ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনার মধ্যেই জঙ্গী হামলার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ২ জুলাই ২০২০

করোনার মধ্যেই জঙ্গী হামলার আশঙ্কা

শংকর কুমার দে ॥ দেশে করোনাভাইরাসের মধ্যেই জঙ্গী হামলা হতে পারে-এমন আশঙ্কায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নজরদারি বৃদ্ধি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও বসে নেই জঙ্গীরা। পাকিস্তানে জঙ্গী হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরপর ভারতে জঙ্গী হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে এবং জঙ্গী হামলার হুমকির পর সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে জঙ্গী সংগঠনগুলো তৎপর-এমন খবরের ভিত্তিতে জঙ্গী বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যেই গত সোমবার পাকিস্তানের করাচীতে স্টক এক্সচেঞ্জে গ্রেনেড হামলা করেছে জঙ্গী গোষ্ঠী। এতে জঙ্গীসহ অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। এরপরই পাকিস্তান থেকে ফোনে হুমকি দেয়া হয়, ২৬/১১ হামলার মতো ছক, উড়িয়ে দেয়া হবে ভারতের ২টি তাজ হোটেল। হোটেল দুটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাই এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে ভারতের দিল্লীসহ বিভিন্ন রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে উস্কানি দিয়ে জঙ্গী হামলায় উৎসাহিত করানো হতে পারে। চলমান করোনা মহামারীতেও থেমে নেই জঙ্গীরা। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হিযবুত তাহরীর, আনসার আল ইসলাম ও আল্লাহর দলের সদস্যরা করোনা পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবেই নিচ্ছে। তৎপরতা চালাচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অত্যাধুনিক এ্যাপসের মাধ্যমে। বিগত বছরগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একের পর এক অভিযানে দুর্বল হয়ে পড়া বিভিন্ন সংগঠন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এক প্ল্যাটফরমে আসারও চেষ্টা চালাচ্ছে। গত এক মাসে জঙ্গী সংগঠনের ২১ জন সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। জঙ্গী সংগঠনগুলো আগের তুলনায় এখন অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া বহুদিন ধরেই জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, আল্লাহর দল ও আনসার আল ইসলাম এক প্ল্যাটফরমে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে নানা মতবিরোধের কারণে এখনও তারা সেটি করতে পারেনি। গত ২০ জুন র‌্যাব-১-এর একটি দল রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আল্লাহর দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য সুবিধাজনক সময়ে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা আছে আল্লাহর দলের। জঙ্গী সংগঠনটির নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তারা। এর আগে গত ৯ জুন রাজধানীর মহাখালী থেকে জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। তাদের কাছে উদ্ধার করা হয় জঙ্গীবাদের নানা ধরনের আলামত, উগ্রবাদে উৎসাহিত করার পুস্তক এবং জঙ্গী তৎপরতার পরিকল্পনা-সংবলিত দুটি কম্পিউটার। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চলমান করোনা মহামারীর মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে সংগঠিত হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে জঙ্গীরা। পুলিশের বিশেষায়িত এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনায় মারা গেলে শহীদ হবে এমন ধারণার ওপর থেকেও জঙ্গীদের তৎপরতার বৃদ্ধি করেছে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতারা। আনসার আল ইসলামের একটি গ্রুপের ৮ সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ৮ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪ জন তাদের তৎপরতা থাকাসহ নানা বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দী মোতাবেক তারা বলেছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তাান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের মতো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি এলাকা দখলে নিতে চায় জঙ্গী গোষ্ঠী। বাংলাদেশের কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বা কোন গহীন জঙ্গলের গ্রামে মুসলিম ভিলেজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুসলিম ভিলেজ নামের গ্রামটি ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সেখান থেকেই তারা দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য সশস্ত্র অপারেশন চালাবে এমন তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী বিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা জবানবন্দীতে বলেছে, জঙ্গীরা এখন ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, টেলিগ্রাম ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে তৎপর। জঙ্গী সংগঠনটির অনেক সদস্য করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। করোনা মহামারীর মধ্যেই দেশের ভেতরে নাশকতা চালিয়ে জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধি ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে জঙ্গী গোষ্ঠী। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও জঙ্গীদের সংগঠিত হয়ে তৎপরতা চালানোর তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×