ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একনেকে তেল খালাসে পাইপলাইন নির্মাণসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৭ জুলাই ২০২০

রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত সপ্তাহে ৩৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৬০০ কোটি) মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসেবে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে বর্তমানে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটান সম্ভব। এ অবস্থায় এ রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে প্রকল্পগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘একটা যুগান্তকারী প্রস্তাব এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। আমরা এটাকে সমর্থন করি। এটা আমরা ভাবছি। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণের অর্থ, জনগণের সঞ্চয় তাদের কল্যাণে ব্যয় হবে। এজন্য যে নিয়ম- কানুন ও নীতিমালা প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) এবং অর্থ মন্ত্রণালয় দেখবে। আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্যই সহায়তা করব।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের পক্ষে অর্থ সংরক্ষণ করে। ওখান থেকে ঋণ নিতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংক চিন্তা করবে, কিভাবে এটা করা যায়। সাধারণত তিন মাসের আমদানি ব্যয় হাতে রাখা নিরাপদ। সেটা যেকোন অর্থনীতিতে। তিন মাসের আমদানি ব্যয় হাতে থাকলে স্বস্তিদায়ক হবে। এখন যে রিজার্ভ আমাদের আছে, সেটা তিন মাস নয়, প্রায় বছরের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ। সুতরাং আমদানির জন্য যুক্তিসঙ্গত সংরক্ষণ রেখে বাকি টাকাতে আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটাতে পারি। নিজেদের অর্থ নিজেরা ব্যবহার করব।’ তেল খালাসে পাইপলাইন নির্মাণসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন ॥ বদলে যাচ্ছে তেল খালাসের প্রচলিত পদ্ধতি। লাইটারেজ পদ্ধতির পরিবর্তে এবার চালু হবে পাইপলাইন পদ্ধতি। এজন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এছাড়া আরও আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেক বৈঠকে। সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অনেক বেশি টাকা ব্যয় হলেও একনেক বৈঠকে সংশোধনীর মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা এবং নতুন প্রকল্পের টাকা মিলে মোট যে পরিমাণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার হিসাব দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে অনুমোদিত অর্থ হচ্ছে ২ হাজার ৭৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৪৪০ কোটি ৭৯ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।’ একনেকে অনুমোদন পাওয়া ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছরে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এ সময়ে প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে এক হাজার চার কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আড়াই বছর বাড়ান হলো। অন্যদিকে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এক হাজার ১৪২ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নে অর্থায়নে সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রচলিত লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা সময় সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমদানি করা ক্রুড অয়েল এবং ফিনিসড অয়েল পাইপ লাইনের মাধ্যমে সহজে, নিরাপদে, স্বল্প খরচে এবং স্বল্প সময়ে খালাস নিশ্চিত করা যাবে। এ লক্ষেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’ একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট, পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলাধীন ৩টি প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং আত্রাই নদীর ড্রেজিংসহ তীর সংরক্ষণ; ব্যয় হবে ১৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং দিনাজপুর শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ড্রেজিং/খনন; ব্যয় ৩২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দফতরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ; ব্যয় ৮৮৫ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ১০ বছর সময় লাগার বিষয়টি ঠিক নয়। এটি বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হবে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি আরব ও ওপেক ফান্ডের ঋণ প্রক্রিয়াকরণ এবং পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে। এছাড়া আরও অনুমোদন পেয়েছে রূপগঞ্জ জলসিঁড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জামালপুর ও শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ৫০৫ কোটি টাকা। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, ব্যয় ১০৭ কোটি টাকা এবং এস্টাবলিস্টমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস এ্যান্ড সেফটি সিস্টেম এ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৮৭ কোটি টাকা।
×