিজিকভাবে শুরু করেন কলা চাষ। এতে বেশ ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি দুর হয় নিজের বেকারত্ব। সাথে এলাকার বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয় তার বাগানে।'

কলাচাষি এখলাস জানান, ইতোমধ্যে কলা বিক্রির আয় দিয়ে জমির মালিকের বর্গার টাকা। কলা ও পেঁপে ১২ মাসি ফসল। একবার চাষ করলে ১২ মাসই ফলন পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করা যায়। কলা চাষে তিনি কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেন না। বেশির ভাগ সময় গাছে পাকা কলা বিক্রির চেষ্টা করেন। বর্তমানে তার বাগানে ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এখন তিনি নতুন চাষিদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারছেন। 

কৃষি উদ্যোক্তা এখলাস আরও বলেন, 'কলা চাষে ঝামেলা কম, লাভও বেশি। বাজারে কলার অনেক চাহিদা রয়েছে। কলা আমার বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়না। পাইকাররা বাগানে এসে নিয়ে যায়। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কলার ফলন ভাল হয়েছে। দুই থেকে তিন ফুট লম্বা কলা গাছের চারা লাগানোর অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। সাগর কলার চারা একবার রোপণ করলে পুনরায় তা আর রোপণ করতে হয় না। গাছের কলা এক বার পূর্ণাঙ্গ বয়স হলে কেটে ফেলার কিছুদিন পর ওই গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা জন্মায়। নতুন এসব গাছে আবার ফলন দেন।'

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সালেক বলেন, ‘ কলা একটি বছর ব্যাপি একটি ফসল। যেটি একবার চাষ করলে বার বার ফলন দেয়। উপজেলার সুয়াবিল, নারায়ণহাট ও কাঞ্চন নগরসহ চর অধ্যুষিত এলাকায় কলার বেশ চাষ হয়।  কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা এখলাসের হাত ধরে অত্রাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে সাগর কলার চাষ শুরু হয়েছে। তার কলাবাগান বেকার যুবকদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। এখলাসের মতো যুবকরা স্থানীয়ভাবে কলা চাষে এগিয়ে এলে এ উপজেলার কলার চাহিদা পূরণ হবে। দেশব্যাপী এ কলার ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে এ এলাকার কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।'

নোভা

×