ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্ধশতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত

ফেনীতে জনবল সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

প্রকাশিত: ২২:১৫, ৫ জুলাই ২০২০

ফেনীতে জনবল সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ৪ জুলাই ॥ করোনায় ভেঙ্গে পড়েছে ফেনীর স্বাস্থ্যসেবা। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে জেলার সিভিল সার্জন, সরকারী-বেসরকারী চিকিৎসকসহ অর্ধশতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। তাছাড়া বেশকিছু দিন নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে সীমিত আকারে। আগের সংগৃহিত ১২শ’ নমুনার ফল অপক্ষেমাণ রয়েছে। ৮/১০ দিনেও সেগুলোর ফল মিলছে না। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে জেলার ১৬ লাখ মানুষ। সরকারী হাসপাতালগুলোতে যেমন জনবলসহ অক্সিজেন সঙ্কট রয়েছে তেমনি জনবল থাকার পরও সংস্থা পরিচালিত হাসপাতালে শুধু জ্বর হওয়া মুমুর্ষু রোগী ভর্তি না করিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জেলার ৬ উপজেলা ও জেনারেল হাসপাতালের করোনা বুথে প্রতিদিন দুই শতাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর সেগুলো নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হলেও সেখানে আরও ৪টি জেলার নমুনার জটে রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে ৮ থেকে ১০দিন। সরজমিনে দেখা যায়, করোনা সন্দেহের রোগীরা বিভিন্নস্থানে ছুটে গিয়েও নমুনা জমা দিতে পারছে না। এতে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন অনেকে। এতে করে উপসর্গবাহীদের থেকে অন্যের শরীরে করোনা ছাড়ানোর শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত ১২ জুন সিভিল সার্জন সাজ্জাদ হোসেন করোনা আক্রান্তের পর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। আর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৩০ বেডের আইসোলেশনে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে শতাধিক করোনা রোগীর। জনবল সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ঘটা করে হাইফ্লো অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হলেও ব্যাক-আপ সাপোর্ট না থাকায় তা নিয়মিত চালু রাখা যাচ্ছে না। হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, আইসিইউ যন্ত্রপাতি রয়েছে কিন্তু জনবল না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না। হাইফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য ইতোমধ্যে ২ টি ক্যানোলা পাওয়া গেছে। জরুরীভাবে প্রয়োজন লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক। এর জন্য মন্ত্রণালয়ে লেখা হয়েছে। ডাঃ মিয়াজীর ভাষায়, হাইফ্লো অক্সিজেন দেয়ার মতো রোগী আসেনি, তাই তা ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রোগী মারা যাচ্ছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে করোনা শনাক্ত ও উপসর্গের রোগী একসঙ্গে রাখা হচ্ছে। রোগীর স্বজন দিদারুল জানান- হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স আক্রান্ত হওয়ায় অন্য যারা হাসপাতালে কাজ করেছেন তারা ভয়ে রোগীর কাছে যাচ্ছেন না, রুটিন হিসেবে ইনজেকশন ও ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে ফেনীতে মারা গেছে ৩০ জন। আক্রান্ত প্রায় এক হাজার হাসপাতালে ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারী ডাক্তার ও নার্স ১৮ জনসহ ৪৮ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। তেমনি ফেনী বেসরকারী ডায়াবেটিক হাসপাতালের ৩ ডাক্তারসহ ৮ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বিশেষ করে সরকারী-বেসরকারী অনেক ডাক্তার জ্বর-কাশির অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে জনবল সঙ্কট তীব্রতর হয়েছে। সীমিত জনবল দিয়ে সরকারী হাসপাতাল ও বেসরকারী ডায়াবেটিক হাসপাতালে চেষ্টা চলছে চিকিৎসাসেবা দেয়ার। এদিকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের ৬ তলায় ৫টি আইসোলেশন বেড রাখা হলেও এসব বেডে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এ হাসপাতালে দুই বেডের একটি আইসিইউ ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত জনবল না থাকায় চালু করা যায়নি। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, জ্বরের রোগী এলে এ বেডে ভর্তি করার কথা। রোগীর স্বজন মিজান অভিযোগ করে জানান, ডায়াবেটিক হাসপাতালে ডাক্তারগণ রোগীর জ্বর আছে এমন কথা শুনলে রোগীকে না দেখে, চিকিৎসা না দিয়ে রোগীর স্বজনদের দিয়ে সরকারী হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আইসিইউ প্রসঙ্গে ডাঃ মোয়াজ্জেম জানান, ডাক্তর-নার্সসহ ৭ জনকে আইসিইউ প্রশিক্ষণে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আলোচনা করে কখন চালু হবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ফেনী ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুশেন চন্দ্র শীল জানান, ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের অন্য রোগীর কথা মাথায় রেখে জ্বরের বা করোনা উপসর্গের রোগী ভর্তিতে নিষেধ করা হয়েছিল। বর্তমানে যেহেতু করোনা কতদিন থাকবে তা নিশ্চিত নয়; তাই সীমিতভাবে এ ধরনের রোগী ভর্তির জন্য হাসপাতালের পাশের টিনশেডে ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হচ্ছে। সেখানে হাইফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি চালু করা সম্ভব হবে। ওয়ার্ডটি স্থাপনে সহযোগিতা করার জন্য ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠান ২৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শুধু স্থাস্থ্য বিভাগ নয়, করোনায় অক্রান্ত রয়েছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ, শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাই রোগীর জীবন বাঁচাতে অক্সিজেনসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ফেনীবাসীর ।
×