ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে

প্রকাশিত: ২২:১২, ৭ জুলাই ২০২০

হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনা সংক্রমণে রাশিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উঠে গেল ভারত। এবার করোনা আক্রান্ত হলেন পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাফর মির্জা। মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষস্থানে থাকা দেশের মধ্যে পঞ্চম হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। আর করোনায় বিপর্যস্ত দেশ ব্রাজিল চলছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়া। গত ৫০ দিন ধরে সেখানে কোন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। এছাড়া প্রতি দশ লাখে আক্রান্তের হারে শীর্ষে রয়েছে কাতার। ইরানে ফের বাড়ছে সংক্রমণ। করোনায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রে ফুরিয়ে আসছে হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা। খবর বিবিসি, সিএনএন, সিএনবিসি, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, আরব নিউজ, গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ বেড়ে এক কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬১২ জন হয়েছে। মারা গেছেন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৯ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৬ জন। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন ৫৮ হাজার ৭৩১ জন। এদিকে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যায় রাশিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উঠে গেল ভারত। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ হাজার ২৪৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানোর পর দেশটিতে মোট সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়ায় সাত লাখ ৭২৭ জন। শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর নতুন এ সংখ্যা নিয়ে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে সংক্রমিত দেশগুলোর মধ্যে তিনে উঠে যায়। শনাক্ত ছয় লাখ ৮৭ হাজার ৮৬২ জন আক্রান্ত নিয়ে চারে নেমে যায় রাশিয়া। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, ব্রিটেনের মতো দেশগুলোকে ছাড়িয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই চতুর্থ স্থানে ছিল ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে রাশিয়াকেও ছাড়িয়ে গেল। ৩০ জানুয়ারি কেরলে প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর ভারতে ১১০ দিনে এক লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মার্চের শেষে ভারতজুড়ে দেয়া কঠোর লকডাউনের কারণে দেশটিতে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত জনসংখ্যা অনুপাতে খুব সামান্যই রোগী পাওয়া গিয়েছিল। লকডাউন শিথিলের পর থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। শনাক্ত রোগী এক থেকে দুই লাখে পৌঁছায় মাত্র ১৫ দিনে। দুই থেকে তিন লাখে ১০ দিনে, তিন থেকে চার লাখে ৮ দিনে, চার থেকে পাঁচ লাখে পৌঁছাতে লাগে ছয় দিন। শেষ এক লাখ যোগ হতে লেগেছে আরও কম সময়, মাত্র ৫ দিন। আক্রান্তের বিশ্বব্যাপী তালিকায় এখন ভারতের উপরে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ডের তথ্যানুযায়ী, শনাক্ত ২৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩০ জন আক্রান্ত নিয়ে বিশ্বের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ তিন হাজার ৫৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি ভারতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। দেশটিতে কোভিড-১৯এ মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার ৭১৪ জন ছিল। সব মিলিয়ে ভারতে ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬২ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার লাখ ২৫ হাজার ৫৬৮ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুই লাখ ৫৫ হাজার ৪৪২ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন আট হাজার ৯৪৪ জন। পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনা আক্রান্ত ॥ এবার পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাফর মির্জা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি করোনা আক্রান্ত হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জাফর মির্জা নিজের করোনা আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করে লিখেছেন, আমি বর্তমানে নিজের বাসায় আইসোলেশনে আছি। সব ধরনের সতর্কতা নেয়া হয়েছে। আমার হালকা উপসর্গ রয়েছে। সবাই দোয়া করবেন। পোস্টে মন্ত্রণালয় ও সহকর্মীদের নিয়মিত কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। করোনা শনাক্ত হওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরেশিও বর্তমানে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জানা যায়, পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এরই মাঝে বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে প্রতিদিনই বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, পাকিস্তানে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৮১৮ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৭৬২ জন। সেরে উঠেছেন এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৯ জন। গুরুতর অসুস্থ দুই হাজার ৪০৬ জন। মৃত্যুতে সেরা পাঁচে মেক্সিকো ॥ মেক্সিকোর স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ কমার বদলে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই মাঝে দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ৬৩৯ জন হয়েছে। মারা যাওয়া পরিসংখ্যানে বিশ্বের মধ্যে সেরা পাঁচে চলে গেলো মেক্সিকো। ২৪ ঘণ্টায় সরকারী হিসেবে নতুন করে আরও ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ৬৮৩ জন। মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হলো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়া চলছে ব্রাজিল ॥ করোনা সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। ইতোমধ্যেই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১৬ লাখ চার হাজার ৫৮৫ জন। মারা গেছেন ৬৪ হাজার নয়শ’ মানুষ। অথচ মহামারীতে বিপর্যস্ত দেশটিতে ৫০ দিন ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। মাত্র একমাসের ব্যবধানে দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের পর থেকেই সেখানে খালি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, গত এপ্রিলে ব্রাজিলে করোনার প্রকোপ যখন মাত্র শুরু হয়েছিল, সে সময় প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেনরিক ম্যানডেটা। এরপর নেলসন টেককে ওই পদে নিয়োগ দেন বোলসোনারো। এক মাস যেতে না যেতেই তার সঙ্গেও মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রেসিডেন্টের। ফলে কোন কারণ না জানিয়েই হুট করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আর্মি জেনারেল এদুয়ার্দো পাজুয়েলো, যার কোন ধরনের মেডিক্যাল অভিজ্ঞতা নেই। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী টেক ‘অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু এবং ক্লোরোকুইন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে খুবই ভীতু’ ছিলেন দাবি করে তার কাজের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো। আগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যানডেটা সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউনের পক্ষে থাকা এবং করোনার চিকিৎসায় এ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ব্যবহারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় তার ওপরও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বোলসোনারো। ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট অনেকবারই বলেছেন, মানুষ তাকে নির্বাচিত করেছে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এবং লকডাউন থাকবে কি না এ নিয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
×