ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বহু ফল পরিবর্তন

এসএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও অসংখ্য ভুল

প্রকাশিত: ০১:০৩, ১ জুলাই ২০২০

এসএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও অসংখ্য ভুল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসির পর এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও সকল বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পুনর্নিরীক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর ফল। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে বহু শিক্ষার্থী। ফেল করার পর খাতা চ্যালেঞ্জ করেও সকল বোর্ডেই পাস করেছে অনেকে। বাকিদেরও বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। যথারীতি এ পরীক্ষাতেও সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। সর্বশেষ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনের পর মঙ্গলবার পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল প্রকাশ করেছে। যেখানে ফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন। গত ৩১ মে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে এসএসসি ও সমমানে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। পাস করেছে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ৯টি সাধারণ বোর্ডে এসএসসিতে গড় পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শুধু এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছল এক লাখ ২৩ হাজার ৪৯৭ জন। পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত ফল না পেয়ে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৭১ পরীক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। তারা মোট চার লাখ ৪১ হাজার ৯১৯টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। এদের মধ্যে শুধু এসএসসি পরীক্ষার তিন লাখ ৯৫ হাজার ৮৯৮টি, দাখিলের ২৮ হাজার ৪৮৪টি এবং এসএসসি ভোকেশনালের ১৭ হাজার ৫৩৭টি খাতা পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে। পুনর্নিরীক্ষণে ঢাকা বোর্ডে দুই হাজার ২৪৩ জনের ফলে পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ১০৫ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন আরও ২৯৯ জন। ঢাকা বোর্ডের ৫৭ হাজার ৭৯০ জন পরীক্ষার্থী এক লাখ ৪৬ হাজার ২৬০টি খাতা পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করেছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে বরিশাল বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ২৫ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ জন পরীক্ষার্থী। ১৩৯ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। রাজশাহী বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৩৪ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪০ জন পরীক্ষার্থী। পুনর্নিরীক্ষণের ফেল করা তিনজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২৫২ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। পুনর্নিরীক্ষণে চট্টগ্রাম বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৪১ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩ জন পরীক্ষার্থী। ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন শিক্ষার্থী। ফল পুনর্নিরীক্ষণে ৬০৯ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ময়মনসিংহ বোর্ডে খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফলে দেয়া যায় এই বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৭ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩ জন পরীক্ষার্থী। তাদের একজন জিপিএ-৪ দশমিক ৩৯ ও অপরজন জিপিএ-৪ দশমিক ৬১ পেয়েছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে যশোর বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৬ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ জন পরীক্ষার্থী। দুজন অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ১২৩ জন ফল পরিবর্তন হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ২৩ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ জন পরীক্ষার্থী। ১৬৫ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস করেছেন ১০৫ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ জন পরীক্ষার্থী। ২৪৩ জন দাখিল পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ৮৭ জন পরীক্ষার্থীর গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ পরিবর্তন হয়েছে। এভাবেই প্রতিটি বোর্ডের অসংখ্য শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কেন ফলে বিশাল এই সংখ্যা পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকলেই বলছেন, সব সময়েই দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তারাহুরাই এই অবস্থার কারণ। মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পরছে। এক, কিছু খাতায় নম্বরের যোগ ফল ঠিক ছিল না। দুই, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশ বিছু ভুল পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনর্নিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কী না, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে। এইচএসসির সনদ বিতরণ শুরু আজ ॥ আজ ১ জুলাই থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মূল সনদ বিতরণ শুরু করবে ঢাকা বোর্ড। ২৭ জুলাই পর্যন্ত বোর্ড থেকে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মূল সনদ বিতরণ করা হবে। কলেজের অধ্যক্ষ নিজে বা প্রতিনিধি মারফত বোর্ড থেকে সনদ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের বিতরণ করবেন। আজ ঢাকা মহানগরের কলেজগুলোর, ৬ জুলাই গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার কলেজগুলোর, ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার কলেজগুলোর, ১৩ জুলাই মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার কলেজগুলোর, ১৫ জুলাই কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কলেজগুলোর, ২০ জুলাই জামালপুর ও শেরপুর জেলার কলেজগুলোর, ২২ জুলাই ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার কলেজগুলোর, ২৭ জুলাই টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ী জেলার কলেজগুলোর এবং ২৯ জুলাই মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার কলেজগুলোর এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মূল সনদ বিতরণ করা হবে। শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে কলেজগুলোর অধ্যক্ষ বা তার প্রতিনিধিকে শিক্ষার্থীদের মূল সনদ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বোর্ডের ৪ নম্বর ভবনের ৫ তলা থেকে এইচএসসি সনদ বিতরণ করা হবে। নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত জেলার অধ্যক্ষরা সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সনদ তুলতে পারবেন।
×